Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

মতবিনিময় সভায় আসিফ নজরুল

সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাইবার নিরাপত্তা আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত

সাইবার সিকিউরিটি আইন অবশ্যই বাতিল করা উচিত বলে মন্তব্য করে আইন, প্রবাসীকল্যাণ ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, আমরা সেদিকেই যাব।

তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে আইনটি পুরোটা বাতিল করব নাকি কিছু অংশ রাখব এই বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে নেব। পরে নতুন যে আইন হবে এটার মূল উদ্দেশ্য হবে নাগরিককে সুরক্ষা দেওয়া। সেখানে নারী ও শিশুদের জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি রাখার ব্যবস্থা করব। এআই বা নতুন টেকনোলজি বিষয়েও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলেও জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ সংশোধনবিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন। ড. আসিফ নজরুলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’ সময়োপযোগী করার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত খসড়া সংশোধনী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচকদের প্রায় সবাই সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করে নতুন আইন করার পরামর্শ দেন।

সভাপতির বক্তব্যে সাইবার সিকিউরিটি আইন বাতিলের পূর্বে যে মামলাগুলো ছিল সেগুলো প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জানিয়ে ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমাদের একটা ধারণা আছে, আইন মন্ত্রণালয় বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চাইলেই সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারে। সেটা সত্যি নয়। একটা মামলার বিভিন্ন স্তর থাকে। পুলিশ তদন্ত স্তর, চার্জশিটের পরবর্তী স্তর থাকে, আবার সাজা হয়ে গেলে অন্যরকম অবস্থা হয়। সব মামলা ইচ্ছে করলেই প্রত্যাহার করা যায় না।

যে মামলায় সাজা হয়ে যায়, সেখানে যার সাজা হয়েছে, তার আবেদন ছাড়া মামলা প্রত্যাহারের সুযোগ নেই উল্লেখ করে আইন উপদেষ্টা বলেন, কোনোভাবেই আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়। অনেকেই বলেন, এটা স্বৈরাচার আমলের মামলা, প্রত্যাহার করা হচ্ছে না কেন? যখন সাজা হয়ে যায়, যত ভুয়া মামলাই হোক, ফ্যাসিস্ট সরকারের ফরমায়েশি আদালতে সাজা হয়ে গেলে, আপনি-আমি যতই বলি না কেন চাইলেই সেটা প্রত্যাহার করা যায় না। যারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তাদের আবেদন করতে হবে। এটা একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আমাদের গুড ইনটেনশন আছে। আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য আছে। আমরা জানি কি করতে হবে। কিভাবে করতে হবে তা নিয়ে আমাদের আরেকটু আলোচনার প্রয়োজন আছে। কিন্তু আপনাদের কথা দিতে পারি, আমরা পর্যায়ক্রমে দেশকে সব ধরনের কালাকানুন থেকে মুক্ত করব। বৈষম্যহীন ও শোষণহীন বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে, রাষ্ট্র সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, আমাদের আইন সংস্কারের মধ্যে তার প্রতিফলন আপনারা পাবেন।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, এই আইনটা দীর্ঘদিন ধরেই সমালোচিত ছিল। আপনাদের সবার আলোচনাতেও উঠে এসেছে যে, কিভাবে আইনটির অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। আমি বলব, অপপ্রয়োগের জন্যই আসলে আইনটি করা হয়েছিল। পরে এটা একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।

ফলে এই আইনের পেছনের মনস্তত্ত্বটা আমাদের কাছে এখন স্পষ্ট। ফলে আইনটাকে আমরা যতভাবেই সংশোধন করি না কেন, এই মনোস্তত্ত্বের কারণে কিন্তু মানুষের কাছে অনাস্থাটা থেকেই যাবে। এটা একটা বড় সমস্যা। ফলে সম্পূর্ণ সংশোধন করে শুধু নামটা রেখে দিলেও কিন্তু মানুষ আইনটিকে বিশ্বাস করবে না। তিনি আরও বলেন, মনস্তত্ত্বের এই কারণেই ইনটেনশনটা পরিবর্তন করে সুরক্ষার জন্য আইনটি করা উচিত। এখানে অনেক প্রস্তাবনা এসেছে, সেগুলো আমলে নেওয়া উচিত।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এ ধরনের আইনে যে মৌলিক প্রভিশনগুলো থাকার কথা সেগুলো কিন্তু এখানে ছিল না। এটাকে হাতিয়ার করা হয়েছিল মানুষের বাকস্বধীনতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করার জন্য। বৈষম্যবিরোধী রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে এ ধরনের আইন জাতি কখনোই গ্রহণ করবে না বলে আমি মনে করি।

সভায় অনলাইনে যুক্ত হয়ে সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, কিভাবে সবার কণ্ঠরোধ করার জন্য আইনটি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা আমরা সবাই জানি।

আলোচনায় আরও অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুজ্জামান ভূঁইয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ, লেখক ও নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান, ঢাকা ট্রিবিউনের নির্বাহী সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শিশির মনির, আব্দুল্লাহ আল নোমান, মোস্তাফিজুর রহমান খান।

প্রিয়া আহসান চৌধুরী, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইমুম রেজা পিয়াস, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির শিক্ষক ড. নোভা আহমেদ, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেসি অফিসার মণিষা বিশ্বাস, তরুণ লেখক ও মানবাধিকারকর্মী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ, মানবাধিকারকর্মী রেজাউল রহমান লেনিন, আর্টিকেল নাইনটিনের শেখ মানজুর ই আলম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অন্যতম ভিকটিম খাদিজাতুল কোবরা প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম