বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
বাঁচানো গেল না গুলিবিদ্ধ কলেজছাত্র আবদুল্লাহকে
ঢাকায় দুই জানাজা অনুষ্ঠিত দাফন হবে বেনাপোলে * গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সান্ত্বনা জানালেন উপদেষ্টা সাখাওয়াত
যুগান্তর প্রতিবেদন ও বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে কপালে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন মো. আবদুল্লাহ মারা গেছেন। তিনি ঢাকার সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাড়ি যশোরের বেনাপোলে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন আব্দুল্লাহ। ৫ আগস্ট রাজধানীর বংশাল থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি। সিএমএইচের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে মারা যান তিনি। এদিন সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আব্দুল্লাহর দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও তার পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ প্রাঙ্গণে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে খবর পাওয়ার পর আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান নৌপরিবহণ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বৃহস্পতিবার বেনাপোল স্থলবন্দরে নির্মিত কার্গো ভেহিক্যাল টার্মিনাল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবর পান। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রামে আব্দুল্লাহর বাড়িতে যান। এ সময় আব্দুল্লাহর মামা ইসরাইল সর্দার ও বড় দুই ভাই উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলেন। তাদের সান্ত্বনা দেন উপদেষ্টা। সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। আব্দুল্লাহকে যেখানে দাফন করা হবে, সেই কবরস্থানও ঘুরে দেখেন তিনি।
জানাজায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা : জানাজায় অংশ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে আমার ভাই আব্দুল্লাহ জীবন দিয়েছেন। যতদিন ফ্যাসিস্টরা এই দেশ থেকে উচ্ছেদ না হচ্ছে, ততদিন আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব। আমরা এ সরকারকে বলতে চাই-জালিমের প্রতি উদারতা মানে শহিদদের সঙ্গে বেইমানি করা। তিনি বলেন, আজ বিদেশে বসে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের বলা হয় ফাঁসি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। এর আগেই নাকি শেষ করে দেওয়া হবে। আমরা বলতে চাই, যতদিন ফ্যাসিস্টদের মূল এই দেশ থেকে উচ্ছেদ না হবে, ততদিন আমরা রাজপথে থাকব।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে ৫ আগস্ট রাজধানীর বংশাল থানা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। তার কপালের ঠিক মাঝ বরাবর গুলি লাগে। এমন অবস্থায় প্রায় তিন ঘণ্টা রাস্তায় পড়েছিলেন তিনি। রাত ৩টায় সার্জারি শুরু হয়ে চলে ভোর ৬টা পর্যন্ত। অপারেশন সফল হলে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান আব্দুল্লাহ। কিছুদিন পরই প্রচণ্ড মাথাব্যথা শুরু হয়। এরপর আবার তাকে ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকরা তার মাথায় ইনফেকশন দেখতে পান। আবার সার্জারি করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু তেমন উন্নতি না হওয়ায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সহায়তায় তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। কিছুদিন পরই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। অবশেষে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মারা যান আব্দুল্লাহ।