Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ

হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

শেখ রেহানা, জয় ও ববিসহ অন্যদের প্লট বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চূড়ান্ত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

হাসিনা-পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা

পূর্বাচলে রাজউকের প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচলে হাসিনা পরিবারের জন্য ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় এ মামলা করা হয়। এটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে গঠিত কমিশনের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা। দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে রোববার বিকালে দুদক কার্যালয়ে মামলাটি করেন। দুদক সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা পরিবারের জন্য ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ প্রদান ও গ্রহণে জড়িত শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে আরও ৫টি মামলা হবে। এ সপ্তাহেই মামলাগুলো হতে পারে বলে জানা যায়। এরই মধ্যে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, পুতুল ও টিউলিপসহ শেখ হাসিনা পরিবারের অপরাপর সদস্যদের ব্যাংক হিসাব তলব করেছে দুদক। ক্ষমতায় থাকাকালে ভুয়া ৮ প্রকল্পের মাধ্যমে ২১ হাজার কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগও অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। এসব প্রকল্পের তথ্য-উপাত্ত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গোলাম রহমান কমিশনের সময়ে বাতিল হওয়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার দুর্নীতির মামলার পুনঃতদন্ত শুরু হয়েছে। পাশাপাশি শেখ হাসিনা পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে পৃথকভাবে অনুসন্ধান শুরু করেছে সংস্থাটি।

এদিকে রোববার শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ যে ১৬ জনের বিরুদ্ধে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলা হয়েছে সে মামলায় বাকি আসামিরা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক ও গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিভাগের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা। এ তালিকায় রয়েছেন-সাবেক পূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, সাবেক সিনিয়র সচিব পূরবী গোলদার, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন, মেজর (ইঞ্জি.) শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, মো. নূরুল ইসলাম, সাবেক উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, পরিচালক শাহিনুল ইসলাম ও জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।

মামলায় বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ প্রদান ও গ্রহণ করেন। যা দুর্নীতি হিসাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্লট বরাদ্দ প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে মামলা করা হবে।

দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর রোডে ১০ কাঠা করে মোট ৬০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দ নেন। এ ক্ষেত্রে অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করা হয়েছে। পুতুল ও তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি, ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা গোপন করে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন তারা। এতে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দসংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হন এবং অন্যকে লাভবান হওয়ার সুযোগ করে দেন। পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭নং সেক্টরের ২০৩নং সড়কের ১৭ নম্বর প্লটটি সায়মা ওয়াজেদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধির ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, সায়মা ওয়াজেদ প্লটের বাস্তব দখলসহ রেজিস্ট্রিমূলে প্লট গ্রহণ করে প্রতারণামূলক অবৈধ পারিতোষিক গ্রহণ ও প্রদানের মাধ্যমে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।

এই প্লট বরাদ্দের অনিয়ম নিয়ে যুগান্তরে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। তখন শেখ পরিবারের ৬ জনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের কথা জানায় দুদক। প্লট সুবিধাভোগী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, জয়, পুতুলসহ সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

টানা সাড়ে ১৫ বছর শাসনের নামে ক্ষমতার একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তারের ফলে দেশের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে (জুলাই-আগস্ট) ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। তিনি এখনো সেখানেই আছেন।

শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ওঠা ৩০০ মিলিয়ন ডলার (৩০ হাজার কোটি টাকা) বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম