নজরদারিতে কমছে ডিমের দাম ডজন ১৬৫ টাকা
সরকারি দর অকার্যকর * আড়তে বিক্রি শুরু
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ডিমের বাজারে রীতিমতো চলছে তেলেসমাতি। গত দুইদিন খুচরা পর্যায়ে ১৭০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও সরকারের নজরদারিতে সেই দাম বুধবার ১৬০-১৬৫ টাকায় নেমেছে। পাশাপাশি বন্ধ থাকা ডিমের আড়তেও শুরু হয়েছে বিক্রি কার্যক্রম। তবে পাইকারি ও খুচরা এ দুই পর্যায়ে সরকারি দর কার্যকর হয়নি। ফলে এখনো ভোক্তাকে বাড়তি দরেই ডিম কিনতে হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর পাইকারি ও একাধিক খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
এদিকে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বেড়েছে বাজারে-এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। দাম যখন বেশি ছিল, তখনও বাজারে সরবরাহ পর্যপ্ত ছিল। এখন দাম কমেছে, তবে সরবরাহ আগের মতোই বেশি আছে। ডিমের বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বেড়েছিল। গত কয়েকদিনে অতি মুনাফা করে লুটে নেওয়া হয়েছে টাকা।
মঙ্গলবার উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে মুরগির ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার, যা বুধবার থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
তিনি জানান, উৎপাদক পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা ও খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সায় ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বুধবার থেকে এ মূল্য কার্যকর হবে। নতুন মূল্য অনুযায়ী ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ডজন কিনতে খরচ হওয়ার কথা ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা।
এ সময় মহাপরিচালক বলেন, নির্ধারিত দামের চেয়ে যাতে বেশি দামে ডিম বিক্রি না করা হয়, সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি করা হবে। তারপরও বেশি দামে ডিম বিক্রি হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একদিন আগেও রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ডিম সর্বোচ্চ ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও বুধবার বিক্রি হয়েছে ১৬০-১৬৫ টাকা। হালি হিসাবে ৫৪-৫৫ টাকা। আর পিস হিসাবে ১৩-১৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সে হিসাবে সরকারি দরের চেয়ে ডজনপ্রতি এখনো ১৭.৫৬ থেকে ২২.৫৬ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। নয়াবাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা হাসান বলেন, ডিম নিয়ে বাজারে কী চলছে? বিক্রেতারা দাম কমায় আবার বাড়ায়। সরকারও মূল্য নির্ধারণ করে। কিন্তু সেই দরেও ডিম মেলে না। সবকিছুতেই কোনো সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে পাড়ছে মুনাফা লুটার ধান্দা করছে।
এদিকে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে রাজধানীর তেজগাঁও পাইকারি ডিমের আড়তে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসতে থাকে ডিমভর্তি ট্রাক। বিক্রি কার্যক্রম চলে বুধবার ভোর পর্যন্ত। গত দুইদিন ব্যবসায়ীরা আড়ত বন্ধ রাখলেও প্রশাসনের ভয়ে ফের খুলেছে। তবে সরকারের নির্ধারিত দামে ডিম বিক্রি করেনি। পাইকারি পর্যায়ে দাম কিছুটা কমালেও তারা তাদের ইচ্ছামতো দামেই বিক্রি করছে। সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি পিস ডিম ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করলেও আড়তেই পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা।
তেজগাঁও আড়তে বিক্রেতা শাহ নেওয়াজ বলেন, প্রতি পিস ১২ টাকায় ডিম কিনে এনে এখানে ১১ টাকা ১ পয়সা বিক্রি অসম্ভব। তিনি বলেন, করপোরেট যেসব গ্রুপ আছে, তারা দাম বাড়ায়-কমায়। তাই আমাদের বেশি দামে আনতে হয়। বিক্রিও করতে হয় বেশি দামে। তারা একটা সিন্ডিকেট। সেখানে অভিযান পরিচালনা করা দরকার। সেখানে গেলে সব চিত্র পাওয়া যাবে। তবে এই আড়তেই ডিম আসতে চার থেকে পাঁচ হাত বদল হচ্ছে। সেখানেও দাম বেড়ে যাচ্ছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, উৎপাদন ও ক্রেতার মাঝে বহুস্তর বা মধ্যস্বত্বভোগীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে উৎপাদনকারী, পাইকারি বিক্রেতা ও খুচরা পর্যায় বাদে অন্য স্তরগুলো বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৬ সেপ্টেম্বর প্রতিটি ডিমের দাম খুচরা পর্যায়ে ১১.৮৭, উৎপাদন পর্যায়ে ১০.৫৮ এবং পাইকারি পর্যায়ে ১১.১ টাকা বেঁধে দেয় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সেসময়ও এ দর বাজারে কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।
মঙ্গলবার নতুন করে ডিমের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বুধবার থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। আর এই মূল্য কার্যকর না করলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও বুধবার পর্যন্ত মূল্য কার্যকর করা সম্ভব হয়নি।