মানুষের সমর্থন ও বহির্বিশ্বের সহযোগিতার আশ্বাস
নির্বাচন ও সংস্কারের চাপ বাড়ছে
সংস্কারে গুরুত্ব বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের * বিএনপি বলছে, সব সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারের হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই * বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ও সংস্কারের মধ্যে যৌক্তিক ভারসাম্য জরুরি
আকাঙ্ক্ষা ছিল এমন একটি দিনের; কিন্তু তা ছিল স্বপ্ন থেকেও বহুদূরে। ২০২৪ সালের ৮ আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে দখল করে নেয় শক্তিশালী অবস্থান। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু। বহুমুখী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে এ যাত্রার ১০০ দিন পার হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটি দৃশ্যমান আবার কোনোটি অদৃশ্য চ্যালেঞ্জ। তবে সম্ভাবনাও ছিল বিশাল। প্রথমত, দেশের মানুষের নজিরবিহীন সমর্থন এবং দ্বিতীয়ত, উন্নয়ন সহযোগীসহ বহির্বিশ্বের সমর্থন ও স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতার আশ্বাস। কিন্তু আলোচ্য সময়ে সম্ভাবনার সবটুকু কাজে লাগানো যায়নি।
সামনে দ্বিমুখী চ্যালেঞ্জ-রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচন। বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী ও নাগরিক সমাজ চায়-কোনো সরকার যাতে ভবিষ্যতে দানবে রূপ না নেয়, এজন্য রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভিন্নমত রয়েছে। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি মনে করে, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার, অন্তর্বর্তী সরকারের সেটুকু করা উচিত। বাকিটা নির্বাচিত সরকার করবে। কারণ, বড় সংস্কারের বৈধতা দিতে সংসদ জরুরি। এক্ষেত্রে জামায়াতসহ অন্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান আরেকটু ভিন্ন। তারা সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দিতে চায়। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচন ও সংস্কার-এ দুই দাবির মধ্যে যৌক্তিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। ছাত্র-জনতার ১ মাস ৪ দিনের আন্দোলনে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তিনদিন পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যাত্রা শুরু। তখন পুরো দেশ ছিল অগোছাল ও বিচ্ছিন্ন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যত দ্রুত হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে, সেটি গ্রহণ করার প্রস্তুতি কারও ছিল না। ফলে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জ নিয়ে পথচলা শুরু করে এ সরকার। সাদা চোখে ১০০ দিনে তেমন বড় অর্জন হয়তো নেই। তবে সম্ভাবনা বিশাল। আশার কথা হলো-ইতোমধ্যে কিছুটা গুছিয়ে উঠতে শুরু করেছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত উপদেষ্টা পরিষদের ১২টি বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে ৫৬টি। এর মধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৯টি। এছাড়া দুটি নীতিমালা ও ৮টি চুক্তি অনুমোদন এবং ১০টি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে।
বুধবার একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সংস্কার ও নির্বাচন একই সঙ্গে দুটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে গণতান্ত্রিক ভোটের দিকে এগিয়ে নেবে। তবে নির্বাচন কবে হবে, তা সংস্কারের ওপর নির্ভর করবে। তার মতে, ‘যত দ্রুত প্রস্তুত হব, তত দ্রুতই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন।’ জানতে চাইলে দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, যারা দ্রুত নির্বাচনের দাবি করছেন, তাদের পক্ষ থেকে এ দাবির যৌক্তিক ভিত্তি আছে। অবশ্যই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। অন্যদিকে ছাত্র-জনতার গড়া আন্দোলনের মূল অভীষ্ট ছিল কর্তৃত্ববাদের পতন এবং রাষ্ট্র সংস্কার। ইতোমধ্যে কর্তৃত্ববাদের পতন হয়েছে। কিন্তু এর মানে এ নয়-আন্দোলনের অন্যতম মূল স্লোগান, বাস্তবভিত্তিক দাবি এবং মানুষের প্রত্যাশা রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি বাস্তবায়ন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কারসংক্রান্ত জনগণের সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ন্যস্ত আছে। ফলে নির্বাচন ও সংস্কার-এ দুটির মধ্যে যৌক্তিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের মেয়াদে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে একটি আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো সুদৃঢ়ভাবে তৈরি করতে হবে। এমন পরিবেশ তৈরি করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। এটি না হলে সংস্কারসংক্রান্ত সরকারি অঙ্গীকারের ব্যত্যয় হবে। তার মতে, সংস্কারের এ সুযোগ জাতির জীবনে দ্বিতীয়বার আসবে না। পাশাপাশি যারা নির্বাচনে জয়ী হবেন বা যারা ক্ষমতায় যাবেন বলে মনে করছেন, তাদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল চেতনা ধারণ করতে হবে।
বিএনপি : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মনে করেন, সব সংস্কার কাজে অন্তর্বর্তী সরকারের হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সংসদ বাকি সংস্কার সম্পূর্ণ করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো রোডম্যাপ দেয়নি। আমরা চাই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনব্যবস্থাকে উপযোগী করার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য সংস্কার প্রয়োজন।
জামায়াত : সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে আগে রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা যৌক্তিক সময় দিতে চান। তিনি বলেন, এ সময় দেওয়া মানে বছরের পর বছর যেমন নয়, আবার সংস্কার বাদ দিয়ে নির্বাচন হলেও তা সুষ্ঠু হবে না।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী : এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এক অনুষ্ঠানে বলেন, সবকিছু সংস্কার না করে নির্বাচন হলে আগের জায়গায়ই থেকে যাব। তার মতে, ‘শুধু নির্বাচনের জন্য জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে ২ হাজার মানুষ জীবন দেয়নি। অর্ধলক্ষ মানুষ রক্ত দেয়নি আর অভ্যুত্থানও হয়নি। ১৬ বছরে দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর জন্য মানুষের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। তাই পুরো দেশের ছাত্র-জনতা ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নেমেছিল বলে অভ্যুত্থান ঘটেছিল, শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়েছিলেন। অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এই দেশের ছাত্র-জনতার সরকার। সাধারণ মানুষের সরকার। তিনি বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করতে হবে। একটি যৌক্তিক সময়ে সংস্কার শেষ করেই নির্বাচন দিতে হবে।’
বিশ্লেষকদের মতে, গত ১০০ দিনে যেসব চ্যালেঞ্জ ছিল, এগুলো হলো আইনি জটিলতা, আস্থা ফেরানো, আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, ভঙ্গুর অর্থনীতি দাঁড় করানো, রাজনীতি চলমান রাখা এবং বৈদেশিক সম্পর্ক রক্ষা। কয়েকটি ক্ষেত্রে সফলতা আছে। ব্যাপক সংস্কারের আকাঙ্খায় ১০টি কমিশন গঠনসহ বেশকিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। এ খাতের উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, ‘রাজনীতি নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে অর্থনীতির অবস্থা ভালো না। বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক তাদের পূর্বাভাসে চলতি বছরের জন্য বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে। তারা বলছে, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৪ শতাংশ হতে পারে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। রপ্তানি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের অবস্থা ভালো নয়। তবে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়ছে। এটি কতদিন থাকে, সেটি দেখার বিষয়। তিনি বলেন, আগামী দিনে পরিস্থিতি কেমন হবে, সেটি বলা কঠিন। এটি আরও কিছুদিন পর বোঝা যাবে।
সংস্কার কমিশন গঠন : হাসিনা সরকারের পতনের ১ মাস ৬ দিন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ১ মাস ৩ দিনের মাথায় ১১ সেপ্টেম্বর জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বহুল আলোচিত ৬টি খাত সংস্কারে সুনির্দিষ্ট কমিশনের ঘোষণা দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী তিন মাস অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সুপারিশ জমা দেবে ৬টি কমিশন। এরপর ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করবে সরকার। চূড়ান্ত পর্যায়ে শিক্ষার্থী, নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি নিয়ে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী একটি পরামর্শসভার ভিত্তিতে সংস্কার ভাবনার রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে। সেখানে এ রূপরেখা কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, এর একটি ধারণাও দেওয়া থাকবে। সংস্কারের রূপরেখা চূড়ান্ত হলে সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হবে। এছাড়াও আরও ৪টি কমিশন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো স্বাস্থ্য সংস্কার, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকার এবং নারীবিষয়ক কমিশন।
দুর্নীতি শনাক্তে শ্বেতপত্র কমিটি : ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন খাতে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা মূল্যায়ন করে রিপোর্ট তৈরির জন্য শ্বেতপত্র প্রস্তুত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এছাড়াও কমিটিতে আরও ১১ সদস্য রয়েছেন। কমিটি তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই অস্বাভাবিক ছিল। এ সময়ে টানা এক সপ্তাহ কর্মবিরতি পালন করেছে পুলিশ। ফলে ট্রাফিকব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসেন। থানাগুলোয় পুলিশ না থাকায় দেশব্যাপী ডাকাতের আতঙ্ক ছিল। এ সময় পাড়া-মহল্লায় মানুষ রাত জেগে পাহারা দিয়েছে। তবে এক সপ্তাহ পর কাজে ফিরেছে পুলিশ। বিভিন্ন স্থানে সরকারি স্থাপনা ও শিল্পকারখানা আক্রান্ত হয়। পরিস্থিতি উন্নয়নে সেনাবাহিনীকে বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে মাঠে নামানো হয়।
অর্থনীতি : বিগত সরকারের আমলে সবচেয়ে আস্থাহীনতা ছিল অর্থনীতির বিভিন্ন পরিসংখ্যানে। অর্থনীতির অবস্থা ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হলেও বিভিন্ন সূচকের বাস্তব পরিস্থিতি ছিল দুর্বল। এর মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প, রপ্তানি আয়-সবকিছুই ছিল মিথ্যা তথ্যে ভরপুর। এ পরিসংখ্যান নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক প্রশ্ন তৈরি হয়। কিন্তু এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা মেলেনি। এছাড়াও সীমাহীন অর্থ পাচার, খেলাপি ঋণ এবং ঘুস-দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছিল। ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে বেপরোয়া লুটপাট হয়েছে। এসব তথ্য প্রচারে গণমাধ্যমে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গণমাধ্যমে এ তথ্য প্রকাশে বাধা সৃষ্টি করত। তবে ৫ আগস্টের পর অর্থনীতির সঠিক তথ্য বের হয়ে আসছে। যদিও বেশির ভাগ সূচক নেতিবাচক। তবে দু-একটি সূচক ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। তলানিতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বাড়তে শুরু করেছে।
পাচারের টাকা ফেরানোর উদ্যোগ : অর্থনীতির অন্যতম সমস্যা ছিল দেশ থেকে অর্থ পাচার। দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা টিআইবি বলেছে, ১৫ বছরে গড়ে প্রতিবছর দেশ থেকে ১২ থেকে ১৫ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, শুধু ব্যাংকিং খাত থেকেই শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠরা ১৭ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে পাচার করা টাকা ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) বিভিন্ন সংস্থার সহায়তা চাওয়া হয়েছে। দ্বিপাক্ষিকভাবেও অনেক দেশের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে।
গণহত্যার বিচারে ট্রাইব্যুনাল : বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণ-আন্দোলনের সময় গণহত্যা চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এ গণহত্যার বিচারের বিষয়টি সামনে এসেছে। এর বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অপরাধ তদন্তে প্রসিকিউশনের আবেদনে ইতোমধ্যে শেখ হাসিনাসহ জড়িতদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ১৮ নভেম্বর আদালতের পরবর্তী শুনানি।
প্রসঙ্গত, ১৫ বছরে দেশে ফ্যাসিবাদ, চরম মিথ্যাচার, একদলীয় শাসন, দুর্নীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক, শেয়ারবাজারসহ সব খাতে লুটপাট হয়েছে। এ অবস্থা থেকে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন শেষ পর্যন্ত গণ-অভ্যুত্থানে রূপ নেয়। ইতিহাসের পাতায় রক্তে লেখা হয় ৫ আগস্ট। ওইদিন রক্তের সাগরে ভেসে যায় ১৫ বছরের স্বৈরাচার। পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। বিশ্ব দেখে এক নতুন বাংলাদেশ। দেড় হাজার ছাত্র-জনতার জীবন বিসর্জন, অসংখ্য মানুষের পঙ্গুত্ব এবং ৩৫ হাজারের বেশি আহতের বিনিময়ে ফ্যাসিবাদী শাসনমুক্ত হয় বাংলাদেশ। ড. ইউনূসের ভাষায় এটি দ্বিতীয় স্বাধীনতা।