সারা দেশে ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
‘কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় চাই’
উপসচিব পুলের কোটা বাতিল করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা বিধান * শিক্ষা-স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বাইরে নেওয়া যাবে না * উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রশাসন ও আদার্স ক্যাডার ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে নির্ধারণ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় চাই’ অর্থাৎ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ স্ব-স্ব ক্যাডার কর্মকর্তাদের দিয়ে পরিচালনা করার দাবি করেছেন প্রশাসন ছাড়া বিসিএস ২৫টি ক্যাডার কর্মকর্তারা।
বৃহস্পতিবার আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে ২৫ ক্যাডার কর্মকর্তারা সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচি থেকে উল্লিখিত বিষয়সহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন তারা। অন্যগুলো হলো-উপসচিব পুলের কোটা বাতিল করে সব ক্যাডারের মধ্যে সমতা বিধান করতে হবে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বাইরে নেওয়া যাবে না। উপসচিব পদে পদোন্নতি প্রশাসন ও আদার্স ক্যাডার ৫০:৫০ আনুপাতিক হারে নির্ধারণ করতে হবে। এসব দাবি আদায়ে ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাবি মানা না হলে মহাসমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। জানতে চাইলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মফিজুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আমাদের দাবি পরিষ্কার। সংস্কার কমিশন উপসচিব পদে পদোন্নতির ৫০:৫০ খসড়া সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে। উপসচিব পুল বলে কিছু থাকবে না। লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি দিতে হবে। পদোন্নতিসহ সব ক্ষেত্রে সব ক্যাডারের সমতা বিধান করতে হবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিসের বাইরে নেওয়া চলবে না। সরকারকে সময় দিয়েছে। ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশের দিনক্ষণ ঠিক করা আছে। এরপরও আজ (শুক্রবার) পরিষদের জরুরি আহ্বান করা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হবে ৪ জানুয়ারি মহাসমাবেশ করব কি না। কারণ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, নাকি ঘটানো হয়েছে-তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদ এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানাচ্ছি।
এদিকে ২৫ ক্যাডারের মানববন্ধনের সময় কর্মকর্তারা ২৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানান। অগ্নিনির্বাপণকালে ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহতের ঘটনায়ও গভীর শোক প্রকাশ করা হয়। বিগত সময়ের দুর্নীতির নথি গায়েবের জন্য এটা কোনো ষড়যন্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জবাবদিহিমূলক জনবান্ধব সিভিল প্রশাসনের দাবিতে পরিষদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। পরিষদের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের জন্য প্রতিটি ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশন সব সদস্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। ১৭ ডিসেম্বর জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন সচিবালয় বিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে উপসচিব পুলে প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০% কোটা রেখে অন্যান্য ২৫টি ক্যাডারের জন্য ৫০% পরীক্ষার ভিত্তিতে নিয়োগ এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারকে সিভিল সার্ভিস হিসাবে আলাদা করার খসড়া সুপারিশ প্রস্তাব করে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সঙ্গে কোনো রকম আলোচনা ছাড়া এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ২৪ তারিখে সারা দেশে ১ ঘণ্টার কলমবিরতি কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
বিএএসএ-সংস্কার কমিশনের বৈঠক : বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএএসএ) সঙ্গে বৈঠক করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বৃহস্পতিবার দুপুরে আগারগাঁও বিআইজিএম সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বিএএসএর সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সচিব ড. আনোয়ার উল্যাহ, সংগঠনের মহাসচিব ও পরিকল্পনা কমিশন সদস্য (সচিব) মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক (ডিসি) তানভীর আহমেদ অংশ নেন। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের তরফ থেকে কমিশন প্রধান সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, কমিশনের সদস্য সচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমানসহ কমিশন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে বিএএসএর সভাপতি ড. আনোয়ার উল্যাহ যুগান্তরকে বলেন, সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের আবেদনগুলো কমিশনে উপস্থাপন করেছি। আমরা সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই। আমরা কঠোর কোনো কর্মসূচি দিয়ে সরকারকে বিব্রত করতে চাই না। এছাড়া আদার্স ক্যাডারের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। তারা তাদের অধিক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সম্মান পাক সেটাই আমরা চাই। প্রশাসন ক্যাডার আদার্স ক্যাডারকে প্রতিপক্ষ মনে করে না।