Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গুমের আরেক মামলা

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা

গুমের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি আসামিদের গ্রেফতার করে হাজির করার নির্দেশও দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সোমবার এই আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের সদস্য মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। যথার্থ ও কার্যকর তদন্তের স্বার্থে আসামিদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেন তারা। পাশাপাশি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদকে গ্রেফতারের বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের ঘটনায় সোমবার ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শুনানিতে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সরাসরি তত্ত্বাবধানে আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুম সংঘটিত হয়েছে। গুমের জন্য সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ হিসাবে তুলে ধরা হয়। যাদের গুম অবস্থা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে, সেটাও শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে। একজন ব্যক্তির ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার জন্য এসব গুম সংঘটিত হয়েছে। গ্রেফতার ও তদন্তের স্বার্থে শুনানিতে সবার নাম প্রকাশ করেননি চিফ প্রসিকিউটর। তবে শেখ হাসিনাসহ চার আসামির নাম প্রকাশ করেন। অপর তিন আসামি হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, পুলিশের সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও টেলিযোগাযোগ নজরদারির জাতীয় সংস্থা ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান। এর মধ্যে জিয়াউল আহসান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আরেক মামলায় গ্রেফতার আছেন। জাতিসংঘ মিশনে পাঠানো, পদোন্নতির লোভে বিভিন্ন বাহিনীর কিছু লোক গুমের মতো অপরাধে লিপ্ত হন বলে শুনানিতে উল্লেখ করেন চিফ প্রসিকিউটর।

আদেশের বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, আজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আমরা দুটি দরখাস্ত মুভ করেছি। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে যে ভয়ের সংস্কৃতি চালু করা হয়েছিল সেটার নাম হচ্ছে গুম এবং আরেকটি হচ্ছে ক্রসফায়ার। গুম করে গোপন কারাগারে আটকে রেখে মানুষ হত্যা, স্বাধীনতা হরণ ইত্যাদি কাজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধ। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনেও এসব মানবতাবিরোধী অপরাধ। বাংলাদেশে গত ১৫ বছর সেসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে এবং সে সময় পুলিশ থেকে শুরু করে গোয়েন্দাসহ বেশির ভাগ বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিনি বলেন, এসব বাহিনীর কিছু কিছু সদস্য যাদের প্রলোভন দেখিয়ে, বিদেশে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে, নানাভাবে পুরস্কৃত করে তাদের দিয়ে সিস্টেমেটিক্যালি গুমের মতো এই অপরাধ করা হয়েছিল। যেহেতু এই অপরাধগুলো গণহত্যার থেকে একটু ভিন্ন ধরনের অপরাধ। তাই আজকে ভিন্ন একটি মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানোর আবেদন করেছিলাম। তাজুল ইসলাম বলেন, যাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে তাদের মধ্যে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদসহ বিভিন্ন সংস্থার মোট ১২ জন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন জানিয়েছি। পরে আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এদের মধ্যে একজন বরখাস্তকৃত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান। যিনি ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য আমরা সবার নাম বলছি না। এখানে বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন আছেন। তিনি বলেন, পাশাপাশি আদালত আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন। সেদিন যদি তদন্ত রিপোর্ট আসে তাহলে সেই তদন্ত রিপোর্ট দাখিল হবে। গ্রেফতারসংক্রান্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

তাজুল ইসলাম বলেন, এসব অপরাধে যারা জড়িত তারা কেউই রাষ্ট্রের থেকে বড় নয় এবং আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সুতরাং আমরা খুঁজছি অপরাধ এবং অপরাধীকে। আমরা দেখব না কে কত বড়, কার কী পজিশন। নিরপেক্ষভাবে এদের সঠিক এবং ন্যায়বিচার করা হবে। যাতে করে বাংলাদেশে একেবারে এই অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি হবে এবং ভবিষ্যতেও কেউ যেন এমন দুঃসাহস না করতে পারে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি মামলা হলো। প্রথম মামলায়ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। সেই পরোয়ানার ভিত্তিতে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুমের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত তিনটি মামলা হলো। আগের দুটি মামলায় একজন করে আসামি করা হয়েছে। গুমের আগের দুটি মামলায় একটিতে রাঙামাটির পুলিশ স্পেশাল ট্রেনিং স্কুলের সাবেক পুলিশ সুপার মো. মহিউদ্দিন ফারুকীকে এবং আরেকটিতে বরিশাল রেঞ্জের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলেপ উদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে। আজকের শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন, বিএম সুলতান মাহমুদ ও আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ। মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলামসহ গুম হওয়া ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের সদস্যরা শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম