শিগগিরই রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ
অভিজ্ঞদের দিয়ে তৈরি হচ্ছে গঠনতন্ত্র
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নেতৃত্বে শিগগিরই আত্মপ্রকাশ পেতে যাচ্ছে নতুন রাজনৈতিক দল। দক্ষ ও অভিজ্ঞদের দ্বারা তৈরি করা হচ্ছে দলীয় গঠনতন্ত্র। সময় উপযোগী ও গ্রহণযোগ্য গঠনতন্ত্র তৈরির পরই দেওয়া হবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা।
ছাত্রনেতারা বলছেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তবে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই চাহিদা অনুযায়ী শিগগিরই নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ করতে চান তারা। সেজন্য দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রকে সামনে রেখে আজ থেকে সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যা চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন যুগান্তরকে বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতি অবলম্বন না করে অর্গানিক ও টেকসই রাজনৈতিক দল গঠনের কাজ আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্দেশে আমরা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে যাচ্ছি। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে জানতে চাচ্ছি তারা তরুণদের নেতৃত্বে কেমন রাজনৈতিক দল দেখতে চায়। একই সঙ্গে আমাদের দলের গঠনতন্ত্র তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। অভিজ্ঞদের মাধ্যমে গঠনতন্ত্র তৈরি করা হচ্ছে। তবে কতদিনে কাজ শেষ হবে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠন সত্যিই চ্যালেঞ্জিং। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই কাজ আমরা শেষ করতে চাই। যেসব তরুণ অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নয়, তাদের আমাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাই। কারণ তরুণরাই মূল শক্তি। এই তরুণরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাই গণ-অভ্যত্থানে তা দেখিয়ে দিয়েছে।
তথ্যমতে, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনে ব্যস্ত সময় পার করছেন জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রাজনৈতিক দল প্রকাশে প্রতিদিন দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। গত সপ্তাহ থেকে শুরু হয়েছে দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র তৈরির কাজ। একই সঙ্গে চলছে নির্বাচনি ইশতেহার তৈরির কাজও। অর্গানিক ও টেকসই রাজনৈতিক দল গঠনে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অভিজ্ঞদের। পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে। দেশের মানুষ কী ধরনের রাজনৈতিক দল চায়? তা জানতে প্রায় ২৫ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছে জাতীয় নাগরিক কমিটি। এর মধ্যে একজন সংগঠনের মুখ্য সংগঠক, চারজন যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং প্রায় ২০ জন সংগঠক রয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সফর শুরু করেছেন। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মতামত জানার চেষ্টা করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
সর্বশেষ থানা, উপজেলা ও পেশাজীবী মিলিয়ে সারা দেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মোট ১৫০টির মতো কমিটি গঠন কাজ শেষ করছে। কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতারা বিভিন্ন জেলায় নাগরিক কমিটির রাইজিং সভায় যোগ দিচ্ছেন। চলছে বাকি থানা, উপজেলা ও জেলা কমিটি গঠনের কাজ।
নেতারা বলছেন, গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন, গুম-খুন ও হত্যার রাজনীতি দেশের মানুষ দেখছে। মানুষ আর এমন রাজনীতিতে ফিরতে চায় না। তারা তরুণ ছাত্রদের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল দেখতে চায়। তরুণদের ঐক্যে উজ্জীবিত ও আত্মবিশ্বাসী তারা।
তাদের দাবি, জুলাই বিপ্লবে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না দেশের অনেক রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল গঠন না করতে নানাভাবে চাপে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন ও আত্মপ্রকাশের ঘোষণায় অটল তরুণ ছাত্রনেতারা। দেশের রাজনীতি থেকে হত্যা, গুম ও খুনমুক্ত করতে গুরুত্ব দিচ্ছে তরুণরা। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এই দুই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগে ভিন্ন একটি নামে গঠিত হবে নতুন রাজনৈতিক দলটি। তাদের প্রধান লক্ষ্য হবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বাস্তবায়ন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং সহমুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন যুগান্তরকে বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আমরা আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যেই নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করবে। আমরা সেভাবেই এগিয়ে যাচ্ছি।
সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি শুরু : এদিকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রকে সামনে রেখে আজ থেকে সারা দেশে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। যা চলবে আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
সংগঠন দুটির নেতারা বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন পেশাজীবী, কৃষক, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণের মাঝে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। ঘোষণাপত্রের দাবিতে সপ্তাহব্যাপী এই কর্মসূচি লিফলেট বিতরণ, সমাবেশ ও জনসংযোগের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ সরকারের গুম, খুন, অর্থ পাচার, মানবাধিকার লঙ্ঘন তুলে ধরা হবে দেশের মানুষের কাছে।