মার্কিন প্রতিবেদন
বিরোধিতাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ বলে চালিয়েছে আ.লীগ
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি: সংগৃহীত
২০২৩ সালে বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেনি। তবে ওই সময়ের রাজনৈতিক বিরোধিতাকে ‘সন্ত্রাসবাদ’ হিসাবে চিহ্নিত করেছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। সর্বশেষ ৫ আগস্টের আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনকেও সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তকমা দেওয়া হয়। ওই সময় নিরাপত্তা বাহিনীর কিছু সংস্থার বিরুদ্ধে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (স্টেট ডিপার্টমেন্ট) ‘কান্ট্রি রিপোর্টস অন টেরোরিজম ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বাংলাদেশ অংশে বলা হয়-২০২৩ সালে বাংলাদেশে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা ঘটেনি। তবে তৎকালীন সরকার সন্ত্রাসবাদের নামে বিরোধীদলীয় অনেক রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। গত সরকারের আমলে বেশ কিছু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনের বিষয়টিও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। বিশেষ করে আল-কায়দা, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম (আনসার আল-ইসলাম নামেও পরিচিত) ও আইএসআইএস সংশ্লিষ্ট নিউ-জামায়াত-উল-মুজাহিদিন বাংলাদেশ’র (নব্য-জেএমবি) সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়। মার্কিন সরকারের কাছে প্রশিক্ষিত বাংলাদেশ পুলিশ ইউনিট সন্দেহভাজন একাধিক সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মে মাসে জাতিগত বিচ্ছিন্নতাবাদী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) হামলায় বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য জেলা চট্টগ্রামে দুই সেনা নিহত হন। মার্চে একই ধরনের হামলায় আরেক সেনা নিহত হন। এছাড়া কেএনএফের বিরুদ্ধে নতুন আল-কায়দা থেকে অনুপ্রাণিত গ্রুপ জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়াকে (জেএএইচএস) প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। ওই সময় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৩ সালের শুরুর দিকে তারা এ সংগঠনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে আনে। সংগঠনটির কথিত আমিরকে জুলাইয়ে গ্রেফতার করা হয়। এতে সংগঠনটির কার্যক্রম অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। ২০২৩ সালে জেএএইচএস কোনো হামলার ঘটনা ঘটায়নি। তবে গোষ্ঠীটির দুই শীর্ষ নেতা মইনুল হাসান শামীম এবং আবু সিদ্দিকী সোহেল ২০১৫ সালে বাংলাদেশের প্রকাশক ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন।
প্রতিবেদনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করে সাইবার নিরাপত্তা আইন নামকরণ করা হয়। অনলাইনে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনটি সংশোধন করা হলেও এর দ্বারা মূলত নাগরিকের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ এবং গ্রেফতারের অনুমতি দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়-২০২৩ সালেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড অব্যাহত রেখেছিল। এছাড়া রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে সন্ত্রাসবাদী আইনের আওয়তায় অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে, যাদের উল্লেখযোগ্য অংশই সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। এতে বলা হয়, ২০২৩ সালে সন্ত্রাসী তৎপরতার অভিযোগে ১৬৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ দমনের যে লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে-তাতে বাংলাদেশের পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ সক্রিয়ভাবে সাড়া দিয়েছে। আগের বছরগুলোর মতো ২০২৩ সালেও বাংলাদেশের পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের সাহায্য-সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র হিসাবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নিরাপত্তা সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণে যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করেছে। এছাড়া বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আদালতগুলোর বিচারকদের যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সঙ্গেও বাংলাদেশ নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছে। একই সঙ্গে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা উন্নয়নেও সহায়তা দিয়েছে।