‘কৃষক সমাবেশ’ কর্মসূচিতে তারেক রহমান
ষড়যন্ত্র রুখতে ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হবে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র থেমে নেই। গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে না পারলে ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া যাবে না। জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারলে ভালো কিছু সম্ভব নয়। ভোট যাতে হয়, সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। মানুষ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে। ষড়যন্ত্র রুখতে হলে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম না হব, ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো কিছু করতে পারব না। শনিবার বিকালে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউটে কৃষক দলের উদ্যোগে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘কৃষক সমাবেশ’ কর্মসূচি ভার্চুয়ালি উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আজ থেকে আগামী ৩ মাস দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে কৃষক সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব সকালে একই স্থানে প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। এতে সারা দেশ থেকে আসা কৃষক দলের প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, দেশে জনগণ ও জাতীয়তাবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কিন্তু থেমে নেই। প্রতিনিয়তই পত্র-পত্রিকার নিউজ এবং স্যোশাল মিডিয়ার বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে, টেলিফোন আলাপের মাধ্যমে সবাই এই ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পারছেন। ষড়যন্ত্র যে থেমে নেই একথা প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে।
তিনি বলেন, যে যেই রাজনীতিতেই বিশ্বাস করুক না কেন, একটি জায়গায় এসে দাঁড়াতে হবে। যে যাকে ইচ্ছা ভোট দেবে, কিন্তু ভোট যাতে হয় এই ব্যবস্থাটা যে কোনো মূল্যে করতে হবে। ভোট হতে হবে। সকাল থেকে বিকাল যাকে ইচ্ছা তাকে নিশ্চিন্তে, নিরাপদে ভোট দেওয়া যাবে। এর সঙ্গে কোনো আপস নেই। তারপর জনগণ যাকে ভালো মনে করে তাকে ভোট দেবে, যাকে ভালো মনে করবে না তাকে ভোট দেবে না। কিন্তু ডামি নির্বাচন, নিশিরাতে ভোট হতে পারবে না। দিনের আলোতে ভোট হতে হবে। যাকে খুশি তাকে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। নিরাপদে ভোট দেওয়ার স্বাধীনতা থাকতে হবে। ভোট দেওয়ার সময় কেউ কাউকে ডিসটার্ব করতে পারবে না। যাবে, (ভোটকেন্দ্রে) লাইন ধরবে, ভোট দেবে, চলে যাবেন। তার (ভোটার) মত তিনি প্রকাশ করবেন, কোনো ভয়ভীতি থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, নিরপেক্ষভাবে ভোট হতে হবে। এটার সঙ্গে কোনো সমঝোতা নেই। যদি এটি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে ধীরে ধীরে আমরা দেশের সমস্যা, মানুষের সমস্যা সমাধান করতে পারব।
তারেক রহমান বলেন, শুক্রবার একটি কথা বলেছিলাম, আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম না হব ততক্ষণ পর্যন্ত, একটি উদাহরণ দিয়ে বলি, আজকে যে বাজার সিন্ডিকেট এটিকে ভাঙা সম্ভব হবে না। এটি যদি ভাঙতে হয়, দ্রব্যমূল্যের পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হয় তাহলে প্রকৃত জনপ্রতিনিধি দরকার। যারা মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে। যেদিন এরকম একটি সিস্টেম তৈরি করা সম্ভব হবে, সেদিনই বাজার পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। আমরা যেটাই উন্নত করতে চাই না কেন, জনগণের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে না পারলে, জনগণের কাছে জবাবদিহি করে এমন ব্যক্তিদের সামনে আনতে না পারলে কোনোভাবেই আমরা ভালো কিছু করতে পারব না।
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শহিদ জিয়াউর রহমানের খাল খনন কর্মসূচি শুরু হবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমাদের দেশে অনেক জায়গা আছে যেখানে দেশের কৃষক প্রয়োজনীয় পানি পায় না। ফসল উৎপাদনে বাধাগ্রস্ত হয়। খাল খননের মাধ্যমে শহিদ জিয়া পানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। যেখানে একটি ফসল হতো সেখানে পানির কারণে দুটি হয়েছিল, দুটি ফসলের জায়গায় তিনটি ফসল হয়েছিল। তিনি বলেন, কৃষক দলকে কৃষকনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। কৃষক সমাবেশে কৃষকদের সমস্যা শুনতে হবে। তারপর সেই সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কৃষকদের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরও বলেন, বাংলাদেশের নারীদের বড় একটা অংশ কৃষির সঙ্গে জড়িত। তাই কৃষির প্রতি নজর দিতে হবে। আমরা প্রতিবার চেষ্টা করেছি কৃষি সমস্যার প্রতি নজর দিতে। খালেদা জিয়ার সময় ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণ মওকুফ করে দিয়েছিল। ফসলের মৌসুমে বিদ্যুৎ বিল সরকার বহন করত। যার মধ্য দিয়ে কৃষকদের কিছু সমস্যার সমাধান হয়েছে।
কৃষকের বীজের সমস্যার সমাধান করা যায়নি উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, বিভিন্ন সময় ফসল নষ্ট হয় সেজন্য আমরা কৃষি বিমার কথা চিন্তা করেছি। অনেক সময় মহাজন থেকে ঋণ নেয়, যা কৃষকের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, সেখান থেকে আমরা যদি এটা করতে পারি তাহলে এ সমস্যাটা আর হবে না।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মতে, সব মানুষের জন্য খাদ্য উৎপাদন করতে হলে কৃষির ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এত মানুষের জন্য খাদ্য আমদানি সম্ভব নয়। তাই যেগুলো মৌলিক খাদ্য সেগুলো দেশেই উৎপাদন করতে হবে। তাই কীভাবে কৃষি জমি বাড়ানো যায় সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। কিছু পদক্ষেপ আছে যেগুলো করলে কৃষি জমি বাড়ানো যায়, এটা একমাত্র সম্ভব ক্ষমতায় গেলে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাই আমাদের সতর্কতার সঙ্গে চলতে হবে।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার সুযোগ এসেছে। তবে পতিত স্বৈরাচাররা এখনও নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। তাদের সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ৭ নভেম্বরের সিপাহী-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়েই বিএনপি জন্ম নিয়েছিল। এ বিপ্লবের মাধ্যমেই জিয়াউর রহমান জাতির সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন। এরপর অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনীতি ও অর্থনীতির গুণগত পরিবর্তন করেন। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে আসেন।
কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি হাসান জাফির তুহিনের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাসুজ্জামান দুদু, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
এর আগে সকালে একই স্থানে কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, বর্তমান সংবিধান তো বাকশালী সংবিধান। এটি কর্তৃত্ববাদী সংবিধান। তাহলে এই সংবিধানের অজুহাত দিয়ে কেন আপনারা সংস্কার করতে দেরি করছেন? তিনি আরও বলেন, আপনারা তো (অন্তর্বর্তী সরকার) নিজেরাও সংবিধানের আওতায় ক্ষমতায় আসেননি, কিন্তু জনসমর্থন রয়েছে। দ্রুতগতিতে পদক্ষেপ নিতে হবে, আপনাদের কাজের গতি যদি কমে যায় তাহলে জনগণ মনে করবে আপনারা সঠিক কাজ করছেন না।