দিনভর বিএনপির দখলে ঢাকার রাজপথ
ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বিক্ষোভ মিছিল, নাশকতা প্রতিহতের ঘোষণা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
‘গণহত্যাকারী ও তার দোসরদের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত এবং বিচারের দাবিতে’ রোববার রাজধানীজুড়ে বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। সকাল থেকেই রাজধানীর সব প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে দলটির নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনও অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, তেজগাঁও, তিতুমীর, বাঙলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ও আশপাশের এলাকায় দিনভর নানা কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে। নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা দিলে রোববার ভোর থেকেই ঢাকার রাজপথ দখলে নেয় বিএনপিসহ অঙ্গ সংগঠন। এছাড়াও দলের নির্দেশনা অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণ করেন তারা। পাশাপাশি রাষ্ট্র মেরামতের জন্য ঘোষিত ৩১ দফার জনসচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিতরণ করে বিএনপি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার সব কয়টি প্রবেশপথসহ বায়তুল মোকাররম, হাউজ বিল্ডিং, পল্টন মোড়, মুক্তাঙ্গন, সচিবালয় এলাকা, জিরো পয়েন্ট, গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা মোড়, প্রেসক্লাব, বিজয়নগর, রামপুরা, নিউ মার্কেট, শ্যামলী, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, উত্তরা, বনানী, গুলশান, তেজগাঁও, ফার্মগেট, পল্লবী এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। ক্ষণে ক্ষণে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের বিচারের দাবি জানান। আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ যাতে কোনো প্রকার নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। এদিন সকাল ৮টা থেকে রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়ও ছাত্রদল অবস্থান নেয়। এদিন তাদের বিক্ষোভ মিছিলও করতে দেখা গেছে। ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করার ঘোষণা দেন নেতারা।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক যুগান্তরকে বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার প্রেতাত্মা রয়ে গেছে। তারা নাশতকা সৃষ্টি করতে ঘুরে বেড়াচ্ছে। নানা অপতৎপরতা চালানোর ষড়যন্ত্র করছে। আমরা নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্যই রাজপথে ছিলাম। ঢাকা ও আশপাশের কোথাও যাতে নাশকতা না হয় সেদিকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। ৩১ দফা নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও মোড়ে জনগণের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলীয় নেতাকর্মীদের পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়েছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার পাশাপাশি আমরা পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সরকারকে সহযোগিতা করতে বদ্ধ পরিকর।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন বলেন, জনগণের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে, জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আমরা রাজপথে ছিলাম। আমাদের নেতাকর্মীরা যে যার যার অবস্থান থেকে সতর্ক ছিল। পাশাপাশি ডেঙ্গু ও ৩১ দফা নিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছে আমাদের নেতাকর্মীরা।
দুপুরে তাঁতীদলের উদ্যোগে নয়াপল্টনে বিক্ষোভ মিছিল করেন নেতারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দপ্তর তাইফুল ইসলাম টিপু, তাঁতীদলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, সদস্য সচিব মজিবুর রহমান, মৎস্যজীবী দলের সাবেক সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ডা. জাহিদ প্রমুখ।
এদিন সকালে গুলিস্তান, পল্টন, মতিঝিলসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল মিছিলে নেতৃত্ব দেন যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তারেক, যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন বাবলু, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আশিফুর রহমান বিপ্লব, জাকির আহমেদ বাবু, পল্টন থানা যুবদলের টিপু, খলিল, মনা, লিওন, মামুন, হালিম, শামীম প্রমুখ। এ সময় ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের রূপরেখা ৩১ দফা’-এর লিফলেট বিতরণ করা হয়।
আওয়ামী লীগের নাশকতা ঠেকাতে গুলশানে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি। দুপুরে গুলশান-১ কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ গোল চত্বর পর্যন্ত এ বিক্ষোভ মিছিল করেন গুলশান থানা বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপি নেতা কামাল জামান মোল্লা, গুলশান থানা বিএনপির আহ্বায়ক এস এ মামুন, সদস্য সচিব শাহজাহান কবির, গুলশান থানা যুবদলের সদস্য সচিব মেহরাব জাবিন ফারুক, গুলশান থানা ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি শাদমান নায়ীম খান, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন প্রমুখ। রোববার সকাল ৬টা থেকে তিতুমীর কলেজ এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রদল। তিতুমীর কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি আরিফুর রহমান এমদাদ ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনের নেতৃত্বে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে গুলশান ও আমতলী এলাকা প্রদক্ষিণ করে নেতাকর্মীরা। দুপুর ১২টায় প্রায় ৫ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে ক্যাম্পাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতিবাদ মিছিল করেন তারা। আরিফুর রহমান এমদাদ বলেন, এই দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না। গণহত্যাসহ নানা অভিযোগে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগকে ছাত্র-জনতা ক্ষমা করবে না। এজন্য তারা নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সব ষড়যন্ত্র এই দেশের ছাত্র-জনতা রুখে দেবে।
সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। তারা লিফলেট বিতরণের পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার দাবিতে মিছিল করেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর আহমদ বলেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ কিংবা আওয়ামী লীগ নানা নাশকতার ষড়যন্ত্র করে আসছে। বিএনপির পাশাপাশি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থেকে দিনভর ঢাকার রাজপথ দখলে রাখে। এদিন আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে থাকায় কোনো নাশকতা হয়নি। সদরঘাট থেকে গুলিস্তান পর্যন্ত যানজটও সৃষ্টি হয়নি। আমরা জনগণের মধ্যে দলীয় নির্দেশনা অনুযায়ী লিফলেট বিতরণ করেছি। তেজগাঁও, ফার্মগেট, বিজয় সরণি ও কাওরান বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে তেজগাঁও থানা ছাত্রদল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন থানা ছাত্রদলের সভাপতি মো. আকতার হোসেন ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল ইসলাম রাজন প্রমুখ। মোহাম্মদপুর এলাকায় সতর্ক অবস্থান ও মিছিল করে বিএনপিসহ শ্রমিক দল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে মিছিল শুরু করে এলাকার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ঘুরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। মোহাম্মদপুর থানা শ্রমিক দলের সভাপতি আলী কায়সার পিন্টু বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসন থেকে জনগণ মুক্তি পেয়েছে, স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা আবারো দেশকে অস্থিশীল করার পাঁয়তারা করছে। যেকোনো মূল্যে আমরা জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল দুর্নীতিবাজদের প্রতিহত করব। এই দেশটাকে ১৬ বছর শাসন করেও তার শান্তি হয়নি এখন আবার দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। যেকোনো অরাজকতা প্রতিহত করতে আমরাও প্রস্তুত। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদস্য সচিব হেমায়েদ গাজী, শ্রমিক নেতা রুবেল হাওলাদার, আব্দুর রহিম, জাহাঙ্গীর, ইব্রাহিম মৃধা, সোবাহান, জাহাঙ্গীর খাঁ প্রমখ।
এদিকে আওয়ামী লীগের ডাকা কর্মসূচির প্রতিবাদে যাত্রাবাড়ী ও কদমতলী থানাসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন ওয়ার্ড বিএনপির এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। শহীদ নূর হোসেন দিবস উপলক্ষ্যে মিছিল করেছে ডেমরা থানা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।