সংস্কার ও নির্বাচনে গুরুত্ব জামায়াতের
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে সংস্কার ও নির্বাচন দুটিরই রোডম্যাপ চেয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ৯ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে নিজেদের রূপরেখা তুলে ধরার কথাও জানিয়েছে দলটি। শনিবার বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান। জামায়াতের আমিরের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল সংলাপে অংশ নেয়।
বিএনপির পর জামায়াতের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সংলাপ করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। সংলাপ শেষে জামায়াতের আমির বলেন, আমরা দুটি রোডম্যাপ চেয়েছি। দেশবাসীকে জানিয়েছি, সরকারকেও জানিয়েছি। একটা রোডম্যাপ হবে সংস্কারের এবং আরেকটা হবে নির্বাচনের। সংস্কারটা সফল হলে নির্বাচনটা সফল হবে। এজন্য দুটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) সঙ্গে আমাদের আরও সংলাপ হবে। আমরা শুরু থেকে বলে আসছিলাম সংস্কারের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। সেই যৌক্তিক সময়টা কী হবে? এটা নিয়ে অচিরেই আমরা কাজ করব। এটা দেরি হবে না, এভাবে আমরা সামনে এগোতে চাই। যৌক্তিক সময়টা যাতে আমরা বহাল রাখতে পারি। উনারা কোনো দ্বিমত পোষণ করেননি। আশা করি, এখানে কোনো সংকট তৈরি হবে না।
শফিকুর রহমান বলেন, আমরা দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে সবার সহযোগিতায় দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাক, সেই জায়গায় অবদান রাখতে চাই। এই সরকার একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তারা দেশ শাসনের জন্য আসেননি। দেশ শাসনের সুস্থ পথ বিনির্মাণের জন্য তারা এসেছেন। তাদের কাজ হচ্ছে, জাতি যা বঞ্চিত হয়েছে-পরপর তিন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তাই জাতির সামনে একটা গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া। এজন্য কিছু মৌলিক বিষয়ে তাদের সংস্কার করতেই হবে। কী কী মৌলিক বিষয়ে তারা সংস্কার করবেন সে ব্যাপারে আমরা কথাবার্তা বলেছি।
তিনি বলেন, আশা করছি, ৯ অক্টোবর রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে জাতির সামনে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো উন্মুক্ত করব। এটা প্রাথমিক তথ্য। জাতির সামনে তুলে ধরব যে, কী কী সংস্কার এ মুহূর্তে প্রয়োজন। কী কী সংস্কার আমাদের পরবর্তীতে লাগবে।
জামায়াতের আমির বলেন, দেশের চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। এক্ষেত্রে জনগণ এবং বর্তমান সরকার একসঙ্গে কিভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নয়ন সাধন করতে পারে এবং সব ধরনের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে-সে বিষয়গুলো নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। আশা করছি, বর্তমান যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আছে, তারা কোনো ধরনের পক্ষ-বিপক্ষের মানসিকতা না নিয়ে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেশকে একটা ভালো জায়গায় নিয়ে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে সক্ষম হবেন। এক্ষেত্রে এটাও আমরা আশা করছি, এই সময়টা দীর্ঘ হবে না।
তিনি বলেন, এখানে একটা প্রশ্ন এসেছে, আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুন্দর রাখার জন্য করণীয় কী? আমরা সেগুলো আলোচনা করেছি। আমরা বলেছি, সরকারের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন হবে।
তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসন ও অপশাসনের পর ৫ আগস্ট এ দেশে একটা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পরিবর্তন এসেছে। যে পরিবর্তনকে এদেশের আপাময় জনগণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমরা আরেকবার এই গণঅভ্যুত্থান যাদের নেতৃত্বে সংঘটিত হয়েছে, যারা জীবন দিয়েছেন, দেশে-প্রবাসে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের সবাইকে দেশবাসীর পক্ষ থেকে এবং বিশেষ করে আমাদের দলের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারকে আহ্বান জানিয়েছি।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন দলটির নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান ও মাওলানা আবদুল হামিদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন ও মোবারক হোসাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন। এতে সরকারের দিক থেকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন-উপদেষ্টা হাসান আরিফ, আদিলুর রহমান খান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম।