Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: সেনাসদর

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার: সেনাসদর

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী কতদিন মাঠে থাকবে, অন্তর্বর্তী সরকারই তা নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছে সেনাসদর। ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বাহিনীর অবস্থান তুলে ধরেন।

বনানী স্টাফ রোডের মেসে এ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে। সেনাবাহিনী মোতায়েন হয়েছে সরকারের সিদ্ধান্তে। সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে সেনাবাহিনী কতদিন মোতায়েন থাকা প্রয়োজন। গত জুলাইয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সহিংস রূপ পেলে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনী মোতায়েনের পাশাপাশি কারফিউ জারি করা হয়।

৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর সেনাবাহিনী আর ব্যারাকে ফিরে যায়নি। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যা বুধবার রাতে শেষ হয়। এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘন বা বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধে সেনাবাহিনী ‘অত্যন্ত সচেতন’। এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থেকে নির্দিষ্ট আদেশ রয়েছে, সেনাবাহিনী যে কোনো পরিস্থিতিতে তা প্রতিরোধ করবে। তিনি বলেন, অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে, যেগুলো জনসম্মুখে আসে না। ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরে এ পর্যন্ত ছয়শর বেশি আনরেস্ট (অসন্তোষ) হয়েছে। এগুলোর মধ্যে অনেক ভায়ালেন্ট ছিল। অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা নিয়ে এগুলো যদি সময়মতো প্রতিরোধ বা শান্ত করার ব্যবস্থা না করা হতো, তাহলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারত।

সেনা সদস্যরা এক ব্যক্তিকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন-এমন একটি ভিডিওর বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, পরিস্থিতির প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়, তবে সেনাবাহিনী টার্গেট করে কাউকে মেরেছে-এমন কোনো ঘটনা হয়নি।

পুলিশের কাছে অপরাধের যেসব তথ্য থাকে, সেগুলো নিয়েও সেনাবাহিনী কাজ করছে বলে জানান এই সেনা কর্মকর্তা। তিনি দাবি করেন, সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পাওয়ার পর অপরাধের সংখ্যা ‘অনেক কমেছে’। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়নি, তবে যতটুকু আশা করা গেছে সে অনুযায়ী উন্নতি হয়নি। পুলিশবাহিনী ধীরে ধীরে তাদের কার্যক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে। অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।

সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, গুলশানে একজন মেজরের সঙ্গে একজন পুলিশ কর্মকর্তার ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝি থেকে হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক খুবই ভালো। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার জন্যই সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। জনগণের জানমাল, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাসহ সরকারি-বেসরকারি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে রক্ষা করার পাশাপাশি পুলিশবাহিনীকে পুনরায় কার্যক্ষম হতে সহায়তা করে আসছে সেনাবাহিনী। বিদেশি কূটনীতিক, দূতাবাস ও কারখানার নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার কাজটিও সেনাবাহিনী করছে বলে জানান তিনি।

অপরাধ দমন, অপরধীদের গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হচ্ছে জানিয়ে কর্নেল ইন্তেখাব বলেন, ‘এ পর্যন্ত ৬ হাজারের বেশি অস্ত্র, ২ লাখ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী। গ্রেফতার করা হয়েছে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে। দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে ছয়শর বেশি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং কারখানাগুলোকে চালু করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে কাজ করা হচ্ছে।’ তিনি তথ্য দেন, গত দুই মাসে সাতশর বেশি বিভিন্ন ধরনের ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ নিয়ন্ত্রণ করেছে সেনাবাহিনী। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত ঘটনা ছিল ১৪১টি, সরকারি সংস্থা/অফিস সংক্রান্ত ঘটনা ৮৬টি, রাজনৈতিক দলের ঘটনা ছিল ৯৮টি।

ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা যেন ‘সুষ্ঠুভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে’ প্রয়োগ করা হয়, সে বিষয়ে সেনাবাহিনী সতর্ক ছিল বলে জানান কর্নেল ইন্তেখাব। তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের ৬২ জেলায় সেনা সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারকে সহায়তা করছে। বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন সময়ে আহত ৩২৯৫ জনকে দেশের বিভিন্ন সিএমএইচে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪৩ জন চিকিৎসাধীন আছেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম