মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাল
কমলা নাকি ট্রাম্প কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে
মনোয়ারুল ইসলাম, নিউইয়র্ক থেকে
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা নাকি রিপাবলিকান ট্রাম্প কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউজে। কিংবা, জো বাইডেনের পর কে নিয়ন্ত্রণ করবেন মার্কিন সাম্রাজ্য। এমনই তীব্র উত্তেজনা মাথায় নিয়ে আমেরিকার কোটি ভোটার ভোটকেন্দ্রে যাবেন। কাল প্রেসিডেন্টসহ ৪৩৫টি হাউজ আসন ও ৩৪টি সিনেট আসনসহ নিউইয়র্ক স্টেটের অ্যাসেম্বলি ও সিনেট সদস্যদের ভোট হবে। ভোটকেন্দ্র খুলবে সকাল ৬টায়, ভোটগ্রহণ চলবে টানা রাত ৯টা পর্যন্ত। যদিও ইতোমধ্যে আগাম ভোট দিয়েছেন ৬৪ মিলিয়ন ভোটার।
এদিকে মার্কিন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত ৫ লক্ষাধিক বাংলাদেশি কমলা ও ট্রাম্প শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। অতীতের নির্বাচনগুলোতে বাংলাদেশিরা একাট্টা হয়ে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থীর পক্ষেই থাকতেন। কিন্তু এবার সেই চিত্র পালটে গেছে। বাংলাদেশের দলীয় রাজনীতিকে অনুসরণ করে এখানকার ভোটাররাও বিভক্ত হয়েছেন। প্রকাশ্যেই বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থকরা নেমেছেন ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসের পক্ষে। আর আওয়ামী লীগের সমর্থকরা নেমেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে। দুদিন আগে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বাংলাদেশ নিয়ে মন্তব্য করায় আরও উৎসাহী হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগপন্থিরা। তাদের মতে, ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির সম্পর্ক খুবই ঘনিষ্ঠ। পাশাপাশি হিন্দু-খ্রিষ্টানদের ওপর বাংলাদেশে নির্যাতন হচ্ছে এমন বিবৃতি দিয়েছেন ট্রাম্প। যা ড. ইউনূস সরকারের বিপক্ষেই অবস্থান ব্যক্ত করে। ট্রাম্প জিতলে ক্লিনটন পরিবারের বন্ধু হিসাবে খ্যাত ইউনূসের প্রভাব কমবে যুক্তরাষ্ট্রে। যা আওয়ামী লীগের পক্ষেই যাবে। এছাড়া হিন্দু কমিউনিটির বাংলাদেশিরা জোট বেঁধেছেন ট্রাম্পের পক্ষে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার শেষ মুহূর্তে কমলা ও ট্রাম্প একে অন্যের বিরুদ্ধে পালটাপালটি আক্রমণ করছেন। কমলা ট্রাম্পকে বলেছেন ‘ফ্যাসিস্ট’। পালটা জবাবে ট্রাম্প তাকে বলেছেন ‘স্টুপিড’। দুই প্রার্থীর পক্ষেই তাদের সমর্থকরা মাঠে সরব রয়েছেন। নির্বাচনে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশি কমিউনিটির ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরছেন। গত কয়েকদিন ধরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসী নীতি নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক চলছে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রে আছেন কিন্তু বৈধ ‘কাগজ’ পাননি তাদের মধ্যে উদ্বেগ কাজ করছে। অন্যদিকে বিজয়ী হলে কমলা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মতোই দুর্বল নীতি গ্রহণ করবেন বলে ট্রাম্প সমর্থকরা যুক্তি দিচ্ছেন।
কাল ভোটে কে এগিয়ে যাবেন তা নিয়েও নানা আলোচনায় মাঠ এখন উত্তপ্ত। তবে বাস্তবতা হচ্ছে-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে গেলে প্রার্থীকে ‘ইলেকটোরাল কলেজ ভোট’-এ এগিয়ে থাকতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রে ৫০টি রাজ্যে মোট ইলেকটোরাল ভোট আছে ৫৩৮টি। এর মধ্যে কোনো প্রার্থীকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে গেলে কমপক্ষে ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। আবার সব রাজ্যে ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা একরকম নয়। যদি কোনো প্রার্থী সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করতে পারেন, তাহলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য প্রতিনিধি পরিষদ এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করার জন্য সিনেট দ্বারা একটি অস্থায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
রাজ্যগুলোতে জনসংখ্যার ভিত্তিতে ইলেকটোরাল ভোট নির্ধারণ হয়ে থাকে। নির্বাচনে ব্যাটল গ্রাউন্ড হিসাবে ৭টি স্টেটকে ধরা হয়ে থাকে। তাতে ইলেকটোরাল ভোট আছে ৯৩টি। ধারণা করা হচ্ছে-ওয়াশিংটন ডিসিসহ ১৯টি রাজ্য থেকে কমলা হ্যারিস কমপক্ষে ২২৬টি ইলেকটোরাল ভোট পেতে পারেন। ২৭০টি ভোট পেতে হলে আরও ৪৪টি ভোট তাকে পেতে হবে। এক জরিপ অনুযায়ী ট্রাম্প ও কামলার ব্যবধান পেনসিলভেনিয়াতে খুবই কম। জর্জিয়া ও নর্থ ক্যারোলিনাতে এই ব্যবধান আরেকটু বেশি।
২৪টি রাজ্য রিপাবলিকানদের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। সেখান থেকে ট্রাম্প কমপক্ষে ২১৯ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট আছে টেক্সাসে ৪০টি।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিউইয়র্ক সিটির ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে সমাবেশ করে জনসমর্থন চাঙা করেছেন। এক জরিপে দেখা যায়, তার জন্মস্থান নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা খুবই কম। ২০২০ সালের নির্বাচনে সেখানে তিনি ৪০ শতাংশের কম ভোট পেয়েছিলেন। এই রাজ্যেই ২০২৪ সালে তাকে ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
১৯৬১ সালের ২৩তম অ্যামেন্ডমেন্টের মাধ্যমে কলম্বিয়ার ফেডারেল ডিস্ট্রিক্টে তিনটি ইলেকটর প্রদান করা হয়। যার ফলে মোট ইলেকটরের সংখ্যা ৫৩৮-এ পৌঁছে যায়।