বরখাস্ত ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মিকে আদালতে হাজির হতে সমন
শাস্তি দাবিতে রংপুর ও লালমনিরহাটে বিক্ষোভ
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
আবু সাঈদসহ নিহত অন্যদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্যের অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম ঊর্মির বিরুদ্ধে মানহানির মামলা গ্রহণ করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হতে সমন জারি করা হয়েছে। এদিকে ঊর্মির ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রত্যাখ্যান করে তাকে স্থায়ী বরখাস্ত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রংপুর ও লালমনিরহাটে বিক্ষোভ করেছেন বিক্ষুব্ধ মানুষ।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে মঙ্গলবার গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. খাদেমুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, শুনানি শেষে আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছেন এবং ২৮ অক্টোবর তাকে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেছেন। ওইদিন যদি তিনি আদালতে হাজির না হন, তাহলে আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারবেন।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ৫ অক্টোবর আসামি তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুধু শহিদ আবু সাঈদ নন, সরকারের দায়িত্বশীল পদে থাকা সত্ত্বেও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সরকার ও সরকারপ্রধান নোবেলবিজয়ী প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধেও অবমাননাকর বক্তব্য ফেসবুক লেখেন। যার মাধ্যমে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে সংবিধানসম্মতভাবে গঠিত একটি সরকারপ্রধান সম্পর্কে বিষোদ্গার করা হয়েছে এবং সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে জনমনে ভীতি সৃষ্টি করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি। সেখানে তিনি লেখেন, ‘সাংবিধানিক ভিত্তিহীন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, রিসেট বাটনে পুশ করা হয়েছে। অতীত মুছে গেছে। রিসেট বাটনে ক্লিক করে দেশের সব অতীত ইতিহাস মুছে ফেলেছেন তিনি। এতই সহজ। কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গেছে আপনার, মহাশয়।’ এরপর তার এ পোস্টটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ ঘটনায় রোববার ঊর্মিকে ওএসডি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। এরপর সোমবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরও আগে অপর এক স্ট্যাটাসে সহকারী কমিশনার তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি লেখেন, ‘আবু সাঈদ! বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী সন্ত্রাসী একটা ছেলে, যে কি না বিশৃঙ্খলা করতে গিয়ে নিজের দলের লোকের হাতে মারা পড়ল, সে নাকি শহিদ! এটাও এখন মানা লাগবে! আর এ আইন ভঙ্গকারী সন্ত্রাসীর জন্য দেশে অথর্ব জাতি প্রগতিশীল সমাজ কেঁদেকেটে বুক ভাসিয়েছে।’ ব্যুরো ও প্রতিনিধির পাঠানো খবর-
রংপুর : নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মিকে দ্রত গ্রেফতার এবং তার শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার শহিদ আবু সাঈদের পরিবার ও এলাকাবাসীর পক্ষে পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাব চত্বরে মানববন্ধন করা হয়েছে। এতে বক্তৃতা করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, পীরগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদুন্নবী পলাশ, সদস্যসচিব জাকির হোসেন, যুগ্ম আহ্বায়ক শাহিনুজ্জামান শাহিন, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আজাদ, শহিদ আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী, আবুল হোসেন, সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম প্রমুখ। বক্তরা বলেন, স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের জন্য যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, সে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রথম শহিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। অথচ সরকারের একজন কর্মকর্তা হয়ে আবু সাঈদ সম্পর্কে ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মি যে ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন, তা অগ্রহণযোগ্য। এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পীরগঞ্জ উপজেলা শাখাও একই দাবিতে উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল এবং গুলশান মোড়ে প্রতিবাদ সভা করেছে ।
লালমনিরহাট : ঊর্মিকে গ্রেফতার ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে লালমনিরহাট সচেতন নাগরিক ও ছাত্রসমাজ। মঙ্গলবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন তারা। এ সময় বক্তরা বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট তাপসী তাবাসসুম ঊর্মি আসলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করছেন।