Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কা

বুড়িচংয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৭ অটোরিকশাযাত্রী নিহত

এলাকায় শোকের মাতম, দুই তদন্ত কমিটি গঠন

Icon

কুমিল্লা ব্যুরো ও বুড়িচং প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বুড়িচংয়ে অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ৭ অটোরিকশাযাত্রী নিহত

কুমিল্লার বুড়িচংয়ে অরক্ষিত লেভেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ৭ যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও দুজন।

ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনের বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

হতাহতের খবর নিশ্চিত করে বুড়িচং থানার ওসি মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা সুবর্ণা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কালিকাপুর এলাকায় একটি অবৈধ ক্রসিং পার হওয়ার সময় যাত্রীবাহী ব্যাটারিচালিত রিকশাটিকে ধাক্কা দেয়। অটোরিকশায় থাকা ৬ যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও এক যাত্রীর মৃত্যু হয়। নিহতদের দেহ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। অটোরিকশাটি বাকশিমুল থেকে কালিকাপুর বাজারে যাচ্ছিল।

নিহতরা হলেন-বুড়িচং উপজেলার খোদাইতলী গ্রামের রফিজ মিয়া (৪৭), একই গ্রামের ফজলু মিয়ার স্ত্রী হোসনেয়ারা (৪৬), আলী আহাম্মদ (৫৬), বাকশিমুল গ্রামের লুৎফা বেগম (৫৫), সাজু মিয়া (৫২), সফরজান বেগম (৫৫), শাহীনুর বেগম (৩৮)। মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

জানা যায়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ব্যস্ততম রেল সড়কের অবৈধ ক্রসিং পারাপারে ন্যূনতম সতর্কতা অবলম্বন করেনি অটোরিকশাচালক। ক্রসিংটির বৈধতা না থাকায় বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রকার দায় নিতে চাচ্ছে না রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকালে বাকশিমুল থেকে কালিকাপুর বাজার এবং ইউনিয়ন পরিষদে যাচ্ছিলেন অটোরিকশার যাত্রীরা। সকাল সাড়ে দশটার দিকে ওই লেভেলক্রসিংটি পার হচ্ছিল অটোরিকশাটি। এ সময় দ্রুতগতির সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনটির গতিবিধি লক্ষ না করেই রেললাইনের ওপরে উঠে পড়ে অটোরিকশাটি। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পর খোদাইতলী এবং বাকশিমুল গ্রামে চলছে শোকের মাতম। স্বজন হারানোর বেদনায় গোটা এলাকার বাতাস ভারী হয়ে এসেছে।

নিহত শাহীনুর বেগমের স্বামী মনির হোসেন বলেন, আমার স্ত্রী বাজারে যাচ্ছিল। মূলত অটোরিকশা চালকের অসতর্কতা এবং ট্রেন চালকের হর্ন না বাজানোর কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এখন আমরা কাকে দায় দেব? তাই কোনো প্রকার আইনি প্রক্রিয়ায় না গিয়ে লাশ দাফন করেছি।

প্রত্যক্ষদর্শী আবুল হোসেন বলেন, ট্রেনটি দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল। এই ক্রসিংয়ের জায়গায় এসে অধিকাংশ ট্রেন সাইরেন বাজায়। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে সুবর্ণ এক্সপ্রেস ট্রেনের চালক সেখানে কোনো সাইরেন বাজাননি। এতে অটোরিকশাচালক সোজা রেললাইনের ওপরে উঠে পড়ে। আমাদের চোখের সামনেই সাতটি তাজা প্রাণ ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। মুহূর্তের মধ্যেই আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করতেই চারজনের প্রাণ চলে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে বাকি তিনজন মারা যায়।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বলেন, এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। আমরা অনেক বছর যাবৎ এখানে একটি গেটম্যান এবং সুরক্ষিত ব্যারিয়ার নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আমাদের এই দাবিটি আমলে নিচ্ছে না। তাই প্রায়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। বাকশিমুল-কালিকাপুর এলাকারক্রসিংটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। এখানে দ্রুত একটি সুরক্ষিত ক্রসিং নির্মাণ করা দরকার।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িচং উপজেলার বাকশিমুল-কালিকাপুর লেভেলক্রসিংটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসাবে পরিচিত। ওই লেভেলক্রসিংটি দিয়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ এবং শত শত যানবাহন চলাচল করে। রেল কর্তৃপক্ষ ওই ক্রসিংটিতে নিরাপত্তা দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল সড়কের আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৬১টি ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্রসিং অবৈধ। এসব অবৈধ লেভেলক্রসিংয়ের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটিতে গেটম্যান দেওয়া হলেও বাকিগুলো অরক্ষিত রয়ে গেছে। গত তিন বছরে এসব ক্রসিংয়ে ট্রেনে কাটা পড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

তদন্ত কমিটি গঠন : এ ঘটনায় চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এ তথ্য জানিয়েছেন রেলওয়ে কুমিল্লার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মো. লিয়াকত আলী। কুমিল্লা রেলওয়ের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসানকে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। রেলওয়ে কর্মকর্তা (পথ) মো. লিয়াকত আলী বলেন, যেসব অবৈধ লেভেলক্রসিং রয়েছে, সেখানে সতর্কতা অবলম্বন করে ক্রসিং পারাপার হওয়া খুবই জরুরি। সাতজন নিহতের ঘটনায় আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। আমরা ঘটনার নেপথ্যের কারণগুলো খতিয়ে দেখব।

ঘটনাস্থলের পাশে উওরগ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক হাসিবুল বলেন, চোখের সামনে এভাবে আর কত মানুষের মৃত্যু দেখব। তিনি সরকারের কাছে এখানে একটি নিরাপদ ক্রসিংয়ের দাবি জানান। বাকশিমূল উত্তরপাড়ার ধনু মিয়া বলেন, তার পাশের বাড়ির এক ঘরের দুজন নিহত হয়েছে। কবর খুঁড়ে এসেছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের সিনিয়র সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল হাসান।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, কালিকাপুর লেভেলক্রসিংয়ের রাস্তাটি এলজিআরডি আমাদের অনুমতি ছাড়া করেছে। তাই আমরা এখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী ও জনবল নিয়োগ দিতে পারিনি। রেলওয়ে আইন মেনে রাস্তাটি নির্মাণ করলে আজকে এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটত না। এ বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা প্রকৌশলী আলিফ আহমেদ অক্ষর মোবাইল ফোনে বলেন, আমরা রেললাইনের ওপর অংশে কোনো রাস্তা করিনি। রেলপথের নিচ পর্যন্ত করেছি। ওপর অংশে রাস্তা নির্মাণ করলে অবশ্যই এনওসি নিয়েই করব।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম