Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ মাইকেল চাকমার

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুমের অভিযোগ মাইকেল চাকমার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন মাইকেল চাকমা। বুধবার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিনি এ অভিযোগ দায়ের করেন। মাইকেল চাকমা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) নেতা। অভিযোগ দায়েরের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মাইকেল চাকমার অভিযোগ আমলে নিয়েছি। এখন থেকেই তার অভিযোগের তদন্ত শুরু করব। সকালে শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট শাসনামলে গুমের শিকার ইউপিডিএফ নেতা মাইকেল চাকমা দায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে ট্রাইব্যুনালে আসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আলোকচিত্রী শহিদুল আলম ও শহিদুল আলমের স্ত্রী অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ।

এ সময় মাইকেল চাকমা সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি যে প্রতিহিংসার শিকার হয়েছি, প্রধান আসামি হিসাবে আমার গুমের জন্য শেখ হাসিনাকেই দায়ী করছি। তার সঙ্গে আরও যারা জড়িত ছিল, তাকে যারা সহযোগিতা করেছে তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ দেব। লিখিত অভিযোগে বিস্তারিত দেওয়া হবে।’

মাইকেল চাকমা আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে তিনবার একটি বিষয় আমাকে বলেছে, পার্বত্য চুক্তি কেন গ্রহণ করতে পারিনি? চুক্তি গ্রহণ না করা মানে সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারা। চুক্তি (পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি) যেহেতু সরকারের সঙ্গে জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) সঙ্গে হয়েছে সুতরাং চুক্তির বিরোধিতা করা মানে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ-এমন বলেছে আমাকে।’ মাইকেল চাকমা আরও বলেন, ‘আমি কী গ্রহণ করব না করব এর অধিকার আছে। মূলত শেখ হাসিনা খুন, গুম করে মানুষের প্রতিবাদ-প্রতিরোধ ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য, আজীবন ক্ষমতায় থাকার জন্য এগুলো করেছেন।’ তবে কারা গুম করেছিল, তাদের পরিচয়, চেহারা জানতে পারেননি। প্রশ্ন করাও বারণ ছিল বলে জানান তিনি।

গুম করার ঘটনা বর্ণনা করে মাইকেল চাকমা বলেন, ঢাকার কল্যাণপুরে একটা জায়গায় গিয়েছিলেন। সেখানে পেছন থেকে একজন তার নাম ধরে ডাকেন। তিনি তাকাতেই কয়েকজন মিলে তার জামার কলার, কোমরের বেল্ট ও হাত ধরে ফেলেন। তাৎক্ষণিক একজন মুঠোফোনে গাড়ি ডাকেন। দ্রুত গাড়ি চলে আসে এবং তাকে ওই গাড়িতে (মাইক্রোবাসে) তোলা হয়।

গাড়িতে তুলেই হাতে হাতকড়া এবং চোখ কালো কাপড়ে বাঁধা হয় জানিয়ে মাইকেল বলেন, চোখ বাঁধার আগে চালকের পাশের আসনে একটি ওয়াকিটকি তিনি দেখেছিলেন। পেছনের আসনে কয়েকটি বাটন মোবাইলও দেখেন। পরে ঘণ্টাখানেক যাত্রা করে তাকে একটি স্থানে নেওয়া হয়। সেখানে এক রাত রেখে আরেক জায়গায় নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি ৫ বছর ৩ মাস ২৭ দিন ছিলেন বলেও জানান।

মাইকেল চাকমা আরও বলেন, শেখ হাসিনা ২০১৩ সালে খাগড়াছড়িতে একটি নির্বাচনি সমাবেশে গিয়েছিলেন। সেদিন তাদের ছাত্র সংগঠনের একটি অবরোধ ছিল। সমাবেশ ২টায় শুরুর কথা থাকলেও অবরোধের কারণে ২ ঘণ্টা দেরিতে বিকাল ৪টার দিকে শুরু হয়। সেই সমাবেশের বক্তব্যে শেখ হাসিনা অবরোধ পালনকারীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

মাইকেল চাকমার মৌখিক অভিযোগ নেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, গোপন কারাগার, যেটা বহুল আলোচিত গোপন বন্দিশালায় মাইকেলকে আটক রাখা হয়েছিল। তাকে যে গুম করা হয়, সেই গুমের ধরন, তাকে যেভাবে রাখা হয়েছিল সেসব তিনি মৌখিক আকারে জানিয়েছেন। উনার বক্তব্য থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, গত সরকারের আমলে পদ্ধতিগতভাবে যে গুম করা হতো, এর শিকার তিনি হয়েছিলেন। একই বক্তব্য তিনি গুম কমিশনের কাছেও দিয়েছেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, যেহেতু এটা আন্তর্জাতিক আইনে একটি অপরাধ। সেই অপরাধের বিচার চাইতে তিনি এখানে এসেছেন। সবকিছু মিলে তার মৌখিক অভিযোগ আমলে নিচ্ছি। এসব বিষয়ে তারা তদন্ত করবেন এবং বিচারের জন্য আদালতের কাছে উপস্থাপন করবেন। তিনি আরও বলেন, আজকে তিনি কোনো লিখিত বক্তব্য নিয়ে আসেননি। মৌখিকভাবে যেটা দিয়েছেন সেটাই আমরা আমলে গ্রহণ করছি। কয়েক দিনের মধ্যে গুছিয়ে লিখে বিস্তারিত তথ্য দেবেন। ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কাছে তিনি মৌখিকভাবে যে অভিযোগ করেছেন সেটাই আমলে নিচ্ছি। সেটাকে সূত্র ধরেই আমাদের তদন্ত শুরু করা হবে।

মাইকেল যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, তাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধেই মামলা চলমান রয়েছে। তবে অতিরিক্ত কারও সন্ধান পেলে তদন্ত করা হবে। দেশের সব গুমের মূলত একটা সূত্র ধরেই তদন্ত করা হচ্ছে। প্রয়োজনে পৃথকভাবে তদন্ত করা হবে বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল সাংগঠনিক কাজ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে মাইকেল চাকমা গুমের শিকার হন। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরাও উদ্বেগ প্রকাশ করে মাইকেল চাকমার সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন।

পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের ও মাইকেলের সন্ধান চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করা হলেও তাকে উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিগত সরকার। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দীর্ঘ ৫ বছর ৩ মাস পরে ৭ আগস্ট অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পান মাইকেল চাকমা। ওইদিন ভোরের দিকে চট্টগ্রামের একটি স্থানে তাকে চোখ বাঁধা অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম