পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ২০ কর্মকর্তা বরখাস্তের প্রতিবাদ
হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ করেছিলেন কর্মীরা
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মীরা। ২০ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত এবং ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। এভাবে সমিতিভুক্ত এলাকায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। পরে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের অনুরোধে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি স্থগিত করে সারা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করেছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল থেকে বিভিন্ন জেলায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন শুরু হলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা চালান। কিন্তু পবিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নানা কৌশলে গ্রিড লাইন ও সাব-স্টেশনগুলোর প্রিকোয়েন্সি ডাউন করে দিলে সেনাবাহিনীর পক্ষে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে নানা বেগ পেতে দেখা গেছে। পবিস কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই আন্দোলনের কারণে দিনভর হবিগঞ্জ, মাধবপুর, বেজুড়া, সিলেট, শায়েস্তাগঞ্জসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় শিল্প কলকারখানা বন্ধ হয়ে পড়ে। বিদ্যুৎবিহীন ছিল বাসাবাড়িও। এমন পরিস্থিতিতে এসব জেলার মানুষকে চরম মানবেতর জীবন কাটাতে দেখা গেছে। শিল্প কলকারখানা বন্ধ থাকায় বড় অঙ্কের লোকসানে পড়েন মালিকরা। হঠাৎ বিদ্যুৎ বিতরণ বন্ধ হয়ে পড়ায় বিপুল অঙ্কের টাকার কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। জানা গেছে, আরইবির চেয়ারম্যানের অপসারণ এবং দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ১২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চের হুঁশিয়ারি দেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিভিন্ন জেলায় ৬১টি সমিতিতে পুরোপুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে প্রতিবাদ জানান সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এতে ভোগান্তিতে পড়েন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির লাখ লাখ গ্রাহক। তবে বিকালের দিকে আন্দোলনকারীদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী রাজন কুমার দাস (এজিএম), প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া (ডিজিএম), দীপক কুমার সিংহসহ (ডিজিএম) দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সমিতির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে আটক করা হয়। এরপর সন্ধ্যায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলমের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান এবং আটকদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে রোববার পর্যন্ত কর্মসূচি স্থগিত করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল হাকিম (এজিএম) গণমাধ্যমকে জানান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমাদের দাবি-দাওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য সময় চেয়েছেন, মামলা প্রত্যাহার এবং আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়াসহ কোনো প্রকার হয়রানি না করার আশ্বাস দেওয়ায় আমরা কর্মসূচি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন ও অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী।
এর আগে বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, চলতি বছরের শুরু থেকে আরইবি-পবিস একীভূতকরণসহ অভিন্ন চাকরিবিধি বাস্তবায়ন এবং সব চুক্তিভিত্তিক/অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণের ২ দফা দাবি আদায়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আন্দোলন চলমান। আন্দোলনের যৌক্তিকতা উপলব্ধি করে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সিস্টেম তথা আরইবি সংস্কার সময়ের দাবি হিসাবে উল্লেখপূর্বক সংস্কারসহ অন্যান্য সমস্যার যৌক্তিক সমাধানের জন্য ১ আগস্ট ১৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয় এবং ইতঃপূর্বে ওই কমিটির ৪টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত এবং দফায় দফায় সভা অনুষ্ঠিত হলেও সরকারের সংস্কার উদ্যোগে আরইবির প্রত্যক্ষ অসহযোগিতার কারণে কমিটি চূড়ান্ত সুপারিশ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়নি।
বার্তায় আরও বলা হয়, গণস্বাক্ষরসহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দাবি উপস্থাপন, গ্রাহক সেবা ও বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রেখে মে মাসে ৫ দিন এবং জুলাইয়ে ১০ দিন কর্মবিরতি, আগস্টে লংমার্চ টু আরইবি, ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটামে গণছুটি ঘোষণার পর জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মসূচি প্রত্যাহার, সারা দেশে একযোগে ডিসি অফিস ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন, স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিতকরণের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা ও বিদ্যুৎ উপদেষ্টা বরাবর একাধিকবার স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই বার্তায় উল্লেখ করা হয়, চলমান প্রেক্ষাপটে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের, ১৭ অক্টোবর তারিখে কয়েকজনকে গ্রেফতার এবং ১০ জন কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়। এ অবস্থায় দায়িত্ব গ্রহণের পর একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন না করে আরইবির পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে দেশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন এবং সেনাবাহিনীর ক্ষমতাকে অপব্যবহার করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে অস্থিতিশীল করার প্রত্যক্ষ মদদের কারণে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ ও সমিতির কর্মকর্তাদের চাকরি অবসানের আদেশ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণাপূর্বক ২ দফা দাবি আদায়ে ৪৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করতে বাধ্য হবে।