বিতর্কিত উপদেষ্টা প্রসঙ্গে হাসনাত
ছাত্রদের রক্তের ওপর ফ্যাসিবাদ আ.লীগের পুনর্বাসন হচ্ছে
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের দাবি এবং ছাত্র-জনতার সঙ্গে আলোচনা না করে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রতিবাদে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সোমবার আয়োজিত এসব সমাবেশে তারা উপদেষ্টা পরিষদ থেকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের অপসারণ দাবি করেন। যুগান্তর প্রতিবেদন, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
ঢাকা : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছাত্ররা এখনো রাজপথে রয়েছে। আর আপনরা বঙ্গভবনে বসে নতুন উপদেষ্টা নিয়োগ দিচ্ছেন। যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন, তারা ধানমন্ডি-৩২ নম্বরকে কাফেলা মনে করে। কাদের প্রেসক্রিপশনে ছাত্রদের রক্তের ওপর দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করছেন? শিক্ষার্থী ও দেশের মানুষের সঙ্গে এমন মশকরা বন্ধ করুন।
একই দাবিতে এদিন ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ করে একদল শিক্ষার্থী। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, আওয়ামী লীগের দোসরদের উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম অঞ্চল ও এনজিওবাদীদের উপদেষ্টা করে বৈষম্য করা হচ্ছে। বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা নিয়োগ কোন ক্যাটাগরিতে হয়, তাও জানতে চান তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সরকারের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যাদের নিয়োগ দিচ্ছেন, ১৬ বছরে তাদের অবদান কী? এ ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইয়ের ইতিহাস কী? আপনারা যদি তা না জানাতে পারেন, তাহলে শিক্ষার্থীরা আপনাদের ডাকে আর আসবে না।
যারা আওয়ামী লীগের নুন খেয়ে গুণ গেয়েছে, তাদের পুনর্বাসন চলবে না।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, সাধারণ মানুষ নিজেদের তাজা রক্ত ঢেলে ২৪ সালে দেশ স্বাধীন করেছে। কিন্তু তাদের না জানিয়ে, তাদের প্রতিনিধিত্বকে গুরুত্ব না দিয়ে আপনারা কাদের পুনর্বাসনের ম্যান্ডেট নিয়েছেন, তা আমরা জানতে চাই। আমরা এখানে কোনো ছাড় দেব না। আপনরা মশকরা বন্ধ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্য সচিব আরিফ সোহেল বলেন, আমাদের অবহিত না করে ফ্যাসিবাদের দোসরদের উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এভাবে যদি চলতে থাকে, আমাদের নতুন সরকার গঠন করতে বেশি সময় লাগবে না। ২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান রক্ষা করতে আমরা রক্ত দিয়ে মাঠে থাকব। এ বিপ্লব আমরা নষ্ট করতে দেব না, নষ্ট হতে দেব না। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য দেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিতর্কিত উপদেষ্টাদের অপসারণের দাবিতে ফ্যাসিবাদবিরোধী বিপ্লবী ছাত্র-জনতার ব্যানারে এদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আইনজীবী বশিরুদ্দিনের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তৃতা করেন গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব আবু হানিফ, ছাত্রনেতা মাহফুজ আলম, শাকিলুজ্জামান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাজমুল হাসান প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও যশোরের আওয়ামী লীগ নেতা সেখ আফিল উদ্দিনের ভাই সেখ বশির উদ্দিনকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা বানিয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা হয়েছে। অবিলম্বে এ দুই উপদেষ্টাসহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সব দোসরকে বের করে দিতে হবে। অন্যথায় ছাত্র-জনতা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোববার রাতে মিছিল করেছেন। বটতলা এলাকা থেকে মিছিলটি শহিদ সালাম-বরকত হল ঘুরে আবার বটতলায় এসে শেষ হয়। এ সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়ামের সঞ্চালনায় শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। তারা বলেন, যেই মুজিব এবং মুজিববাদকে পুঁজি করে ফ্যাসিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা ও গণহত্যা চালানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিস্ট আদর্শের প্রতি সহানুভূতিশীল কাউকে অভ্যুত্থান-পরবর্তী ছাত্র-জনতার সরকারে অন্তর্ভুক্তি সরাসরি শহিদদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। প্রায় দুই হাজার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা এ সরকারকে ক্ষমতায় বসিয়েছি। আপনারা দেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করার কাজ করবেন। এর বদলে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসরকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে আমরা এর কঠিন জবাব দেব। জাতীয় ঐক্যের এ সময়ে ফ্যাসিবাদপ্রেমী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে উপদেষ্টা ঘোষণা করা হয়েছে। যারা বিগত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের গুণকীর্তন করেছে, তাদের কোনোভাবেই ক্ষমতায় দেখতে চাই না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় : রাজশাহীতে সোমবার বিকালে নগরের তালাইমারি মোড়ে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সমাবেশ থেকে তারা তিনটি দাবি উত্থাপন করেন। এসব দাবির মধ্যে রয়েছে-এককেন্দ্রিকতা বাদ দিয়ে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। এই আন্দোলনের সব অংশীদারকে রাষ্ট্র গঠনে সমানভাবে সুযোগ দিতে হবে। ছাত্র-জনতার মতামত না নিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগের জবাবদিহি করতে হবে। ছাত্র-জনতার অংশগ্রহণ ও ঐকমত্যের ভিত্তিতে ছায়া সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ সময় তারা ‘ঢাকাকেন্দ্রিক রাষ্ট্র গঠন, চলবে না চলবে না’, ‘উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলা, চলছে কেন অবহেলা’, ‘উপদেষ্টায় ওরা কারা, জবাব চায় বিপ্লবীরা’, ‘অপরাজনীতির কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আমার ভাই কবরে, ফারুকী কেন সরকারে’, ‘বশীর কেন সরকারে, আমার ভাই কবরে’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘তেলবাজদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ‘আওয়ামী লীগের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ ইত্যাদি স্লোগান দেন। এ সময় বক্তব্য দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক গোলাম কিবরিয়া মো. মেশকাত চৌধুরী, ফজলে রাব্বি মো. ফাহিম রেজা, ছাত্র আন্দোলনের পৃষ্ঠপোষক ও মানবাধিকারকর্মী রাশেদ রাজন, সমন্বয়ক মাহায়ের ইসলাম ও সালাউদ্দীন আম্মার।
যশোর : সেখ বশির উদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার বিকালে যশোর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে এসে শেষ হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলার সমন্বয়ক রাশেদ খানের নেতৃত্বে প্রেস ক্লাব যশোরের সামনে তারা ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এ সময় বক্তারা বলেন, বশির উদ্দিন সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র হত্যার সঙ্গে জড়িত। তাকে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য করা শহিদ ভাইদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। অবিলম্বে সেখ বশির উদ্দিনকে উপদেষ্টা পদ থেকে অপসারণ চাই। বিক্ষোভ মিছিলে বক্তব্য দেন মারুফ হোসেন সুকর্ন, বিএম আকাশ, সোয়াইব হোসেন, আল মামুন লিখন, নুর ইসলাম প্রমুখ।
জয়পুরহাট : ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির শাইখুল হাদিস, আল্লামা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম কাসেমী শায়েখে চরমোনাই বলেছেন, কোনো নাস্তিককে এ দেশের জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে মেনে নেবে না। সোমবার জয়পুরহাট জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উদ্যোগে শহরের শহিদ ডাক্তার আবুল কাশেম ময়দানে আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মাওলানা আব্দুল ওয়াহদুদ, প্রধান বক্তা ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির আল্লামা আব্দুল হক আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেজ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মিনহাজুল ইসলাম প্রমুখ।
হাটহাজারী : অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে অন্তর্ভুক্ত করায় হতবাক হয়েছেন জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের ঢাকা মহানগর সভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক। সোমবার সংগঠনের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাওলানা আফসার মাহমুদ গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিবৃতিতে তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসাবে চলচ্চিত্র পরিচালক মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীকে অন্তর্ভুক্ত করায় আমরা হতবাক হয়েছি। তিনি শাহবাগি নাস্তিক্যবাদীদের দোসর। দেশের আধ্যাত্মিক রাহবার, হেফাজত আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-কে তেঁতুল হুজুর বলে ব্যঙ্গ করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছে, যা ক্ষমা করা যায় না। তাকে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ দেওয়ায় আমরা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।