Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দুদকের মামলার প্রধান আসামি

‘দুর্নীতিবাজ’ সচিবের নিয়োগ বাতিল

Icon

মাহবুব আলম লাবলু

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

‘দুর্নীতিবাজ’ সচিবের নিয়োগ বাতিল

ছবি: সংগৃহীত

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে ইলাহী দাদ খানের দুই বছরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বিসিএস খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসাবে সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বেশ পরিচিত। তার অপকর্মের বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকদের নজরে এলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তার নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা দুর্নীতির মামলার প্রধান আসামি তিনি। বিদায়ি স্বৈরশাসকের দোসর হিসাবে খাদ্য বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। মেয়াদ শেষে এক বছরের চুক্তিতেও তাকে চাকরির সুযোগ দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। এমন ‘বিতর্কিত’ একজন কর্মকর্তাকে অন্তর্বর্তী সরকার দুই বছরের চুক্তিতে খাদ্যসচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার খবরে সমালোচনার ঝড় ওঠে। তার নিয়োগ চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে-এমন মন্তব্য করেছেন দুদক কর্মকর্তারা। তাদের মতে, প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে এখনো চেপে আছে পুরোনো সেই ভূত। তারাই অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ডকে বিতর্কিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এমন বিতর্কের ডালপালা মেলার খবরে মঙ্গলবার তার নিয়োগ বাতিলের খবর জানাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান ইলালী দাদ খানের নিয়োগ বাতিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মন্ত্রণালয় তার নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এর আগে সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ইলাহী দাদ খানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী ইলাহী দাদ খানকে অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে এ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যোগদানের তারিখ থেকে তার এ নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।

খাদ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, ইলাহী দাদ খান জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক প্রশাসন ও পরিচালক সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে ২০১৫ সালে তিনি এক বছরের চুক্তিতে দায়িত্ব পালন করে অবসরে যান। চাকরিতে থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে বেপরোয়া নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের একজন কর্মকর্তা ছিলেন তার দুর্নীতির সহযোগী।

দুদক সূত্র জানায়, ২০১০ সালে খাদ্য পরিদর্শক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয় খাদ্য অধিদপ্তর। সেখানে পৌনে চার লাখ আবেদন জমা পড়ে। পরের বছর ২০১১ সালে লিখিত পরীক্ষা হয়। তাতে উত্তীর্ণ হন ১৫ হাজার ২৩০ জন। উত্তরপত্র মূল্যায়নে ঘষামাজার নানা অভিযোগ ছিল। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে ২০১৩ সালে মৌখিক পরীক্ষার কার্যক্রম শেষে চূড়ান্ত ফলাফলে ৩২৮ জনকে খাদ্য পরিদর্শক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় শুরু করে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধান শেষে ইলাহী দাদ খানকে প্রধান আসামি করে ২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর রাজধানীর শাহবাগ থানায় দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মোহাম্মদ মনিরুল হক মামলা করেন। তদন্ত শেষে ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দেন তিনি। কিন্তু মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আসামিরা আদালতে পুনঃতদন্তের আবেদন করেন। আদালত পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। নতুন করে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান দুদকের উপপরিচালক আলী আকবর। তখন ইলাহী দাদ খান দুদকের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদকে প্রভাবিত করে চার্জশিট থেকে নিজের নাম বাদ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু চার্জশিটভুক্ত প্রধান আসামিকে বাদ দিলে আদালত তা গ্রহণ করবে না বলে এই অপচেষ্টায় ব্যর্থ হন। পরে মামলার মেরিট নষ্ট করতে তদন্ত কর্মকর্তাকে প্রভাবিত করে আসামি তালিকায় ৪৩ খাদ্য পরিদর্শকের নাম সংযুক্ত করে আদালতে ফের চার্জশিট জমা দেন। তাতেও প্রধান আসামি ছিলেন ইলাহী দাদ খান। চার্জশিটের গ্রহণযোগ্যতার শুনানির দিন তদন্ত কর্মকর্তার কূটকৌশল ধরে ফেলেন বিচারক। শুনানি শেষে অভিযোগ থেকে খাদ্য পরিদর্শকদের অব্যাহতি দিয়ে ইলাহী দাদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কিছুদিন আগে বিচার স্থগিত চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন ইলাহী দাদ খান। আদালত বিচারের ওপর চার মাসের স্থগিতাদেশ দেন। এর মধ্যে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ভোল পালটে ‘বঞ্চিতদের’ কাতারে দাঁড়িয়ে যান ইলাহী। সুযোগ বুঝে সংশ্লিষ্টদের ‘ম্যানেজ’ করে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাগিয়ে নিয়েছিলেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম