আহতদের আশানুরূপ চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি: জামায়াত আমির
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিলেও আশানুরূপ চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ পরিবার ও আহতদের পাশে গেলে তারা তাদের অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন জামায়াতে ইসলামী তাদের জন্য যেই ভূমিকা রেখেছে অন্য কোনো দল এমনকি রাষ্ট্রও তা করেনি, করতে পারেনি। এই আন্দোলনের বীরদের জামায়াতে ইসলামী দলীয় সম্পদ বানাতে চায় না। জামায়াতে ইসলামী বিশ্বাস করে আন্দোলনের শহিদ ও আহত সব বীর আমাদের জাতীয় সম্পদ।’
শনিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনের এক কনভেনশন হলে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আয়োজনে ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের স্মৃতিচারণ প্রেরণার গণ-অভ্যুত্থান-২৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথম কাজ হবে শিক্ষিত জাতি গঠন উল্লেখ করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, যে জাতি যতবেশি শিক্ষিত সেই জাতি ততবেশি উন্নত। কিন্তু বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। বিগত সরকারের তৈরি শিক্ষানীতিতে কিশোর গ্যাং, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী তৈরি হয়েছে। যেই শিক্ষা মানুষকে মানবিক ও আদর্শবান করে না, সেটি কখনো শিক্ষা হতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জাতি জানতে পারছে, শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানদের গণভবনে ডেকে নির্দেশ দিয়েছে যত মানুষ মারার দরকার হয় মারতে। তবু তার ক্ষমতার গদি লাগবে, রাখতে হবে। মানুষ যখন মনুষ্যত্ব হারিয়ে ফেলে তখনই এমন অমানবিক কথা বলতে পারে, নির্দেশ দিতে পারে। এক ব্যক্তি বা এক দলের ক্ষমতা অতীতে সব সরকারকে হিংস্র করে তুলেছে। তারা ক্ষমতার লিপ্সায় মানুষ হত্যা করেছে। জামায়াতে ইসলামী এক ব্যক্তি বা এক দলের ক্ষমতায় বিশ্বাসী নয়। জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রকামী সব দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে চায়। যেখানে একক কোনো ব্যক্তি বা দলের ক্ষমতা ও প্রভাব থাকবে না। এমন একটি সরকার গঠন হলে জাতি সত্যিকার অর্থে স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। একজন নাগরিক তার প্রাপ্য মর্যাদা ও অধিকার পাবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, ২০২৪ এর জুলাই-আগস্টের চেতনা জামায়াতে ইসলামী ১৯৪১ সাল থেকেই লালন ও ধারণ করছে। এই চেতনা বাস্তবায়নের সময় এসেছে। জনগণ সেই সুযোগ দিলে জামায়াতে ইসলামী ছাত্র-জনতার উই ওয়ান্ট জাস্টিস স্লোগান বাস্তবায়ন করবে। ইনসাফ, ন্যায়বিচার, মানবিক সমাজ গঠন করতে তিনি জামায়াতে ইসলামীকে একবার সুযোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির মো. নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন নিজ ঘরের বেডরুমে গুলিবিদ্ধ ২ বছর বয়সি রাফসানের মা, মিস্ত্রি আল-আমীন, জাফরুল হাসান, অটোরিকশাচালক আল-আমীন, লাশ গোসল দানকারী জামাল হোসেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিয়াজুল ইসলাম, মো. মাহবুব, মো. মেহেদী হাসান শুভ, বেলাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন, পরিবহণ শ্রমিক নুরে আলম, মহিউদ্দিন রাব্বি, নাহিদ হাসান, নারী শ্রমিক পারভীন, মো. আশরাফুল ইসলাম, দোকান কর্মচারী মো. ইউসুফ, টাইলস মিস্ত্রি শাহ আলম, মো. শিফায়েত হোসেন আসিফ, আল-আমীন, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. আবু তাহের, বনশ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী আনম সামিত, এশিয়ান প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী শারমিন রহমান, খিলগাঁও উত্তর এলাকার মো. নেছার উদ্দিন নাঈম প্রমুখ।
স্মৃতিচারণকালে আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কোনো কিছু পাওয়ার আশায় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি। আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশ গঠন করে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু যাদের নেতৃত্বে ও আহ্বানে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, তারা আন্দোলন পরবর্তী শহিদ পরিবার ও আহতের থেকে দূরে সরে গেছে। কেন আহতদের চিকিৎসা না করে ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ ফ্যাসিবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে সে বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি প্রশ্ন রেখে তারা বলেন, আহতরা মারা গেলে বলা হয় আগামীকাল তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নেওয়া হতো! মরার আগে কেন বিদেশে নেওয়া হয় না? বক্তারা গণহত্যার অপরাধে খুনি হাসিনাসহ তার দোসরদের বিচারের মাধ্যমে ফাঁসির দাবি করেন।
অনুষ্ঠানে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আব্দুস সবুর ফকির ও অ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, মোহাম্মদ কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, শামসুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।