সিন্ডিকেটের হাত ভেঙে দিতে হবে
ষড়যন্ত্র চলছে আরও লড়াই করতে হবে: জামায়াত আমির
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এরা শুধু বিরোধী দল ও আলেম-উলামাদের ওপর নির্যাতন করেনি। ১৮ কোটি মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। মানুষকে বেইজ্জতি করেছে, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। সিন্ডিকেট করে বাজারে অগ্নিমূল্য চালু করে দিয়েছিল। এই সরকার এখনো তা ভাঙতে পারেনি। সিন্ডিকেটের হাতবদল হয়েছে। আগে তাদের কাছে ছিল, এখন আরেক দল সেটা হাতে তুলে নিয়েছে। এই সিন্ডিকেটের হাত ভেঙে দিতে হবে। ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, অনেক ত্যাগের বিনিময়ে স্বৈরাচার উৎখাত হয়েছে। কিন্তু এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আরও লড়াই করতে হবে। সব ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গড়তে হবে, যেখানে ধনী-গরিব, মুসলিম-হিন্দু, সাদা-কালোর কোনো বৈষম্য থাকবে না।
শনিবার সকাল ৯টায় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক আবুল হাশেমের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মোবারেক হোসেন, অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, কুষ্টিয়া জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি সুজাউদ্দিন, অধ্যক্ষ খন্দকার একেএম আলী মুহসিন, কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক ফরহাদ হুসাইন, জেলা শিবিরের সভাপতি ইমরান খান প্রমুখ।
ডা. শফিকুর বলেন, বাংলাদেশ ছিল তাদের ইনকাম সোর্সের জায়গা। আর তাদের কলিজা বিশ্বের অন্যান্য জায়গা। তারা ও তাদের ছেলেমেয়েরা বেগমপাড়ায় থাকে। তারা দেশকে ভালোবাসলে এই দেশেই থাকত এবং এই দেশের জন্য অবদান রাখত।
তিনি বলেন, তারা দেশটাকে ফোকলা করেছে। ব্যাংকগুলোকে শেষ করে দিয়েছে। ডাকাত এস আলমকে লেলিয়ে দিয়ে ভাগবাটোয়ারা করে ইসলামী ব্যাংককে শেষ করে দিয়েছে। এই ব্যাংকের টাকা চুরি করেছে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা। তাদের সাড়ে ১৫ বছরে লুটপাটের পরিমাণ প্রায় ২৬ লাখ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশের বার্ষিক বাজেটের প্রায় পাঁচগুণ। শুধু বিদেশে পাচার করেছেন তা নয়, দেশে যেখানেই তাদের হাঁড়িতে হাত ঢুকেছে সেখানেই টাকার খনি।
জামায়াত আমির বলেন, নারী-পুরুষের ব্যবধান এনে আমাদের বলে-জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে এ দেশের মানুষ বিপদে পড়বে। নারীরা মায়ের জাতি, আমরা তাদের মায়ের মতো সম্মান করি। যারা সন্তুষ্টির সঙ্গে বোরকা পরতে চাইবেন, তারা পরবেন। অন্যান্য ধর্মের মায়েদের আমি কীভাবে বোরকা পরাব? ইসলাম কি আমাদের এই দায়িত্ব বা অধিকার দিয়েছে? কোনোটাই দেয়নি।
তিনি আরও বলেন, তারা যা পছন্দ করবেন, তাই পরবেন। পোশাকের ব্যাপারে জোর খাটানো যাবে না। নারীরা যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। আল্লাহর আইন সবার জন্য সমান। আমরা সেই আইনের জন্য লড়াই করছি। আমি মানুষকে মানুষের মর্যাদা দেব। যদি প্রত্যেকটা মানুষ মানুষকে সম্মান দেয়, ভালোবাসে। তাহলে এই দেশ জান্নাতের টুকরোয় পরিণত হবে।
শফিকুর রহমান বলেন, এই রাষ্ট্রের সব নাগরিকের সম্পদ, ইজ্জত ও জীবন সম্পূর্ণ নিরাপদ। এ দেশের সব ধর্মের মানুষ তাদের নিজ নিজ ধর্ম নির্বিঘ্নে ও নিরাপত্তার সঙ্গে পালন করতে পারবে। ধর্ম পালনে কোথাও বাধার সন্মুখীন হবে না।
জামায়াতের আমির আরও বলেন, আমরা এমন শিক্ষাব্যবস্থা উপহার দেব, যাতে এ দেশের যুবক-যুবতীদের সার্টিফিকেট নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে না ঘুরতে হয়। কাগজের টুকরো নিয়ে দুয়ারে দুয়ারে দৌড়াদৌড়ি করা লাগবে না। পড়াশোনা শেষে চাকরি বা কাজ পেয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। যুবক-যুবতীদের প্রতিটি হাতকে দেশ গড়ার কারিগরের হাত হিসাবে তৈরি করতে চাই। এ দেশের মানুষ আর বিশ্বে চাকরির জন্য যাবে না। এর আগে বিশ্ব থেকে এ দেশে চাকরি করতে আসত। সেই গৌরব ফিরে পাব ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, যারা ধর্মের বিভাজন তৈরি করে মেজরিটি-মাইনরিটি দিয়ে তারাই ৫৩ বছর আপনাদের কষ্ট দিয়েছে। আমাদের দলের কেউই এসব অপকর্মে জড়িত নয়। অথচ দোষ দেন আমাদের ঘাড়ে। যেই সমাজে চাঁদাবাজি-ঘুসখোর থাকবে না, যেই সমাজে দখল বাণিজ্য চলবে না, মানুষে-মানুষে ধর্মে-ধর্মে বৈষম্য থাকবে না। সেই সমাজ গড়ার জন্য লড়াই করতে হবে। আমরা সেই লড়াই চালিয়ে যাব।