Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ডিইউজের বার্ষিক সাধারণ সভায় তারেক রহমান

গণতন্ত্রের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র শুরু

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

গণতন্ত্রের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে ষড়যন্ত্র শুরু

গণতন্ত্রের যাত্রা বাধাগ্রস্ত করতে নানা ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে মন্তব্য করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী স্বৈরাচারের পলায়নের পর জনগণের বিশাল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যাত্রা শুরু করে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে বিতাড়িত স্বৈরাচার ও তাদের দোসররা নানা কৌশলে ফের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। অপশক্তি দেশ ও দেশের বাইরে থেকে গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা সতর্ক থাকলে দেশের পক্ষের শক্তির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি থাকবে না বলে বিশ্বাস করি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘সংস্কার কার্যক্রম নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো বিরোধ নেই। সংস্কার আগে নাকি নির্বাচন আগে-যারা এ ধরনের প্রশ্ন তুলে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত, তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কার্যক্রম শেষ করার মতো কোনো বিষয় নয়।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে শোকপ্রস্তাব এবং সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়।

সংস্কার প্রসঙ্গে তারেক রহমান আরও বলেন, ‘একজন সংস্কার কার্যক্রম শুরু করলে আরেকজন সেই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যায়। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সরকারে কিংবা সরকারের বাইরে আমাদের প্রত্যেকের মনে রাখা দরকার-গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতির গুণগত উত্তরণ ছাড়া পুথিগত সংস্কার অনেকটাই অকার্যকর। সংস্কার কার্যকর করতে চাইলে সবার আগে জনগণের নিত্যদিনের দুর্দশা লাঘবের ব্যবস্থা করা দরকার। এটি নিশ্চিত করা না গেলে সংস্কার কার্যক্রমের কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যাবে না।’

সংস্কারের পাশাপাশি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দিয়ে জনপ্রতিনিধিত্বশীল একটি সরকার গঠন গুরুত্বপূর্ণ বলে আমরা মনে করি। বিএনপি মনে করে, সংস্কার কাজের পাশাপাশি একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান অবশ্যই প্রয়োজন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘একটি নির্বাচনের জন্যই গণ-অভ্যুত্থান হয়নি। এটি যেমন একধরনের বাস্তবতা, অপরদিকে আরেকটি বাস্তবতা ছিল-নির্বাচন ছাড়াই বারবার সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে পলাতক স্বৈরাচার দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করতে সক্ষম হয়েছিল। জনগণকে তাদের অধিকার থেকে করা হয়েছিল বঞ্চিত। এ কারণে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চর্চায় জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই নির্বাচন অবশ্যই একটি মুখ্য বিষয়।’ এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানকে শুধু রাজনৈতিক দলের ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য হিসাবে বিবেচনায় নিয়ে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করলে সেটি কোনো বাস্তবসম্মত রাজনৈতিক চিন্তা হবে না। একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তার রাজনৈতিক অধিকার চর্চার সুযোগ পায়। একই সঙ্গে ভোটের অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে রাষ্ট্রের মালিকানার সম্পর্ক তৈরি হয়। স্বৈরাচারের কবল থেকে সরকার ও জনগণকে মুক্ত রাখতে হলে অবশ্যই নাগরিককে রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতাশালী রাখা অত্যন্ত জরুরি।’

বিএনপিসহ বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুম-হত্যা-নির্যাতনের কথা তুলে ধরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘শহিদদের আকাঙ্ক্ষা-একটি গণতান্ত্রিক মানবিক বৈষম্যহীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তাদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করা আমাদের দায়িত্ব। একই সঙ্গে পলাতক স্বৈরাচার ও তার দোসররা যাতে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হতে না পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করাও আমাদের কর্তব্য। এজন্য যথাযথ আইনগত ও রাজনৈতিক পদক্ষেপ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। পলাতক মাফিয়াদের পুনর্বাসন ঠেকাতে তাদের একদিকে আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা প্রয়োজন। অপরদিকে তাদেরকে অবশ্যই জনগণের রাজনৈতিক বিচারের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পরিস্থিতিতে ফেলতে হবে। যদি এ দুইয়ের সমন্বয় ঘটাতে পারি, তবেই গণবিরোধী বিতাড়িত অপশক্তি বাংলাদেশে রাজনীতিতে আর মাথা তুলে দাঁড়াতে সক্ষম হবে না বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তারেক রহমান বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া তরুণ প্রজন্ম দেখিয়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও স্বাধীনতা একসঙ্গে যায় না। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের আগের স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ এবং ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে দেড় দশকের চিত্র তার নজির বহন করে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আর গণতন্ত্র একে অপরের শত্রু। অপরদিকে বিএনপির কাছে গণতন্ত্র বা ব্যক্তিস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিরাপদ। আমরা এমন রাষ্ট্র চাই, যেখানে নিশ্চিতভাবে বাক্স্বাধীনতা থাকবে। আমরা এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে কাজ করছি, সেখানে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের ব্যাপারে রাষ্ট্র উদাসীন থাকবে না। নিশ্চিত থাকবে মানুষের বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা।

তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র, সরকার ও রাজনীতি বিদ্যমান অবস্থা-ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে ২০২২ সালে বিএনপি প্রথম ২৭ দফা সংস্কার উপস্থাপন করেছিল। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পক্ষে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে। বিএনপির উপস্থাপিত সংস্কার প্রস্তাবে গণমাধ্যমে স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুপ্রিমকোর্টের সাবেক বিচারপতি ও অভিজ্ঞ মিডিয়া ব্যক্তিদের নিয়ে একটি মিডিয়া কমিশনের কথা বলা হয়েছে। ফ্যাসিবাদী আমলে চাকরিচ্যুত সাংবাদিকদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন সংবাদপত্রের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ‘স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে’ সম্মেলন অনুষ্ঠান হচ্ছে উল্লেখ করে তারেক রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রয়াত সভাপতি রুহুল আমিন গাজীসহ অভ্যুত্থানে নিহতের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের বিদাহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।

বাংলাদেশ জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনারা সংস্কারে অনেক কমিটি গঠন করেছেন, অনেক পদক্ষেপ নিয়েছেন। সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। আপনারা তখন সংস্কার বাস্তবায়ন করবেন। কিন্তু হঠাৎ করে সার্চ কমিটি গঠন করা হলো। সেখানে কি জন-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন হয়েছে? নির্বাচন সংস্কার কমিশনের রিপোর্ট আসার আগেই একটি সার্চ কমিটি গঠন করলেন। আমরা সেটাকেও ইতিবাচকভাবে দেখছি। কিন্তু আপনারা তো আওয়ামী লীগের রেখে যাওয়া পদ্ধতি দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করলেন।’ জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘রক্তের দায় শোধের জন্য আমাদের একটা জাতীয় ঐক্য দরকার, যার ভিত্তি হবে ৫ আগস্টের বিপ্লবের চেতনা। সব দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে, ৫ আগস্টের ব্যাপারে তো মতপার্থক্য ছিল না। আমাদের সোনার ছেলেরা রক্ত দিয়েছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে আসছে, এখানেও সবার মধ্যে চিন্তার এমন ঐক্য থাকতে হবে যেন সেই ঐক্যের মাধ্যমে আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে রাজনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দিতে পারি।’ বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদ-নাৎসিবাদের প্রথম টার্গেট হচ্ছে গণমাধ্যম ও সাংবাদিক। অনেক সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করেছে। অনেক পত্রিকা-টেলিভিশন বন্ধ করে দিয়েছে। আর এগুলো বন্ধ করেছে যাতে তারা (আওয়ামী লীগ) অন্যায়-অবিচার-দুর্নীতি-বিদেশে টাকা পাচার করলে তাদের তথ্য ফাঁস না হয়। প্রতিটি সেক্টরে, প্রতিটি জায়গায় শেখ হাসিনার লুটপাটের গুপ্তধন আছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি ঠিকমতো ড্রাইভ দিতে পারে, তাহলে এ গুপ্তধনের সন্ধান আমরা পাব। শেখ হাসিনার গুপ্তধনের সন্ধান দেশের জনগণ জানতে পারবে।

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজের সভাপতি শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাংবাদিক নেতা দিদারুল আলম ও সাঈদ খানের যৌথ সম্পাদনায় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্মমহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম আবদুল্লাহ, বর্তমান মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, ইউনিয়নের সাবেক নেতা এমএ আজিজ, আবদুল হাই শিকদার, এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, বারেক হোসাইন, জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, ডিইউজের সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, সহসভাপতি রাশেদুল হক প্রমুখ। এছাড়াও ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ড. আসাদুজ্জামান রিপন, অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার, অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট আবদুল সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, ইথুন বাবুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম