Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বেক্সিমকো গ্রুপের কারসাজি

রপ্তানির ৬২৩ কোটি টাকা পাচার

Icon

সাদ্দাম হোসেন ইমরান

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

রপ্তানির ৬২৩ কোটি টাকা পাচার

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মালিকানাধীন ৯টি গার্মেন্টস গত ২ বছরে ৬২৩ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি করলেও সেই টাকা দেশে আনেনি।

একইভাবে আরও ৯৮টি প্রতিষ্ঠান ২৬৫ কোটি টাকা দেশে আনেনি। এ তালিকায় নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপসহ আরও কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। অর্থ দেশে না ফেরায় প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিচালকদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা এবং কর ফাঁকি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

কাস্টমস আইনে পণ্য চালান জাহাজীকরণের ১২০ দিনের মধ্যে অথবা বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্ধিত সময়ের মধ্যে পণ্যের রপ্তানি মূল্য প্রত্যাবাসিত হওয়া এবং এর সপক্ষে প্রতিষ্ঠানের লিয়েন ব্যাংকে পিআরসি (প্রসিড রিয়েলাইজেশন সার্টিফিকেট) জারির বিধান রয়েছে। অথচ ৯৯টি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ৯২০ কোটি টাকা (এক ডলার ১১৮ টাকা ধরে) দেশে আনেনি।

গত ১০ সেপ্টেম্বর ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট থেকে এনবিআরে পাঠানো এক চিঠিতে বলা হয়েছে, গত এক বছরে ২০৩টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ১৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলার ওভার ডিউ-এর বিপরীতে সময়ে সময়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়। এর মধ্যে ১০৪টি প্রতিষ্ঠানের রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসিত হয়েছে, যা প্রায় ৮ কোটি ডলার।

অবশিষ্ট ৯৯টি প্রতিষ্ঠান ৭ কোটি ৭৯ লাখ ডলার অপ্রত্যাবাসিত হয়েছে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৯২০ কোটি টাকা। এক কোটি টাকার বেশি ওভারডিউ আছে-এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩২টি। এসব প্রতিষ্ঠান মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারসংশ্লিষ্ট কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শেয়ারহোল্ডাররা আয়কর ফাঁকি দিয়েছে কি না, তা কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের মাধ্যমে তদন্তের পরামর্শ দেওয়া হয় চিঠিতে।

বেক্সিমকো গ্রুপের যেসব প্রতিষ্ঠানের টাকা দেশে আসেনি, সেগুলো হচ্ছে-নিউ ঢাকা ইন্ডাস্ট্রির ২৫ লাখ ২৬ হাজার, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলসের ২০ কোটি ৯৬ লাখ, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস লিমিটেডের ২২৪ কোটি ৫৫ লাখ, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস লিমিটেডের ২৭১ কোটি ৭১ লাখ, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের ৮৯ লাখ ১৬ হাজার, আরবার ফ্যাশনের ১ কোটি ৪২ লাখ, ইসেস ফ্যাশনস লিমিটেডের ৪৫ কোটি ১০ লাখ, পিরলেস গার্মেন্টস ২৩ কোটি ৫৮ লাখ এবং কাঁচপুর অ্যাপারেল লিমিটেড ৩৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

বিজিএমইএ-এর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সফিউল্লাহ। ওয়েবসাইটে দেওয়া নম্বরে বুধবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। হোয়াটসঅ্যাপে অর্থ প্রত্যাবাসন না করার বিষয়ে জানতে চেয়ে মেসেজ দেওয়া হলেও তিনি উত্তর দেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর বন্ড কশিনারেটের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বেক্সিমকো গ্রুপকে নানাভাবে ছাড় দিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান অডিট, ভিজিটসহ অন্য সব কার্যক্রমে তৎকালীন উপদেষ্টার প্রভাব খাটানো হতো। সাধারণ প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যবস্থা নিতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হয়রানির অভিযোগ করা হতো। এ নিয়ে কর্মকর্তারা বেশ অস্বস্তিতে ছিলেন।

অন্যদিকে বেক্সিমকোর অর্থ পাচারের প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এ ঘটনায় সালমান এফ রহমানসহ ছেলে, ভাই, ভাতিজাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। সিআইডির তদন্তে উঠে এসেছে বেক্সিমকোর ১৭টি প্রতিষ্ঠান দুবাই, সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানি করেছে। দুবাইয়ের যে প্রতিষ্ঠানে বেক্সিমকো পোশাক রপ্তানি দেখিয়েছে, সেটি সালমান এফ রহমানের পরিবারের।

কেবল পোশাক রপ্তানির আড়ালে প্রায় ৮ কোটি ডলার পাচার করেছে বেক্সিমকো গ্রুপ, যা বর্তমান বাজারমূল্যে ৯৫৭ কোটি টাকা। অপরদিকে ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বিএবির সাবেক সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ নজরুল ইসলাম মজুমদারের নাসা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন ড্রেসেস ২০১৮ সালের ৩ ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার পণ্য রপ্তানি করেছে। কিন্তু দেশে কোনো টাকা আসেনি।

চট্টগ্রামভিত্তিক কেডিএস গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেডিএস অ্যাকসেসরিজ ১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা দেশে আনেনি। মোহাম্মদী গ্রুপের তিনটি প্রতিষ্ঠান রপ্তানি করলেও টাকা দেশে আনেনি। প্রতিষ্ঠান তিনটির মধ্যে এমজি শরিফটেক্স ১৯ কোটি ৬৮ লাখ, এমজি নাইস স্ট্রিচ ২৩ কোটি ৬৫ লাখ এবং মোহাম্মদী গ্রুপ ২ কোটি ৪০ লাখ টাকা আনেনি।

এ তালিকায় আরও আছে এসকিউ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এসকিউ বিরিচিনা ৬৫ কোটি ৮৯ লাখ, কেয়া গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস ১৫ কোটি ৬৩ লাখ, ডিবিএল গ্রুপের কালার সিটি ১ কোটি ১৩ লাখ, আজিম অ্যান্ড সন ১ কোটি ৩৫ লাখ, উইনওয়্যার লিমিটেড প্রায় ৭ কোটি, ফ্রেন্ডস স্টাইল ওয়্যার ৫ কোটি ৩৮ লাখ, সোয়ান নিট কম্পোজিট ৩৮ কোটি ৬৪ লাখ, কটস বাংলাদেশ লি. ৮ কোটি ৩৬ লাখ, ক্লাসিফিয়া ফ্যাশন লি. ৪ কোটি ২৬ লাখ, প্যানাসি নিটেড ক্রিয়েশানস ১ কোটি ৩৯ লাখ, সুপ্তি সুয়েটার ১ কোটি ৫১ লাখ, আরবান ফ্যাশন ১ কোটি ৪২ লাখ, নিপা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান কেসি জ্যাকেটওয়্যার কোম্পানি ৩ কোটি ২৭ লাখ, মন্ডল গ্রুপের আলিম নিট (বিডি) ২ কোটি ৫৭ লাখ, স্টফাটেক্স ফ্যাশন লি. ৭ কোটি ১৫ লাখ, সীমা ফ্যাশন ১ কোটি ৩৬ লাখ এবং ডিএসএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ওয়েমার্ট অ্যাপারেলস লি. ১ কোটি ২২ লাখ টাকা দেশে আনেনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম