ভোটার তালিকা হালনাগাদ
আগামী বছর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে আগামী বছর ২ মার্চের পর থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের তথ্য সংগ্রহ করবে। ওই বছরের ২ মার্চ হালনাগাদ চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি।
তবে এর আগে চলতি বছরের হালনাগাদ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে আগামী ২ মার্চ।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন গঠনের পর এটাই প্রথম বৈঠক। এতে চার কমিশনার, ইসি সচিব শফিউল আজিমসহ ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বৈঠকের শুরুতে কুরআন তেলাওয়াত করা হয়। বৈঠকে সিইসি কর্মকর্তাদের বেশ কিছু নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার যন্ত্রপাতি ও ফরম মুদ্রণে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রমে অনিয়ম পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আরও জানা গেছে, সভায় ইসি সচিবালয় ১৮ বছরের কম বয়সিদের আগাম তথ্য সংগ্রহের একটি প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়। ওই সময়ে নির্বাচন কমিশনাররা বলেন, হালনাগাদ কার্যক্রম এমনভাবে পরিচালনা করতে হবে যেন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ইসি সময়ক্ষেপণ করছে এমন ধারণা তৈরি না হয়। ইসির কার্যক্রম নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি না হয়, সেদিকে নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন তিনি। সভায় চার কমিশনারের নেতৃত্বে চারটি কমিটি গঠন করা হয়।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, নতুন ভোটার হিসাবে যুক্ত হওয়ার জন্য ইসির কাছে ১৭ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহে রয়েছে। ২০২৫ সালের ২ মার্চ যে চূড়ান্ত হালনাগাদ তালিকা প্রকাশ করা হবে, সেখানে তারা যুক্ত হবেন। এই ১৭ লাখ নাগরিকের মধ্যে ১৩ লাখের তথ্য নির্বাচন কমিশন ২০২২ সালে সংগ্রহ করেছিল। বাকি নাগরিকরা নিজেরা ইসির কার্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধিত হয়েছেন। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী চলতি বছর ৪৫ লাখের মতো নাগরিকের নতুন ভোটার হিসাবে যুক্ত হওয়ার কথা। সে হিসাবে ২৭ থেকে ২৮ লাখ ভোটার হওয়ার যোগ্য নাগরিক এ বছর এখনো ভোটার হিসাবে নিবন্ধিত হননি। এই বাস্তবতায় কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আগামী ২ জানুয়ারি খসড়া প্রকাশের পর শুনানি, দাবি-আপত্তির পর ২ মার্চ চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে। ইসি চায়, যারা বাদ পড়েছেন, তারা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হোক। এজন্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই বাদ পড়া ভোটাররা ছাড়াও ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত তাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তাদের তথ্যও বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা হবে। তিনি জানান, একই সঙ্গে যেসব ভোটার মারা গেছেন, তাদের নাম ভোটার তালিকা থেকে কর্তন করার জন্য তথ্য নেওয়া হবে। এ ছাড়া দ্বৈত ভোটার বা অন্য কোনো জটিলতা আছে কি না, সে বিষয়েও তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করতে ছয় মাসের মতো সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কবে থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবে, তা এখনো ঠিক হয়নি। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয় থেকে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হবে। তবে তারা আশা করছেন, আগামী ২ মার্চের পর এই কাজ শুরু করতে পারবেন।
মো. সানাউল্লাহ বলেন, কমিশন নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখনই কোনো একটি নির্বাচন সামনে আসবে, চেষ্টা থাকবে তফশিল ঘোষণার আগে একটা সময় পর্যন্ত যেন ভোটার হওয়ার যোগ্যদের তালিকাভুক্ত করা যায়। এক প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইসির বৈঠকে নির্বাচন নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।
চার কমিটি গঠন : বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমান মাছউদের নেতৃত্বে আইন ও বিধি সংস্কার কমিটি, বেগম তাহমিদা আহমদের নেতৃত্বে নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকারের নেতৃত্বে সীমানা পুনর্নির্ধারণ, জাতীয় এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন, ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতি ও তদারকি কমিটি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহের নেতৃত্বে জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনা তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগ কমিটি গঠন করা হয়েছে।