Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফিরে দেখা ২০২৪

সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সংস্কার কমিশন

মনির হোসেন

মনির হোসেন

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সবচেয়ে বেশি আলোচনায় সংস্কার কমিশন

ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রাষ্ট্র সংস্কারে গঠিত বিভিন্ন কমিশন। এ পর্যন্ত স্বতন্ত্র কমিশন, টাস্কফোর্স মিলিয়ে গঠন হয়েছে ২০টি। এর মধ্যে রাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত ৬টি এবং বাকিগুলো খাতভিত্তিক। ইতোমধ্যে দুটি কমিশনের রিপোর্ট জমা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকটি কমিশনের রিপোর্ট জমা হওয়ার কথা। আবার ৬ কমিশনের রিপোর্ট জমার পর ওই কমিশন প্রধানদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সেখানে চেয়ারম্যান থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই কমিশন জাতীয় ঐক্য গঠনে কাজ করবে। এছাড়াও ব্যাংকিং খাত এবং শেয়ারবাজারের জন্য আলাদা টাস্কফোর্স করা হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কার কমিশন : হাসিনা সরকারের পতনের এক মাস ৬ দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের এক মাস ৩ দিনের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বহুল আলোচিত ৬ খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। এর মধ্যে নির্বাচন কমিশনের প্রধান করা হয় সুজন (সুশাসনের জন্য নাগরিক) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারকে। পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সাবেক জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র সচিব সফর রাজ হোসেন, বিচার বিভাগ সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মমিনুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আবদুল মুয়ীদ চৌধুরী এবং সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ইলিয়ন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ। পরবর্তী তিন মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেওয়ার কথা। এরপর ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে সরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শ সভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সেখানে এ রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এর একটি ধারণাও দেওয়া থাকবে। এই রিপোর্ট নিয়ে ড. ইউনূসকে চেয়ারম্যান করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হচ্ছে। সেখানে ৬ কমিশনের প্রধানরা থাকবেন।

গুম কমিশন : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১৫ বছরে ‘গুম’ অনুসন্ধানে একটি কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের প্রধান ছিলেন মইনুল ইসলাম চৌধুরী। এই কমিশন ১৪ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে ১৬৭৬টি জোরপূর্বক গুমের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে কমিশন পর্যালোচনা করেছে ৭৫৮টি। অভিযোগের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ ১৩০টি গুমের ঘটনা ঘটেছে এবং ২০২৪ সালে এখন পর্যন্ত ২১টি অভিযোগ জমা পড়েছে। সেখানে গুমের পর হত্যা, কখনো অমানুষিক নির্যাতন আবার কখনো হত্যা করা হয়েছে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে। এরপর অধিকাংশ লাশ সিমেন্টে বেঁধে নদীতে ফেলা হয়েছে। আবার কখনো রেললাইনে ফেলে রেখে লাশ বিচ্ছিন্ন করতে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা হয়েছে। সুস্থ মানুষের ঠোঁট সেলাই করা এবং যৌনাঙ্গসহ স্পর্শকাতর জায়গায় দেওয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক শক। কোনো সিনেমার কাহিনি নয়, লোমহর্ষক এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি : আওয়ামী লীগের শাসনামলে ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে দেশের আর্থিক অবস্থা মূল্যায়নে গত ২৮ আগস্ট বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে প্রধান করে ১১ সদস্যবিশিষ্ট শ্বেতপত্র প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়। গত ১ ডিসেম্বর কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, আলোচ্য সময়ে দেশ থেকে ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ২৮ লাখ কোটি টাকা। এই পরিমাণ টাকা গত ৫ বছরে দেশের জাতীয় বাজেটের চেয়ে বেশি। আর প্রতিবছর পাচার হয়েছে ১৬ বিলিয়ন ডলার বা ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ১৫ বছরের পাচারের অর্থ দিয়েই ৭৮টি পদ্মা সেতু করা সম্ভব। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ১৫ বছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) ৭ লাখ কোটি টাকার বেশি ব্যয় হয়েছে। এর ৪০ শতাংশ অর্থ আমলারা লুটপাট করেছে। এ সময়ে কর অব্যাহতির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ। এটি অর্ধেকে নামিয়ে আনা গেলে শিক্ষা বাজেট দ্বিগুণ এবং স্বাস্থ্য বাজেট তিনগুণ করা যেত। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর ১০ শতাংশ অবৈধ লেনদেন ধরা হলে পরিমাণ হবে কমপক্ষে ৩ বিলিয়ন ডলার।

অন্যান্য কমিশন : এছাড়াও আরও ৪টি কমিশন গঠন করা হয়েছে। এগুলো হলো-স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ড. একে আজাদ খান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বিশিষ্ট কলামিস্ট কামাল আহমেদ, শ্রমিক অধিকার সংস্কার কমিশনের প্রধান বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের সৈয়দ সুলতানউদ্দিন আহমেদ এবং নারীবিষয়ক কমিশনের প্রধান নারীপক্ষের শিরিন পারভীন হক। কমিশনগুলো কাজ করে যাচ্ছে।

টাস্কফোর্স : ব্যাংকিং খাতের সংস্কারে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। ছয় সদস্যের টাস্কফোর্সের প্রধান হলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়সংক্রান্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তারা পুরো ব্যাংকিং খাতের ব্যাপারে একটি প্রতিবেদন তুলে ধরবেন। এছাড়া শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ানো ও আন্তর্জাতিক মানের সুশাসন নিশ্চিত করতে পুঁজিবাজার সংস্কারের সুপারিশের জন্য পাঁচ সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট টাস্কফোর্সের প্রধান হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন। তারা শেয়ারবাজারের সমস্যা চিহ্নিত করার পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরবেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম