হাসিনার দোসররা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অরাজকতা হবেই: রিজভী
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, যদি শেখ হাসিনার দোসরদের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসান তাহলে অরাজকতা-নাশকতা তো হবেই। ঘুরেফিরে দেখছি দুটো শক্তিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে বসাচ্ছেন। একটা স্বাধীনতা বিক্রি করার শক্তি আর একটা স্বাধীনতার বিরুদ্ধের শক্তি। তাদের বসানোর কারণেই যারা স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করে তারা ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বাড়ছে।
তিনি বলেন, গরিমসি না করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচন হলে নির্বাচিত সরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থাকবে। একজন এমপিকে কিছু না কিছু ভালো কাজ করতে হয়। তবে শেখ হাসিনার এমপি নয়, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ যাকে পছন্দ করে নির্বাচিত করবে সেই এমপি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমরা ১৬ বছর যুদ্ধ করেছি। আমাদের কথা হলো যেই ক্ষমতায় আসুক জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হোক।
রাজধানীর জুরাইনে বিক্রমপুর প্লাজার সামনে শনিবার ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘ভয়ংকর ডেঙ্গু’ হাসিনা বিদায় নিয়েছে আরেক ডেঙ্গু হাজির হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, জুরাইন এলাকায় অনেক জলাবদ্ধতা রয়েছে। শেখ হাসিনার উদ্দেশ্য জনসেবা ছিল না, তার উদ্দেশ্য ছিল জনগণের টাকা মেরে বিদেশে পাচার করা। ম্যান পাওয়ার সিন্ডিকেট করে আওয়ামী সিন্ডিকেটবাজরা হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়েছে। শেখ হাসিনা কিংবা তার পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বললে তাদের কারাগারে পাঠানো হতো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এ নেতা বলেন, প্রতি রাতে কাওরান বাজারে ৫০ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়, সেখানে নিত্যপণ্যের দাম বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। আপনারা কী করেন? এতদিনেও সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছেন না। জনগণ তো বলবেই, শেখ হাসিনার সময়ে জিনিসপত্রের দাম বাড়ত, এখনো বাড়ছে। তফাতটা কী?
রিজভী বলেন, দেশের প্রতিটি কারাগার ছিল শেখ হাসিনার আয়নাঘর। তার বিরুদ্ধে যারা কথা বলেছে, গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলেছে তাদের সেই ঘরে বন্দি করে রাখা হতো। শুধু বিএনপি নেতাকর্মী নয়। এ দেশের জনগণ যারা গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলেছে তাদের ওপর জুলুম-নির্যাতন চলেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, জনগণ আওয়ামী লীগকে বিদায় করে একটু মুক্ত হয়েছে। একটু শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তদের কালো টাকা এখনো সমাজের গভীরে ছড়িয়ে আছে। তারা নাশকতা করে যাচ্ছে, করবে। আমরা আগেই বলেছিলাম তারা নাশকতা করবে। কারণ সরকারি সংস্থায় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের লোক রয়েছে তারা এসব করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ বোর্ড করেছেন স্বাধীনতার ঘোষক শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগ এটাকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। তারা ৫০টি পল্লী বিদ্যুৎকেন্দ্র শাটডাউন করলেন তাদের দাবিদাওয়া নিয়ে। তাহলে হাসিনার আমলে কেন করলেন না। সে সময় দাবি করলেন না কেন? আপনাদের ন্যায্য দাবি থাকতে পারে কিন্তু শাটডাউন করলেন কেন? কার স্বার্থে করলেন? হাসিনাকে প্রত্যাবর্তন করাতে চান? আবার বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক লুট করার ব্যবস্থা করতে চান?
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি সভাপতি তানভীর আহমেদ রবিনের সভাপতিত্বে আরও উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ, ডা. রফিকুল ইসলাম ও ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
পরে বিকালে চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে ঢাকায় আহত সুমন, ইব্রাহিম, হৃদয় ও বৃষ্টিসহ বেশ কয়েকজন পথশিশুর সঙ্গে দেখা করে তাদের চিকিৎসার সার্বিক দায়িত্ব নেওয়ার বার্তা পৌঁছে দেন ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন-বিএনপির সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন, সদস্য সচিব কৃষিবিদ মোকছেদুল মোমিন মিথুন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ডা. জাহিদুল কবির, আরিফুর রহমান তুষার, ছাত্রদলের ডা. আউয়াল প্রমুখ।