Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন

যুক্তরাজ্যে হাসিনাঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ

ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ দিয়েই এসব সম্পত্তি কেনা হয়

Icon

বাসস

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

যুক্তরাজ্যে হাসিনাঘনিষ্ঠদের বিপুল সম্পত্তির খোঁজ

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বলয়ের সাবেক মন্ত্রীসহ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির খোঁজ মিলেছে। দেশটির আবাসন খাতে তাদের লগ্নি করা সম্পত্তির আর্থিক মূল্য ৪০ কোটি পাউন্ড (৬ হাজার কোটি টাকা) বা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

তদন্তকারীদের বিশ্বাস, ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ না করে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করা অর্থ দিয়েই এসব সম্পত্তি কেনা হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক অবজারভার ও বার্লিনভিত্তিক দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের (টিআইবি) যৌথ অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শনিবার যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান এই অনুসন্ধান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে শেখ হাসিনা-ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তির নামে প্রায় ৩৫০টি সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে। অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা এই সম্পত্তির অনেকগুলোর মালিকানায় রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। এর মধ্যে মাঝারিমানের ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সুবিশাল অট্টালিকা (ম্যানশন) পর্যন্ত রয়েছে। যুক্তরাজ্য ও দেশটির বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের (অফশোর কোম্পানি) নামে সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমান বর্তমানে কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সালমানের পরিবারের সদস্যদের লন্ডনের মেফেয়ার এলাকার গ্রোসভেনর স্কয়ারে সাতটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টের মালিকানা বা মালিকানায় অংশীদারত্ব রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা।

এর মধ্যে ২০২২ সালের মার্চ মাসে ২ কোটি ৬৭ লাখ ৫০ হাজার পাউন্ডে একটি অ্যাপার্টমেন্ট কেনেন সালমানের ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান। সেখানে ৩ কোটি ৫৫ লাখ পাউন্ডে কেনা তার একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে। ২০২২ সালে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা লন্ডনে শায়ান রহমানের একটি বাড়িতে বিনা ভাড়ায় থাকতেন বলে খবর বেরিয়েছিল।

গ্রোসভেনর স্কয়ারে এবং এর কাছাকাছি এই পরিবারের আরেক সদস্য আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের ২ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড মূল্যের আরও চারটি সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তি অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে কেনা হয়েছে। এ বিষয়ে শায়ান রহমান ও শাহরিয়ার রহমানের আইনজীবীরা বলেছেন, মানি লন্ডারিং আইনসহ আর্থিক বিধিবিধান পুরোপুরি মেনেই সম্পত্তিগুলো কেনা হয়েছে। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের ভূমি নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের ৩০০টির বেশি সম্পদ রয়েছে। এগুলোর মূল্য অন্তত ১৬ কোটি পাউন্ড।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, রাজনীতিকদের বাইরে বাংলাদেশের ধনী ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদেরও যুক্তরাজ্যে সম্পত্তি রয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাজ্যের সারে এলাকায় বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের সদস্যদের দুটি সম্পত্তি রয়েছে। ১ কোটি ৩০ লাখ পাউন্ড দিয়ে অফশোর কোম্পানির মাধ্যমে এ সম্পত্তি কেনা হয়েছে। এছাড়া অবজারভার এলাকাটিতে পরিদর্শনে গিয়ে আহমেদ আকবর সোবহানের এক ছেলের মালিকানাধীন একটি অট্টালিকারও সন্ধান পেয়েছে। গার্ডিয়ানের সঙ্গে কথা বলেছেন আহমেদ আকবর সোবহানের ছেলে সাফওয়ান সোবহান। তিনি বলেন, আমার পরিবার তাদের বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করছে।

এদিকে সিআইডি নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে। তার সম্পত্তিও জব্দ করা হয়েছে। লন্ডনের কেনসিংটনে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা কীভাবে ৩ কোটি ৮০ লাখ পাউন্ডের পাঁচটি সম্পত্তি কিনেছেন তা খতিয়ে দেখছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে নজরুল ইসলাম মজুমদারের ঘনিষ্ঠ সূত্র তিনি এসব সম্পত্তি অবৈধ উপায়ে কেনার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বলে জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম