কর্মবিরতিতে নার্স ও মিডওয়াইফারি
চরম ভোগান্তি সরকারি হাসপাতালে
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্স ও মিডওয়াইফারিদের টানা ৪ ঘণ্টা কর্মবিরতিতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়েছেন সেবা নিতে আসা রোগীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার কর্মসূচি পালনকালে একাধিক হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, নার্সদের কেউ দায়িত্ব পালন করছেন না। তাদের টেবিলে লেখা ছিল ‘কর্মবিরতি’। রোগী সেবা না করে তখন তারা ব্যস্ত ছিলেন হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে কর্মসূচি পালনে।
হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, চিকিৎসকের নির্দেশনা অনুযায়ী রোগীদের ইনজেকশন দেওয়া, ওষুধ খাওয়ানো, শরীরের তাপমাত্রা মাপা, ক্ষতস্থানে ড্রেসিং করার কাজগুলো নার্সরাই করেন। কিন্তু কর্মবিরতির কারণে ৪ ঘণ্টা বহিঃবিভাগের পাশাপাশি অস্ত্রোপচারসহ সব ধরনের সেবা কার্যক্রমও ছিল বন্ধ।
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নার্সদের ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে শুধু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নয়, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতাল ও জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালেও রোগীদের একই রকম দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে। সেখানেও নার্স না থাকায় রোগীরা সকালে তাদের সেবা পাননি। ডাক্তাররা এসে রুটিন রাউন্ড দিয়েছেন, প্রেসক্রিপশনও লিখে দিয়েছেন। কিন্তু সেই অনুযায়ী কোনো ওষুধ পাননি রোগীরা। দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীর স্বজনরা কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আবার অনেককেই বেসরকারি হাসপাতালে চলে যেতে দেখা গেছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে প্রচণ্ড সর্দি-জ্বর কাশি নিয়ে দুদিন আগে সাভার থেকে এসে ভর্তি হয়েছে চার বছরের শিশু হাবিবা। চিকিৎসকরা তার বাবা মুহিবুল হোসেনকে জানিয়েছেন ডেঙ্গু হতে পারে। তাই মঙ্গলবার সকালে রোগীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ ও প্রস্রাব পরীক্ষা করতে বলেছেন। কিন্তু সকাল থেকেই কোনো নার্স না থাকায় নমুনা সংগ্রহ করতে পারেননি মুহিবুল। তাই দুপুর পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নিরীক্ষা করাতে পারেননি। এতে ক্ষুব্ধ মুহিবুল বলেন, সকালে ডাক্তার প্রেসক্রিপশন লিখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বলেছেন। সেই সঙ্গে বলেছেন, নার্সরা সব ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু ওয়ার্ডে কোনো নার্সই নেই। রাত থেকে মেয়েকে শুধু স্যালাইনই দেওয়া হচ্ছে। আমরা তো অসহায়। রোগীদের জিম্মি করে এ কেমন কর্মবিরতি। তার মতো শিশু ওয়ার্ডে আরও অনেকেই নার্স না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
নার্স মিডওয়াইফারিরা বলছেন, তাদের দাবি একটাই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক, পরিচালক এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও রেজিস্ট্রার পদ থেকে সব ক্যাডার কর্মকর্তাকে অপসারণ করে সেসব পদে অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়ন করতে হবে। আর এসব দাবিতে এর আগেও আন্দোলন করে আসছিল নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকালে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে বৈঠকের পর আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করেছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদ। এর আগে ১ ও ২ অক্টোবর দুদিন ৩ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেন নার্সরা। পরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে অভিজ্ঞ নার্সদের পদায়নের এক দফা দাবি পূরণের আশ্বাসে ৩ অক্টোবর পর্যন্ত কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়। কিন্তু সরকারের আশ্বাসের পরও এক দফা এক দাবি মেনে না নেওয়ায় আবারও মঙ্গল ও বুধবার ৪ ঘণ্টার কর্মবিরতির ঘোষণা দেয় পরিষদ। তবে কর্মবিরতি চলাকালীন হাসপাতালে জরুরি ও মুমূর্ষু রোগীদের সেবায় নার্স ও মিডওয়াইফারি জরুরি স্কোয়াডে নিয়োজিত থাকবে বলেও জানানো হয়েছিল।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, আমরা পরিষদের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের প্রতিনিধি দল বিকালে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করে দাবিগুলো জানিয়েছি। উপদেষ্টা আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন এবং বলেছেন অর্গানোগ্রাম করতে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। আমরা উপদেষ্টার কথায় আশ্বস্ত হয়ে পরবর্তী কর্মসূচি স্থগিত করেছি।