বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ
গর্বের ফল এনে দিল আরও কান্না
যুগান্তর ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছাত্র আন্দোলনে নিহতরা
এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া দেশের বেশির ভাগ পরিবারেই এখন বইছে আনন্দের বন্যা। কিন্তু ভালো ফলও বেশকিছু পরিবারে এনে দিয়েছে কান্না আর আহাজারি। বিশেষত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদদের মধ্যে যে কজন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের আরেক দফা শোকের সাগরে ভাসিয়েছে এ ফল। বাড়িয়েছে আফসোস। স্বপ্ন ভাঙার বেদনায় নীল হয়েছেন সন্তান-ভাই-বোন-শিক্ষার্থী-বন্ধুহারা বাবা-মা, ভাই-বোন, শিক্ষক-সহপাঠী। যুগান্তরের ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সবুজের দিশেহারা পরিবারে এমন ফলের পরও নেই হাসি : শেরপুর উত্তর প্রতিনিধি জানান, শেরপুর জেলা শহরের খরমপুর মোড়ে ৪ আগস্ট আওয়ামী দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন সবুজ মিয়া। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় ৪.৩৩ পেয়েছেন। সেদিনের পর থেকে পরিবারের কারও মুখে নেই হাসি। রেজাল্ট শুনে আরও শোকাহত হন তারা।
শ্রীবরদীর খড়িয়া কাজির চর ইউনিয়নের রুপার পাড়া গ্রামের প্যারালাইজড রোগী আজাহার আলীর ছেলে সবুজ। তার আয়েই চলত পাঁচ সদস্যের পরিবার। তাকে হারিয়ে পরিবারটি এখন দিশেহারা। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবুজ ছিলেন দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ের পর বাবা প্যারালাইজড হন। এরপর পরিবারের দায়িত্ব নেন তিনি। স্থানীয় এক ফার্মেসিতে সেলসম্যানের কাজ করতেন সবুজ। পাশাপাশি পড়াশোনা করতেন শ্রীবরদী সরকারি কলেজে।
শ্রীবরদী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম আলিফ উল্লাহ আহসান জানান, ৬ সদস্যের সংসারের খরচ বহন করে নিজের লেখাপড়া চালিয়ে এই রেজাল্ট করা কম কথা নয়। সবুজের মা সমেজা বেগম বলেন, এ রেজাল্ট তো আমাদের কোনো কাজে আসবে না। আমরা চাই প্রকৃত দোষীদের দ্রুত ন্যায়বিচার।
ইঞ্জিনিয়ার হতে চেয়েছিলেন সাগর : উপকূল দক্ষিণ (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি জানান, পটুয়াখালীর গলাচিপার উলানিয়া হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন সাগর গাজী। ডাকুয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের বাড়ির মো. সিরাজুল গাজী ও শাহিদা বেগম দম্পতির তিন ছেলের ছোট তিনি। জিপিএ ৩ দশমিক ৯২ পেয়েছেন।
এদিন তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা শাহিদা বেগম থেমে থেমে বিলাপ করছিলেন। বলছিলেন, ‘আইজগো আমার পুতে কত খুশি হইতো। আইজগো কতো কথা কইতে মায়র লগে।’ তিনি যুগান্তরকে বলেন, আমাকে বলত, মা আমি ইঞ্জিনিয়ার হব। পরিবারের দুঃখ-কষ্ট ঘোচাব। আমাকে বলল, মা আমি আন্দোলনে অংশ নিতে ঢাকায় যাব। আমরা যেতে না করলে সে জোর করে যায়। সাগরের বড় ভাই বলেন, শহিদের রক্ত নিয়ে কেউ যেন বেইমানি না করতে পারে।
রায়হান বেঁচে নেই, এই ফল দিয়ে কী হবে : নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে গুলিতে নিহত হন মো. রায়হান। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজি বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে। মোজাম্মেল বাড্ডায় এক বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই মেসে থাকতেন। তিনি রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। জিপিএ ২.৯২ পেয়েছেন।
বোন ঊর্মি আক্তার বলেন, আমার ভাই মেধাবী ছাত্র ছিল। তার আচার-আচরণও ভালো ছিল। তার জন্য বাবা-মা সবসময় কান্না করেন। আজ পরীক্ষার ফল শুনে বাবা-মা আরও বেশি কান্না করছেন।
মা আমেনা খাতুন বলেন, সে পাশ করছে, তা দিয়ে এখন কী করব। তার আরও ভালো রেজাল্ট করার কথা। সে মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। নিজেরা না খেয়ে সন্তানকে খাইয়েছি। তাকে ঢাকায় পড়ালেখা করাইছি। তার অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন বুলেটে শেষ হয়ে গেছে।
গুলশান কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এমএ কালাম বলেন, তার রেজাল্ট আরও ভালো হওয়ার কথা। কীভাবে এত খারাপ হলো, তা আমাদের জানা নেই। তার মৃত্যু আমাদের এখনো কাঁদায়।
শাহরিয়ারের মৃত্যুতে নিভে গেল বংশের বাতিই : ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার বিন মতিন জিপিএ ৪.৮৩ পেয়েছেন। শাহরিয়ারের বাবা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মা মমতাজ বেগম হবিগঞ্জের মাধবপুর শাহজালাল মাধবপুর কলেজের সাবেক প্রভাষক ছিলেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জের মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমড়াশাসন গ্রামে। তিনি খালার বাসায় গিয়েছিলেন। ফেরার পথে ১৮ জুলাই মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সামনে গুলিবিদ্ধ হন।
মঙ্গলবার শাহরিয়ারের চাচা আব্দুল মোতালিব যুগান্তরকে বলেন, আমার ভাই আব্দুল মতিন ও ভাবি মমতাজ বেগম ওমরাহ পালনে সৌদি আরব রয়েছেন। শাহরিয়ার বেঁচে থাকলে আজ কতই না আনন্দ পেতাম। ডুকরে কেঁদে তিনি বলতে থাকেন, ‘আমাদের দুই ভাইয়ের মাঝে একমাত্র পুত্রসন্তানই ছিল শাহরিয়ার। কিন্তু সে আজ বেঁচে না থাকায় আমাদের বংশের বাতিই নিভে গেল।’
স্বাধীন দেশে রেজাল্টটা আর দেখতে পারল না আমার মা : ঢাকা উত্তর স্টাফ রিপোর্টার ও টঙ্গী শিল্পাঞ্চল প্রতিনিধি জানান, সতেরো বছরের নাফিসা হোসেন মারওয়া গাজীপুরের টঙ্গীর শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। জিপিএ ৪.২৫ পেয়েছেন তিনি। নাফিসার বাবা আবুল হোসেন চা দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নাফিসার মা কুলসুম বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক বছর আগে।
মঙ্গলবার দুপুরে আবুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে ব্যাঘাত না ঘটে, সেজন্য তাকে কখনো রান্না করতে দিতাম না। নিজে ছোট্ট চায়ের দোকানে যা আয় হতো, পুরোটাই মেয়েদের পড়াশোনা আর দেখভালে খরচ করেছি। ১৮ জুলাই আমাকে না বলেই নাফিসা উত্তরায় আন্দোলনে যোগ দেয়। পরে প্রতিবেশীদের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাধা দিই। কিন্তু মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে ৩ আগস্ট সাভারে তার মামার বাসায় বেড়াতে যায়। নাফিসার স্কুল সাভারে হওয়ায় সেখানে তার অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিল। তাদের সঙ্গেই আমার মেয়ে সাভারে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলি খেয়ে শহিদ হয়েছে। কিন্তু একটাই কষ্ট-যেই স্বাধীনতার জন্য আমার মেয়েটা প্রাণ দিল, সেই স্বাধীন দেশেই আমার মেয়ে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেতে পারেনি।
আমার কোল শূন্য করে দিয়েছে-আফনানের মা : লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সাদ আল আফনান পাটওয়ারী জিপিএ ৪.১৭ পেয়েছেন। তিনি ভিক্টোরি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের বাঞ্চানগর গ্রামের বাসটার্মিনাল এলাকার মৃত সালেহ আহমেদের ছেলে। ৪ আগস্ট মাদাম ব্রিজ এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
মঙ্গলবার দুপুরে আফনানের মা নাছিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আফনানের ভালো ফল আমার কাছে খুশির খবর। কিন্তু যাকে নিয়ে আমি খুশি উদ্যাপন করব, সে তো আমার কাছে নেই। গুলি করে আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। আমার কোল শূন্য করে দিয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরের সমন্বয়ক এনামুল হক বলেন, আফনান লক্ষ্মীপুরের প্রথম শহিদ। সমন্বয়ক আরমান হোসেন বলেন, মেধার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মেধাবী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে।
কান্না ছাড়া কোনো কথা নেই শিহাবের মায়ের : বেলকুচি-চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের শিহাব হোসেন জিপিএ ৪.০৮ পেয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে মা সাহানা খাতুন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বুক চাপড়ে অঝোরে কান্না ছাড়া কোনো কথা বলতে পারেননি।
শিহাব এনায়েতপুর থানার মাধবপুর গ্রামের প্রবাসী শফি মিয়ার বড় ছেলে। তিনি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় ছুটিতে বাড়িতে এসে সবার সঙ্গে সেদিন আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে নিহত হন তিনি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এনায়েতপুরের সমন্বয়ক ফয়সাল খন্দকার বলেন, শিহাব এনায়েতপুরের প্রথম শহিদ। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেন পরকালেও তাকে সফলতা দান করেন।
মাহাদীর নামটাও নেই তালিকায় : ১৯ জুলাই যাত্রাবাড়ী এলাকা রণক্ষেত্র। কাজলায় ছাত্র-জনতার মিছিলে পুলিশের গুলিতে মারা যান সরকারি তোলারাম কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ। ৩.১৭ পেয়েছেন তিনি। তিনি সাতটি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। বড় ভাই মেরাজ উদ্দিন বলেন, একটা আক্ষেপের জায়গা আছে। সেটা হচ্ছে যারা নাগরিক কমিটিতে আছেন বা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে আছেন, যতকিছুই আছে। আজ কতদিন হয়ে গেছে, আমার ভাই প্রথমদিকের শহিদ। অথচ তার নামটা এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নেই। তিনি বলেন, পান্থ ৩.১৭ পেয়েছে। এখন এগুলো বলার ভাষা নেই। এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কেউ আসেনি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেরও কেউ আসেননি।
প্রিয় এসে বলবে, মা আমি পাশ করেছি : যশোর ব্যুরো জানায়, যশোর সরকারি সিটি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন শাওয়ান্ত মেহতাপ প্রিয়। এ গ্রেড (৪.১০) পেয়ে পাশ করেছেন। ৫ আগস্ট শহরে বিজয় মিছিলে বের হয়ে জাবির হোটেল ট্রাজেডিতে পুড়ে অঙ্গার হন তিনি। প্রিয় মুজিব সড়কের হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক শাকিল ওয়াহিদ ও গৃহিণী রেহেনা পারভীন দম্পতির সন্তান।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয়র ব্যবহৃত জিনিসপত্র খুলে খুলে দেখাচ্ছেন রেহেনা পারভীন। টেবিলের পাশে সাজিয়ে রাখা একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির নানা বই নেড়েচেড়ে মুছছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে যে কত ভালো। বাবা-মা ছাড়া তার জীবনে কিছু ছিল না। স্বপ্ন দেখত তার দুই ভাইকে মানুষ করবে, মা-বাবাকেও দেখাশোনা করবে। এসব এখন শুধুই স্বপ্ন! আগুনে পুড়ে আমার স্বপ্নটা শূন্য করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মনে হয়, এখনই আমার কাছে ফিরে আসবে। বলবে, দেখ মা আমি পাশ করেছি। তোমার দোয়া কাজে লেগেছে। সবাই বলছে, সে ভালো রেজাল্ট করেছে। আমার ভেতরে দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।’
বাবা শাকিল ওয়াহিদ বারবার রেহেনাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে বলত, বাবা তোমার বয়স হয়ে গেছে, তোমার দিয়ে কিছু হবে না। আমি আইএলটিএস করব, বিদেশ যাব। সংসারটা আমিই দেখব। সঙ্গে ছোট দুই ভাইকে বড় করব।’
তিনি বলেন, আমার ছেলে তো ৫ তারিখে মারা গেছে। তবে আজ রেজাল্টটার খবর শুনে আত্মীয়স্বজনরা যখন ফোন দিচ্ছে; তখন বুকের ভেতরটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আমার সন্তানের দ্বিতীয় মৃত্যু হলো।’
স্বপ্ন স্পর্শ করতে পারল না সুজয় : নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি জানান, নবীনগর উপজেলার বিটঘর (দ.পাড়া) গ্রামের তানজিল মাহমুদ সুজয় ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের (গাজীপুর) ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সুজয়। মা তাহমিনা আক্তার বলেন, কিন্তু সে তো আর নেই। আমাদের জন্য অনেক কিছু করার স্বপ্ন ছিল ওর। কিন্তু সব শেষ। আমরা গরিব মানুষ, কীভাবে চলব? ছেলের বাবা আগে রোজগার করত, এখন আর পারে না।
বাবা শফিকুল ইসলামের প্রশ্ন, ছেলে বেঁচে নেই, ‘তার এ ফল দিয়ে কী হবে? নিজেরা না খেয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। ঢাকায় পড়তে পাঠিয়েছি। ওর অনেক স্বপ্ন ছিল। সব স্বপ্ন গুলি মুছে ফেলেছে।’
সুজয়ের দুই বোন-এনি ও স্বর্ণা ভাইয়ের স্মৃতি আঁকড়ে বলে, আমার ভাই দেশের জন্য শহিদ হয়েছে। দেশকে নতুন করে স্বাধীনতা দিয়েছে। আমরা ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।
খুলি উড়ে যাওয়া ফয়সাল পেয়েছে জিপিএ ৪.৩৫ : দেবিদ্বার (কুমিল্লা) প্রতিনিধি জানান, শহিদ ফয়সাল সরকার জিপিএ-৪.৩৫ পেয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বড় দুলাভাই মো. আবদুর রহিম এ তথ্য জানান। ফয়সালের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার কাচিসাইর গ্রামে।
তিনি সংসারের অভাব ঘুচাতে শ্যামলী পরিবহণের একটি বাসে সুপারভাইজার হিসাবে কাজ করতেন এবং বাবা-মা, ভাইসহ পরিবার নিয়ে থাকতেন আবদুল্লাহপুর এলাকায় একটি ভাড়া বাসায়। ফয়সাল ঢাকার দক্ষিণখান এসএম মোজাম্মেল হক টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়েছিলেন।
ফয়সালের দুলাভাই আবদুর রহমান বলেন, কলিজা ফেটে যাচ্ছে। ফয়সাল আন্দোলনে শহিদ হয়েছে প্রায় তিন মাস আগে। এখন তার পরীক্ষার ফল হয়েছে, সে পাশ করেছে। তার বাবা খুব অসুস্থ; কানে কম শোনে, শুধু মানুষের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। ফয়সাল পাশ করেছে শুনে চোখের পানি ফেলছে। কারও কাছে কিছু বলছে না।
ফয়সালের মা হাজেরা বেগম বলেন, ‘রেজাল্ট দিয়া কী করুমু, আমার সোনার মানিক চানই তো নাই, তোমরা যদি পার আমার ফয়সাল কই শুয়ে আছে বলো, আমি আমার সোনার মানিকরে দেখতে যামু। আমার পোলা কতদিন আমারে মা কইয়া ডাক দেয় না, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে।’
১৯ জুলাই আবদুল্লাহপুরের শ্যামলী পরিবহণের কাউন্টারে যাবেন বলে বাসা থেকে বের হন ফয়সাল। ১ আগস্ট আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামে বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করা লাশের ছবিতে সন্ধান মেলে। তবে কবর কোথায় জানা নেই।