আওয়ামী লীগসহ ১১ দল
রাজনৈতিক কার্যক্রম ও নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে রিট
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৩ নেতা আবেদনকারী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলকে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালানোর অনুমতি না দিতে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখতে অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশনা চেয়ে পৃথক দুটি রিট হয়েছে। এ বিষয়ে আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশনা দেওয়ার আরজি জানানো হয়েছে রিটে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমসহ তিনজন আবেদনকারী হয়ে এ দুটি রিট করেছেন। অপর দুজন হলেন মো. আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ ও মো. হাসিবুল ইসলাম।
আওয়ামী লীগ ছাড়াও অপর ১০টি দলের রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর অনুমতি না পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো-জাতীয় পার্টি (এরশাদ), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, তরিকত ফেডারেশন, কমিউনিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ, এলডিপি, জাতীয় পার্টি (মঞ্জু), গণতন্ত্রী দল, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল- মার্ক্সিস্ট-লেলিনিস্ট (দিলীপ বড়ুয়া) ও সোসিওলিস্ট পার্টি অব বাংলাদেশ। দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈধতা নিয়ে অপর একটি রিটও করেছেন তারা। রিটের ওপর আজ হাইকোর্টে শুনানি হতে পারে। রিটের প্রার্থনায় দেখা যায়, নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ বিষয়ে রুল চাওয়া হয়েছে। ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল চাওয়া হয়েছে রিটে। এদিকে দুটি রিট করার কথা জানিয়ে নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এক পোস্টে আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘দুটি রিট করেছি। এক. আওয়ামী লীগের বিগত তিনটি নির্বাচনকে কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং অবৈধভাবে প্রাপ্ত সুবিধাগুলো কেন ফিরিয়ে দেবে না, সে বিষয়ে প্রথম রিট। দুই. এ মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত কেন তাদের পলিটিক্যাল সব অ্যাকটিভিটি থেকে বিরত রাখা হবে না, সে বিষয়ে দ্বিতীয় রিট। দল হিসাবে নিষিদ্ধ কিংবা নিবন্ধন নিষিদ্ধের কোনো কথা রিটে নেই।’
রিট আবেদনে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা, বেআইনি প্রক্রিয়ায় অসাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের জন্য আওয়ামী লীগসহ ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে ১১টি দলের সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধের পাশাপাশি ভবিষ্যতে সব ধরনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দলগুলোকে বিরত রাখতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সে বিষয়েও রুল জারির আবেদন করা হয়েছে রিটে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের ওই ১১টি দল ছাড়া বাকি বিবাদীরা হলেন আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক।
প্রসঙ্গত, এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতাকে নির্বিচারে হত্যার দায়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ এবং দলটির নিবন্ধন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছিল। মানবাধিকার সংগঠন সারডা সোসাইটির পক্ষে আরিফুর রহমান মুরাদ ভূঁইয়ার করা সেই রিট বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করে দেন।
ওই রিটের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো উদ্দেশ্য নেই কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ বা নিবন্ধন বাতিল করা। সংবিধানে সংগঠন ও রাজনৈতিক দল পরিচালনার যে স্বাধীনতা রয়েছে, এ সরকার সেটিতে বিশ্বাস করে। আর বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে জড়িতদের অন্যায় অবিচারের বিচার আইন-আদালতের মাধ্যমে হবে। সেটার জন্য কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা সমীচীন নয়।