এ দেশে অন্য দেশের দাদাগিরি চলবে না: হাসনাত আবদুল্লাহ
ঘোষণাপত্রে ফ্যাসিস্টদের বিচারের স্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে : সারজিস * সংবিধান কারও বাপের না : ফেসবুক পেজে মন্তব্য
কুমিল্লা ব্যুরো ও নরসিংদী প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের আর্তনাদ আমরা এখনো শুনতে পাই। আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই দিয়ে তাদের সুবিধাপ্রাপ্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। চব্বিশ পরবর্তী বাংলাদেশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার দোহাই চলবে না। এ দেশে অন্য কোনো দেশের দাদাগিরি চলবে না। বুধবার কুমিল্লায় তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া একই দিন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দিতে হবে। এতে আওয়ামী খুনি ও ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। বিকালে কুমিল্লা পুলিশ লাইন থেকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি জনসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ শুরু করে। এরপর কুমিল্লা টাউন হল মাঠে লিফলেট বিতরণ এবং জনসংযোগ শুরু হয়। জনসংযোগ শেষে সাংবাদিকদের হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রক্লামেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন ঘোষণা করতে হবে। তিনি বলেন, দেশটা ফ্যাসিবাদের আষ্টেপৃষ্ঠে শিকলে বাঁধা ছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ভয়ডরহীন তরুণ প্রজন্ম দেশকে ফ্যাসিবাদের শিকলমুক্ত করেছে। এ প্রজন্মটাকে অলস ভাবতাম, মোবাইল ফোন নিয়ে পড়ে থাকত, সেই প্রজন্মই দিন শেষে আমাদের কথা বলার অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। আমরা অতীতের রাজনীতির পুনরাবৃত্তি চাই না। বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন করতে হবে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম, কুমিল্লা জেলার আহ্বায়ক সাকিব হোসাইন, সদস্য সচিব রুবেল হোসেন, মহানগর সদস্য সচিব রাশেদুল হাসান প্রমুখ। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্লোগানে স্লোগানে গোটা নগরী প্রকম্পিত হয়।
এদিকে, দুপুরে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা ইটাখোলা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত পথসভায় জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশের দাবিসহ সাত দফা দাবি এবং জনমত গঠনে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এ পথসভায় সারজিস আলম বলেন, ১৯৭১ যেমন আমাদের শিকড় হিসাবে সংবিধানে স্বীকৃতি পেয়েছে। তেমনি ২০২৪ আমাদের অস্তিত্বের লড়াই হিসাবে সংবিধানে ঠাঁই পাবে। মানুষ রক্ত ও জীবন দিয়ে খুনি হাসিনাকে বিতাড়িত করেছে।
সারজিস বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশ করতে হবে। এতে আওয়ামী খুনি ও ফ্যাসিস্টদের বিচার নিশ্চিত করার স্পষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান আন্দোলন, ৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের ধারাবাহিকতা পরিষ্কার করতে হবে। প্রতিটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল ভিত্তি সংবিধান বাতিল করে নির্বাচিত গণপরিষদ গঠনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। যেসব ধারা জনগণের কথা বলবে না সেসব ধারা সংবিধানে থাকবে না। তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের একমাত্র লক্ষ্য আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারকে উৎখাত করা ছিল না; বরং ৫৩ বছরের বৈষম্য, শোষণ ও ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিলোপ করার লক্ষ্যে সংঘটিত হয়েছে। সুতরাং বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো বিলোপ করতে সব ধরনের সংস্কারের ওয়াদা দিতে হবে।
সারজিস আলম বলেন, বিভিন্ন ভাগে আমাদের ভাগ করা যাবে না। ধর্মের দোহাই দিয়ে ভাগ করা যাবে না। পেশা দিয়ে ভাগ করা যাবে না। সবার সমান নাগরিক সুবিধা থাকতে হবে। একজন ভিআইপি সুবিধা পাবেন অন্যরা পাবেন না। তা আর হবে না। পথসভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার উপস্থিত ছিলেন। এতে নরসিংদী ও শিবপুরের সমন্বয়ক শিক্ষার্থী-জনতা অংশ নেন। সদরসহ বিভিন্ন স্থানে লিফলেট বিতরণ করা হয়।
সংবিধান কারও বাপের না : বুধবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘সংবিধান কারও বাপের না। বংশগত আর রক্তের বড়াই দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-নাতনিদের যে অসম সুবিধা দেওয়া হতো, সংবিধান কমিটির সদস্যদের সন্তানদেরও সেরকম অসমভাবে মুজিববাদী সংবিধানের পক্ষে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘যে কমিটি ৭২-এর সংবিধান করেছিল, সে কমিটি পাকিস্তানের সংবিধান বানানোর ম্যান্ডেট নিয়ে ভোট পেয়েছিল। মানে এটা মনে করাই দিলাম।’
এদিকে, জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক ও জুলাই শহিদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সম্পাদক সারজিস আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে প্রায় একই মন্তব্য পোস্ট করেছেন। বাহাত্তরের সংবিধানকে কবর দেওয়ার কথা গ্রহণযোগ্য নয়-১৯৭২ সালে বাংলাদেশের খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্যদের সন্তানদের এমন বিবৃতির একটি স্ক্রিনশটও তিনি পোস্টে যুক্ত করেছেন।