কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার
ডলার বেচাকেনায় ১ টাকার বেশি ব্যবধান নয়
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের সঙ্গে ডলার বেচাকেনায় দামের মধ্যে সর্বোচ্চ ১ টাকা ব্যবধান রাখতে পারবে। কোনোক্রমেই ১ টাকার বেশি ব্যবধান থাকতে পারবে না।
একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার জন্য প্রতিদিন প্রতি উপকরণের জন্য একটি দর ঘোষণা করতে হবে। ওই দরেই ওইদিন বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনা করতে হবে। কোনোক্রমেই ঘোষিত দর পরিবর্তন করা যাবে না। ব্যাংকগুলোকে এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের বিরুদ্ধে জরিমানাসহ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি করে দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।
এর আগে গত ৩১ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারসহ বৈদেশিক মুদ্রার দাম বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দিয়েছে। এই ঘোষণা দেওয়ার পর নতুন বছরের প্রথম দিন অর্থাৎ গত ১ জানুয়ারি থেকেই বাজারে ডলারের দাম গড়ে ২ টাকা বেড়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকে প্রতি ডলার গড়ে বিক্রি হয়েছিল ১২০ টাকায়।
গত বুধবার তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২২ টাকায়। গত বৃহস্পতিবারও বাড়তি দামেই ব্যাংকে ডলার বেচাকেনা হয়েছে। ওইদিন ব্যাংকগুলো ১২০ থেকে ১২১ টাকা দরে ডলার কিনে বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১২২ টাকা দরে। নগদ ডলার বিক্রি করেছে সর্বোচ্চ ১২৩ টাকা দরে। এতে ডলারের দাম ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান ১ থেকে ২ টাকার মধ্যে ছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একে অস্বাভাবিক মনে করছে।
ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের ব্যবধান কোনোক্রমেই ১ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। ক্রয়-বিক্রয় মূল্যে বেশিমাত্রায় ব্যবধান থাকলে ব্যাংকগুলোর বাড়তি মুনাফা হবে। অন্যদিকে বাজার অস্থিতিশীল হবে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যকার ব্যবধান কোনোক্রমেই ১ টাকার বেশি হতে পারবে না। ফলে যেসব ব্যাংক বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ব্যবধান প্রায় ২ টাকার মধ্যে রেখেছিল তাদের এই ব্যবধান আগামী রোববার কমিয়ে আনতে হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক মুদ্রা বেচাকেনার জন্য প্রতিদিন বিভিন্ন উপকরণের একটি দর ঘোষণা করতে হবে। ওই দরেই ওইদিন বেচাকেনা করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা বাড়লে বা কমলে কোনোক্রমেই দর পরিবর্তন করা যাবে না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে হুঁশিয়ার করে বলে দেওয়া হয়েছে, এসব নির্দেশনা কোনো ব্যাংক ভঙ্গ করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর মধ্যে জরিমানাসহ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ আইনের আওতায় আনার জন্য অন্যান্য ব্যবস্থাও নেওয়া হবে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করে দেওয়ার বিধান রয়েছে।
বাজারভিত্তিক করার কারণে আগামী ৫ জানুয়ারি থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অনুমোদিত শাখাগুলো প্রতিদিন দুবার বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে পাঠাতে হবে। এক লাখ ডলারের বেশি কেনাবেচার তথ্য বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে। এছাড়া বেলা ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা কেনাবেচার তথ্য বিকাল সাড়ে পাঁচটার মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ছক অনুযায়ী এসব তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠাতে হবে।
আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার কেনাবেচার তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনের একটি ভিত্তিমূল্য বা রেফারেন্স প্রাইস বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে।