Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে জাপানি কনসোর্টিয়াম

মুজিব মাসুদ

মুজিব মাসুদ

প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে জাপানি কনসোর্টিয়াম

আগামী ১৫ বছরের জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে জাপান। দেশটির ৬ কোম্পানিকে কনসোর্টিয়াম করে এ দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় ক্যারিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ২ বছরের জন্য কার্গো ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে চিঠির মধ্যমে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুই বছরে বিমান তাদের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হলে এ দুটি হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্বও যাবে বিদেশিদের হাতে। বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ লক্ষ্যে শিগ্গিরই একাধিক চুক্তি সম্পন্ন হবে। থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে প্রাথমিক বিনিয়োগ করবে জাপানের ওই কনসোর্টিয়াম। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে এজন্য নগদ ২ হাজার কোটি টাকা দেবে সংস্থাটি। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, জাপানের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানি সুমিতমো ও নিপ্পন কোয়ে যুগ্মভাবে পাচ্ছে থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব। থার্ড টার্মিনাল অপারেশনে যে লাভ হবে, এর ৫০ শতাংশ বেবিচক এবং ৫০ শতাংশ পাবে পরিচালনাকারী কনসোর্টিয়াম। তবে লাভের একটি অংশ থার্ড টার্মিনালের মেইনটেন্যান্সের জন্য ব্যয় করবে কনসোর্টিয়াম। টার্মিনালের প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করবে জাপানি কোম্পানি। জনবলের ৮০ শতাংশ স্থানীয় এবং ২০ শতাংশ থাকবে জাপানি। এছাড়া থার্ড টার্মিনালের অভ্যন্তরে সব ধরনের দোকানপাট, ব্যসায়িক প্রতিষ্ঠান, লাউঞ্জ, রেস্টুরেন্ট ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দেওয়ার দায়িত্বে থাকবেন জাপানিরা। এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে বিদেশি উন্নতমানের ব্র্যান্ডশপ। বিমানের গ্রাউন্ড ও কার্গো হ্যান্ডলিং পরিচালনার দায়িত্বও থাকবে জাপানি কনসোর্টিয়ামের তত্ত্বাবধানে। বিমানকে এজন্য আরও আধুনিক ও উন্নতমানের যন্ত্রপাতি, গাড়ি ও ইকুইপমেন্ট আমদানি করতে হবে।

সূত্র জানায়, থার্ড টার্মিনালের কার্যক্রম আগামী বছরের শেষে পুরোদমে শুরুর টার্গেট রয়েছে বেবিচকের। এ লক্ষ্যে এ বছরের মধ্যে জাপানি ২টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে। চুক্তি সম্পন্ন হলে তারা লোকবল নিয়োগ শুরু করবে। শাহজালালের থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার জন্য নিরাপত্তার দায়িত্বে ৩ হাজার ৪৯২ জন লোক নিয়োগ দিতে হবে। এছাড়া সব মিলিয়ে ৬ হাজারের অধিক লোকবল লাগবে। তাদের প্রশিক্ষণসহ তাদের পদায়নের জন্য লাগবে ৩ বছর। এজন্য লোকবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরুর পাশাপাশি বেবিচকের প্রশিক্ষিত লোকবল দিয়ে থার্ড টার্মিনালের কাজ চালানো হবে।

বেবিচক সূত্রে জানা যায়, বিমানের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবার বর্তমান মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ কারণে শুরুতে বিমানকে বাদ দিয়ে থার্ড টার্মিনাল পরিচালনার পাশাপাশি গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবাও জাপানি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিমান শুরু থেকেই এ সেবা দেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়ে আসছে। এজন্য বিমান ১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছে। আরও ৮০০ কোটি টাকার গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং মালামাল আনার অপেক্ষায় আছে। ইতোমধ্যে বিমান থার্ড টার্মিনালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং দেওয়ার মতো সক্ষমতা অর্জন করেছে। সবকিছু বিবেচনা করে আপাতত বিমানকে ২ বছরের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা শর্ত পূরণ করতে না পারলে অন্যদের এ দায়িত্ব দেওয়া হবে।

বিমানকে এ দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে ইস্যু করা চিঠিতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ইনভেস্টমেন্ট প্রোমোশন) মো. আলী আজম আল আজাদ বলেন, কনসেশন অ্যাগ্রিমেন্ট ফর টার্মিনাল-৩-এর আওতায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড মূলত থার্ড টার্মিনালের যাত্রী ও কার্গো উভয়ের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস দেবে। এজন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড ও প্রাইভেট সেক্টর পার্টনারের (পিএসপি) মধ্যে একটি সার্ভিস লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) সম্পাদিত হবে।

২৪ অক্টোবর ইস্যু করা চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বিমান এ দুই বছরে পিএসপি (প্রাইভেট সেক্টর পার্টনার) নির্ধারিত কেপিআই পূরণ করতে পারলে তারা গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের চুক্তি নবায়নের সুযোগ পাবে। তবে বিমান যদি কেপিআই পূরণ করতে না পারে, তাহলে পিএসপি বিদেশি স্বনামধন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে বিমানের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব দিতে পারবে। চিঠিতে বলা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত পিপিপি প্রকল্পের আওতায় অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অব থার্ড টার্মিনাল অ্যাট হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (এইচএসআইএ) শীর্ষক প্রকল্পটির অনুমোদন দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. সফিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, ২০২৩ সালে ৫৭ হাজারের বেশি ফ্লাইট হ্যান্ডলিংয়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিমানের জিএসই বিভাগ তৃতীয় টার্মিনালের চাহিদা পূরণে ৬০০ কর্মী এবং ৩৭৬টি মোটরচালিত ও ৪ হাজারটি মোটরবিহীন যন্ত্রপাতি নিয়ে সেবা দিতে প্রস্তুত। এছাড়া ১০৫টি নতুন যন্ত্র ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যে এসব যন্ত্র চলে আসবে। এতে তাদের সেবার মান আরও উন্নত করবে।

থার্ড টার্মিনাল চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া যুগান্তরকে বলেন, আমরা দ্রুত থার্ড টার্মিনাল চালু করতে কাজ করে যাচ্ছি। আগামী বছরের মাঝামাঝিতে থার্ড টার্মিনাল চালু হবে বলে আশা করছি।

২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর একনেকে অনুমোদন পায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্প ফেজ-১। ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রকল্পের প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদিত হয় ২১ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকার। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন স্থপতি রোহানি বাহারিনের করা নকশায় তৃতীয় টার্মিনাল ভবন নির্মাণ হয়েছে।

তৃতীয় টার্মিনাল চালু হলে আরও ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রীকে সেবা দেওয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রথম ও দ্বিতীয় টার্মিনালে দিনে ৩০টিরও বেশি উড়োজাহাজ সংস্থার ১২০ থেকে ১৩০টি বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। প্রতিদিন এসব উড়োজাহাজের প্রায় ২০ হাজার যাত্রী বিমানবন্দরের দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করেন। এ হিসাবে বছরে প্রায় ৮০ লাখ যাত্রীর সেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম