প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কিছু আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজন হলে কিছু আলামত বিদেশে পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। এদিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্ব গঠিত কমিটি ভবনের ফ্লোরে সাদা পাউডার ও মৃত কুকুর নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ কমিটি আজ প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন দাখিল করবে। 

রোববার প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, তদন্ত কাজের অংশ হিসাবে বিভিন্ন ধরনের আলামত সংগ্রহ করেছে কমিটি। সেখান থেকে বেশকিছু আলামত দেশে পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রয়োজন মনে করলে কিছু আলামত দেশের বাইরে পাঠিয়েও তদন্ত কমিটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রাথমিক প্রতিবেদন হস্তান্তর করবে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা, কমিটি ও সংশ্লিষ্ট অন্যসব কর্তৃপক্ষ মিলে ঠিক করবেন তদন্তটি সম্পন্ন করতে আসলে কত দিন লাগবে। এ বিষয়ে এখনই নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিক প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু প্রকাশ করা হবে কি না-জানতে চাইলে আজাদ মজুমদার বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে পরবর্তী সময়ে প্রধান উপদেষ্টা সিদ্ধান্ত নেবেন।

জানা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত ফ্লোরগুলো থেকে কমিটি এরইমধ্যে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছে। একাধিক বৈঠক করে আলামতসহ নানা বিষয়ে তারা আলোচনা করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলায় সাদা পাউডার পাওয়া গেছে। করিডরের মধ্যে কীভাবে সাদা পাউডার এলো-সে প্রশ্ন উঠেছে। এটি দাহ্য পদার্থ না কি চুন (ক্যালসিয়াম অক্সাইড) তা খতিয়ে দেখতে সিআইডির ফরেনসিক ল্যাব ও বুয়েট ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। দুটি প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষার প্রতিবেদন রোববার পাওয়া কথা ছিল। তবে এ বিষয়ে কমিটির সংশ্লিষ্টদের কাছে জানতে চাইলেও কেউ মন্তব্য করেননি।

কমিটির বৈঠকে মৃত কুকুর নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আগুন লাগার আগেই কি কুকুরটি সেখানে ছিল, না কি পরে উঠেছে-এ ব্যাপারে খতিয়ে দেখা হবে। ভবনটিতে ফায়ার অ্যালার্ম ও পানি ছিটানোর নজেল নষ্ট কেন-তা নিয়েও বুয়েটের একজন সদস্য বৈঠকে প্রশ্ন তোলেন।

বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুন লাগে। ১০ ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে আগুন নেভায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। আগুনে ৭ নম্বর ভবনে থাকা সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগ; ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। 

ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি : সচিবালয়ে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণসহ নানা বিষয় অনুসন্ধানে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর রোববার সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিতে সভাপতি হিসাবে সংস্থার পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম। উপপরিচালক (উন্নয়ন) নইমুল আহছান ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। আগামী ৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন-সহকারী পরিচালক (রংপুর) কাজী নজমুজ্জামান, ফায়ার সার্ভিস ট্রেনিং কমপ্লেক্স মিরপুরের অ্যাডজুট্যান্ট সাইদুল আলম চৌধুরী, ফায়ার সদর দপ্তরের আইসিটি সেলের রুহুল আমিন মোল্লা, সদর দপ্তরের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা) ইকবাল বাহার বুলবুল ও নারায়ণগঞ্জের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফীন।