খিলগাঁও থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা
আগাম জামিন পেলেন জেড আই খান পান্না
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হত্যাচেষ্টা মামলায় সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং মানবাধিকার সংস্থা-আইন ও সালিশকেন্দ্রের চেয়ারপারসন জেড আই খান পান্নাকে আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ পুলিশ প্রতিবেদন না দেওয়া পর্যন্ত তাকে জামিন দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, আহসানুল করীম, এমকে রহমান ও শিশির মনির।
এদিকে জেড আই খান পান্নাকে ভুলবশত আসামি করা হয়েছে উল্লেখ করে খিলগাঁও থানায় আবেদন করেছেন মামলার বাদী মো. বাকের। মামলার এজাহার থেকে আসামি হিসাবে জেড আই খান পান্নার নাম বাদ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন তিনি।
হাইকোর্টের আদেশের পর আহসানুল করিম বলেন, তাকে (জেড আই খান পান্না) সম্পূর্ণভাবে হয়রানি করার জন্য এ মামলা করেছে। আমি মনে করি না এখানে রাষ্ট্র যারা ক্ষমতার সঙ্গে জড়িত, তাদের এখানে কোনো প্রভাব আছে। অতি উৎসাহী ব্যক্তি এ মামলাটা করেছেন। তিনি কোটাবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে সব সময় ফ্রন্টলাইনার ছিলেন। সব সময় তৎকালীন সরকারের সমালোচনা করেছেন।
গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর খিলগাঁও থানায় এ মামলা হয়েছে। এ মামলায় আসামি হিসাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ১৮০ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আইনজীবী জেড আই খান পান্না এ মামলার ৯৪ নম্বর আসামি। গত ১৯ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আহাদুল ইসলাম নামে একজনকে গুলি ও মারধর করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। গত ১৭ অক্টোবর মামলাটি করেন আহাদুলের বাবা মো. বাকের।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই খিলগাঁওয়ের মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেন বাদী মো. বাকেরের ছেলে মো. আহাদুল ইসলাম। এ সময় পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন এবং ১৪-দলীয় জোটের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ ককটেল ও সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটান এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নসাৎ করার জন্য হত্যার উদ্দেশে এ গুলি চালানো হয় বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আহাদুল ইসলাম বাঁ পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে যান। সন্ত্রাসীরা তাকে পরে আরও লাঠিপেটা করেন। আহাদুলকে প্রথমে স্থানীয় একটি ক্লিনিক, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে, এরপর বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়।
যা বললেন জেট আই খান পান্না : আদেশের পর আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, আমি যতটুকু খোঁজ পেয়েছি, এই যে মামলাটা হলো এটা মুলাদীর (বরিশাল) লোকাল পটিলিক্স। সেখানে একজন আইনজীবীও আছে দুর্ভাগ্যবশত। পংকজ দেবনাথের (সাবেক সংসদ সদস্য) বিরুদ্ধে বাদীর কিছু অভিযোগ ছিল। তারে বলছে পংকজ দেবনাথের বিরুদ্ধে মামলা হবে। বাদী লেখাপড়া কিছু জানে না। ওখানে কী কী নাম ঢুকিয়েছে। আর সে সাইন দিয়ে আসছে। এটা শুনছি। সত্যি কী মিথ্যা আমি জানি না। মুলাদীর রাজনীতি বা বৃহত্তর বরিশালের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। সারা বাংলাদেশের রাজনীতির সঙ্গে আমার সম্পর্ক। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক। যদিও আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নই। সরকারের বিরোধিতা যেটা করছিলেন সেটা কি এখনো চালিয়ে যাবেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জেড আই খান পান্না বলেন, সরকারের বিরোধিতা করিনি। সরকারের কিছু ভুল পদক্ষেপ, ভুল কার্যক্রমের আমি বিরোধিতা করেছি, সমালোচনা করেছি।
নাম বাদ দিতে বাদীর আবেদন : পান্নাকে ভুলবশত আসামি করা হয়েছে উল্লেখ করে সোমবার সকালে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. দাউদ হোসেনের কাছে আবেদন করেন বাদী। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসি মো. দাউদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, এজাহারভুক্ত ৯৪তম আসামি জেড আই খান পান্নার নাম বাদ দিতে মামলার বাদী মো. বাকের সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আবেদনটি করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বাদী আদালতেও এফিডেভিটের মাধ্যমে হলফনামা দিয়েছেন। লিখিত আবেদনে বাদী বাকের বলেছেন, ‘গত ১৭ অক্টোবর খিলগাঁও থানার মেরাদিয়া বাজারের পশ্চিমে শুক্কুর আলী গার্মেন্টস মোড়ে আমার ছেলে মো. আহাদুল ইসলামকে একই উদ্দেশ্যে বেআইনিভাবে জনতাবদ্ধে দাঙ্গা সৃষ্টি করে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে গুরুতর জখম করে। এ ঘটনায় ১৮০ জনের বিরুদ্ধে খিলগাঁও থানায় এজাহার দাখিল করলে মামলা রুজু হয়। কিন্তু এজাহারের ৯৪ নম্বর আসামি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্নাকে অজ্ঞতা ও ভুলবশত আসামি করা হয়। তাকে বাদ দিয়ে মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের অনুরোধ রইল।’