ফিরে দেখা ২০২৪: হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার
ফিনিক্স পাখির মতো জেগেছে বিএনপি
বছরের শুরুতে সংকটে থাকলেও পট পরিবর্তনের পর আবারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিএনপি। দীর্ঘ ১৭ বছর হামলা-মামলা, নির্যাতন-নিপীড়নের সবচেয়ে বেশি শিকার হয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় দলকে ভাঙা, দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজাসহ নানা ষড়যন্ত্রও মোকাবিলা করেছে বিএনপি। তবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর সেই চিত্র পালটে যায়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে ফের ঘুরে দাঁড়ায়। ‘ফিনিক্স পাখি’র মতো জেগে ওঠে দলটি। বিভিন্ন কর্মসূচিতে লাখো নেতাকর্মী সমাবেত করে শক্তি জানান দেয়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব, দূরদর্শী সিদ্ধান্ত, ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতির ফলে এখন দেশের ভেতর ও বাইরে সব মহলে দলটির গুরুত্বও বাড়ছে।
তবে দেশের বড় রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপির সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন। তাই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা পরিকল্পনা করছে। একদিকে ভূরাজনীতির নানা সমীকরণ, অন্যদিকে জোটভুক্ত নাকি এককভাবে নির্বাচনে অংশ নেবে-সেই হিসাবও কষছে দলটি। আবার দ্রুত নির্বাচনের দাবিতেও সরব, চায় সুস্পষ্ট নির্বাচনি রোডম্যাপ। আগামী বছর জানুয়ারির মধ্যে এ রোডম্যাপ ঘোষণা না দিলে ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে কর্মসূচি পালনেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।
বিএনপির একাধিক নেতা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থন অব্যাহত রাখবে বিএনপি। যদি সরকার কোনো কারণে ব্যর্থ হয়, সেটির নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবার ওপর। তাই বিএনপি এ সরকারকে ব্যর্থ দেখতে চায় না। এ মুহূর্তে সরকারের কাছে দলটির চাওয়া-যত দ্রুত সম্ভব সুনির্দিষ্টভাবে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সরকার তাদের কাজ সম্পন্ন করুক।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে গিয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত আমাদের কেউ বাকি নেই যারা নির্যাতনের শিকার হননি। এমন কেউ নেই যে মামলার আসামি হননি, জেল-জুলুম খাটেননি। অতএব, এরপরও এই দল ছেড়ে কেউ যায়নি। সেজন্যই এসব পরীক্ষায় পাশ করেই বর্তমানে বিএনপি সর্ববৃহৎ জনপ্রিয় দল।’
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির কোনো চ্যালেঞ্জ আছে কি না-জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ হলো জনগণের জন্য। যেই নির্বাচন চেয়েছি, আমরা চাই এ সরকার সেই নির্বাচন দেবে। যেই নির্বাচনে জনগণ স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে। আর সেটা জনগণের কাছেই বড় চ্যালেঞ্জ হবে যে তারা তাদের নির্বাচিত, পছন্দের লোক সংসদে পাঠাতে পারে কি না, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে কি না। আমাদের কোনো চ্যালেঞ্জ না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা হলে বিএনপি একক নাকি জোটগতভাবে নির্বাচনে যাবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে এ ধরনের সিদ্ধান্ত সাধারণত হয় না।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী যুগান্তরকে বলেন, ‘নিরন্তর নিপীড়নের মধ্য দিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে বিএনপি। এর নেপথ্যে দেশনেত্রী খালেদা জিয়া। তার যে অদম্য সাহস এবং কোনো চাপের মুখে নতি স্বীকার না করার সহজাত বৈশিষ্ট্য, গোটা জাতি ও নেতাকর্মীদের উদ্বুব্ধ করার তার যে একটা বিশাল ক্ষমতা-মূলত এসবের প্রভাব পড়েছে। আবার উনি যখন কারাগারে যান, তখন একই কাজটা করলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দিনরাত পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এ দলকে আজ একটা ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে জাগিয়ে তুলেছেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীকে স্কাইপের মাধ্যমে তৃণমূল থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত কেউ তার দৃষ্টির বাইরে যেতে পারেনি। এসব মিলিয়ে এ দুজনের নেতৃত্বে এ দল আবারও পুনর্গঠিত হয়েছে, এ দল পুনরুজ্জীবিত।’
সংকট দিয়ে বছর শুরু : বছরের শুরুতে বড় সংকটে পড়ে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্তত ৩৫ সিনিয়র নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়। গ্রেফতার থেকে বাদ যাননি মধ্যম সারি ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও। অন্তত ৩০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মী-কেউই বাসায় থাকতে পারেনি। এমনকি অনেক নেতাকর্মীকে বনে-জঙ্গলেও রাত কাটাতে হয়েছে। দেশবাসীকে ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচনের ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ৬ জানুয়ারি ভোর ৬টা থেকে ৮ জানুয়ারি ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার হরতাল পালন করে। এর আগে ৫ জানুয়ারি মিছিল, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি পালন করে। বিএনপিসহ অন্তত ৫২টি নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ভোট বর্জনের পর একতরফা ভোট করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। এই একতরফা নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বাতিলের দাবিও জানায় এসব রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি দীর্ঘ ৭৫ দিন বন্ধ থাকার পর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকের তালা ভেঙে প্রবেশ করেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। একই দিন দীর্ঘ ৫ মাস রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর বাসায় ফিরেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
দলে ভাঙন ঠেকানো বড় সফলতা : ৭ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন প্রক্রিয়ার শুরু থেকে বিএনপি ভাঙার তৎপরতা ছিল। তাতে কোনো মহলই সফল হয়নি। নানা চাপ ও প্রলোভন থাকার পরও ‘দল ভাঙার প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা যায়নি। দল ভাঙার তৎপরতার অংশ হিসাবে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের গ্রেফতার, মামলা এবং কয়েক শ নেতাকর্মীকে সাজা দেওয়া হয়। নেতাদের ভোটে নিতে তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম ও বিএসপি নামে কিংস পার্টি গঠন করা করা। এতেও সারা মেলেনি। শুধু ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, একরামুজ্জামান ও শাহ আবু জাফর ছাড়া আর কাউকে দল থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। ফলে শেখ হাসিনা সরকারের সব পরিকল্পনাই ভেস্তে যায়। সাংগঠনিকভাবে বিএনপির কোনো বড় ক্ষতি তারা করতে পারেনি। তখন সরকারবিরোধী আন্দোলনে থাকা বিএনপির জন্য এটিই বড় ধরনের সাফল্য ছিল। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি আস্থা এবং তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও দক্ষ নেতৃত্বের ফলে বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পেরেছিলেন।
ভোট-পরবর্তী সময়ে নানা কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সরব ছিল : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন-পরবর্তী জুন পর্যন্ত প্রায় ছয় মাস নানা কর্মসূচি ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে সরব ছিল বিএনপি। নির্বাচন অবৈধ দাবি করে লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। একে একে মুক্তি পান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতারা। মুক্তি পান তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীও। পরে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হলেও তা বর্জন করে বিএনপি। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই শতাধিক নেতাকর্মীকেও বহিষ্কার করে দলটি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে বড় ভূমিকা : জুলাইয়ে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন দেয় বিএনপি। ৬ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে এই সমর্থনের কথা জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফরম তৈরি করেন। একের পর এক কর্মসূচি দেন। আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয় বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো। বিশেষ করে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা ছিল অনেক। গ্রেফতার করা হয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ আরও অনেক নেতাকর্মীকে। সেই দিনগুলোয় অর্থনৈতিক অসন্তোষ এবং ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর লড়াইয়ের মাধ্যমে জনগণ একত্রিত হয়, বিশেষ করে বিক্ষোভকারীদের দমানোর জন্য ক্রমবর্ধমান তীব্র ও সহিংস রাষ্ট্রীয় পীড়ন দেখে। এতে আন্দোলন আরও বেগবান হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশ যখন উত্তাল, তখন সর্বশক্তি দিয়ে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার ডাক আসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলনে সব স্তরের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের অংশ নেওয়ার নির্দেশনা দেন। ৪ আগস্ট ছাত্ররা ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি পালন করে। সেদিন ছিল আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক। ছাত্র-জনতা একত্রিত হয়ে শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত প্রতিবাদী জোট গড়ে তোলে। ঘোষণা দেওয়া হয় ৫ আগস্ট সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের। ওইদিন ছাত্রদের ডাকে সারা দিয়ে ঢাকাসহ সারা দেশে স্রোতের মতো ছাত্র-জনতা নেমে আসেন রাজপথে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়, পালিয়ে যেতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। জয় হয় ছাত্র-জনতার। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু বিজয়ে বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা মাঠে থেকে বড় ভূমিকা পালন করেন। রুহুল কবির রিজভী মনে করেন, বিগত ১৬ বছরের যে নিরন্তর সংগ্রাম, গুম-খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যা-এ ভয়কে মাথার মধ্যে রেখেই নেতাকর্মীরা ক্রমাগতভাবে লড়ে গেছেন। সাধারণ জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন-শেখ হাসিনা ফ্যাসিস্ট-স্বৈরাচার। যে কারণে আগে থেকে জনগণের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। তারওপর শেষ আঘাত দিয়েছে ছাত্র-জনতা। অগ্রভাগে থেকে তারা নেতৃত্ব দিয়ে বিজয় অর্জন করেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ত্যাগের পটভূমিতেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। জুলাই-আগস্ট বিপ্লবেও বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের চার শতাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, আহত হয়েছেন অসংখ্য।
১৭ বছর পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে : ৫ আগস্টের পর দীর্ঘ ১৭ বছর পর ঘুরে দাঁড়ায় বিএনপি। অন্তর্বর্তী সরকারকে সব ধরনের সহযোগিতা ও সমর্থন দেয় দলটি। মুক্ত হন দলটির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। আইনিভাবে মোকাবিলা করে অধিকাংশ মামলায় খালাস পেয়েছেন আপসহীন এই নেত্রী। একইভাবে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে থাকা অধিকাংশ মামলা বাতিল বা খারিজ কিংবা খালাস পেয়েছেন। বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ৮ নভেম্বর রাজধানী ঢাকায় র্যালির মাধ্যমে শক্তি জানান দেয় বিএনপি। নয়াপল্টন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত র্যালিতে লাখ লাখ নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে রাজধানীতে এত মানুষের উপস্থিতি কোনো রাজনৈতিক দলের র্যালিতে দেখা যায়নি। এছাড়া বেশ কয়েকটি সমাবেশ, সভা-সেমিনারও করেছে দলটি। রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মশালা শেষে এখন জেলা পর্যায়ে কর্মশালা করছে, যা ব্যাপক সারা ফেলেছে জনগণের মধ্যে।
দেশে-বিদেশে কূটনৈতিকসহ সব মহলে গুরুত্ব বাড়ছে : পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেশে-বিদেশে কূটনৈতিকসহ সব মহলে বিএনপির গুরুত্ব বাড়ছে। দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার বা রাষ্ট্রদূতরা দেখা করছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, রাশিয়া, পাকিস্তানসহ ঢাকায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা পৃথকভাবে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
তারেক রহমানের বক্তব্য ও সাংগঠনিক দূরদর্শিতার প্রশংসা : গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে তারেক রহমানের দূরদর্শিতা, নানা দিকনির্দেশনা, বক্তব্য, ইতিবাচক মানসিকতা, সহনশীলতা, ধৈর্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সাধারণ মানুষসহ সব মহলে প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পরপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কঠোর নির্দেশনা, দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং প্রতিহিংসার পরিবর্তে সহনশীল রাজনীতির কারণে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে সারা দেশে। সেসময় খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীশূন্য দেশে পাড়া-মহল্লায় পাহারা দিয়েছেন নেতাকর্মীরা। দুর্গাপূজায় মন্দিরে মন্দিরে পাহারা দিয়েছেন তারা। সেসময় তারেক রহমানের সেই ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছেন। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সাংগঠনিক কাজের উদ্দেশ্যে সফরকালে কোনো মোটরবহর এবং কারসহ অন্য কোনো যানবাহনে শোভাযাত্রা পরিহার ও ব্যানার-পোস্টার সরানোর নির্দেশ নেতাকর্মীদের দিয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে সাংগঠনিক জেলা ও তৃণমূলে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করতে ১০ বিভাগে ১০ জন সিনিয়র নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা কাজও শুরু করেছেন। এ প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তিনি মনে করেন, তারেক রহমানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে। তারেক রহমান নেতৃত্বের গুণাবলি দিয়ে প্রমাণ করেছেন, বিএনপি একটি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। রাজনীতির বাইরেও আহতদের সহযোগিতা, গুম-খুন পরিবারের দায়িত্ব নেওয়াসহ নীরবে-নিভৃতে তারেক রহমানের কাজগুলোও অভাবনীয়।