Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

পালানোর মিছিলে আওয়ামী দোসররা

সীমান্ত পার হতে কোটি টাকার চুক্তি

Icon

তোহুর আহমদ

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সীমান্ত পার হতে কোটি টাকার চুক্তি

সীমান্ত পার হতে কোটি টাকার চুক্তি

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ আওয়ামী দোসরদের অনেকেই দেশ ছাড়তে মরিয়া। দালাল সিন্ডিকেটের সহায়তায় কেউ কেউ ভারতে ঢুকতে কোটি টাকাও দিয়েছেন। তবে ২০ লাখের নিচে কেউ ঢুকতে পারেননি। কেউ আবার খুইয়েছেন মোটা অঙ্কের নগদ টাকা ও ডলার। কাউকে দিতে হয়েছে জীবনও। তবু ভারতে পালানোর মিছিল থামছে না। এ সুবাদে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা চিহ্নিত দালালদের পোয়াবারো।

অভিযোগ আছে, ভিআইপিদের অনেকে পার হওয়ার সময় দুদেশের প্রশাসনের লোকজনের সহায়তা নিয়েছেন। যদিও এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। আওয়ামী দোসরদের সাজানো প্রশাসন হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে অনেকে তাদের নির্বিঘ্নে দেশ ছাড়তে সব ধরনের সহায়তা দিয়েছেন এবং এখনো দিচ্ছেন।

এদিকে যারা ইতোমধ্যে ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন তাদের থাকা-খাওয়ার খরচ নিয়ে তেমন কোনো টেনশন নেই। দেশ থেকেই হুন্ডিতে দেদার যাচ্ছে টাকা। আবার কারও কারও মোটা অঙ্কের অর্থ তৃতীয় পক্ষ পুরোটাই গায়েব করে দিয়েছেন। এ রকম কিছু খবরও যুগান্তরের হাতে এসেছে। অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী ভিআইপিদের অনেকে ভারত থেকে দালালের মাধ্যমে নেপাল হয়ে পাড়ি জমিয়েছেন কাঙ্ক্ষিত দেশে। কেউ কেউ ভারত থেকে সরাসরি চলে গেছেন ইউরোপের কোনো দেশে। যেখানে আগে থেকেই তাদের বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। কারও কারও স্ত্রী-সন্তানও নাগরিকত্ব নিয়ে আছেন বহাল তবিয়তে।

বেনাপোল : হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ৫ আগস্ট মধ্যরাতে খোদ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের যশোরে চলে যান। সেখানে তাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিরাপদ স্থানে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরদিন তিনি বিশেষ প্রহরায় সীমান্ত অতিক্রম করেন। বিষয়টি যশোর ও বেনাপোলের বেশ কয়েকটি দায়িত্বশীল সূত্র যুগান্তরকে নিশ্চিত করেছে। তবে তারা পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে নারাজ। এছাড়া ৭ আগস্ট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সরকারসহ আরও বেশ কয়েকজন বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকেছেন। এমন খবর নিশ্চিত হওয়ার পর স্থানীয় বিক্ষুব্ধ লোকজন বিক্ষোভও করেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে নিজস্ব অস্ত্রধারী বাহিনী নিয়ে মাঠে নামেন যশোর-১ আসনের সাবেক এমপি শেখ আফিল উদ্দিন। পরে তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা হয়। বর্তমানে তিনি অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন। এছাড়া আত্মগোপনে রয়েছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, পৌর মেয়র নাসির উদ্দিন, সাবেক মেয়র আশরাফুল আলম ওরফে লিটন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদারসহ স্থানীয় নেতাদের অনেকে। এদের বেশ কয়েকজন ইতোমধ্যে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।

তবে বেনাপোল ছাড়াও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা পার্শ্ববর্তী পুটখালী ঘাট এলাকা দিয়ে ভারতে ঢোকেন। তাদের কেউ কেউ পুটখালীর দালাল সর্দার হিসাবে পরিচিত নাসিরের সহায়তায় দেশ ছাড়তে সক্ষম হন বলে জানা যায়। অনেক আগে থেকে এ ঘাটটি ধুড় পাচারের অন্যতম ঘাট হিসাবে পরিচিত। এছাড়া রঘুনাথপুর এলাকার দালাল বাদশা মল্লিক ও কলারোয়া সীমান্তের ভাদিয়ালি ঘাটে আক্তার চন্দনের সহায়তায় অনেকে ভারতে ঢুকছেন। আওয়ামী লীগের লোকজনকে সীমান্তের ওপারে সহায়তা করছেন কুখ্যাত ভারতীয় দালাল গৌতম দাস ও বাবুরাম।

দেশ ছেড়েছি : সম্প্রতি কাতারভিত্তিক টেলিভিশন আলজাজিরায় সম্প্রচার হওয়া এক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ইতোমধ্যে অন্য কোনো দেশে পালিয়ে গেছেন। আলোচিত প্রতিবেদনের এক জায়গায় জাবেদকে তার এক ঘনিষ্ঠজন প্রশ্ন করেন, ‘ভাই আপনি কি বের হতে পেরেছেন? এর উত্তরে জাবেদ বলেন হ্যাঁ, বেরিয়ে গেছি। প্রশ্নকর্তা তাকে ফের জিজ্ঞাসা করেন ‘তাহলে আপনি এখন কোথায়? জাবেদ এর সরাসরি উত্তর না দিয়ে অট্টোহাসি দিয়ে এক ধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।

জানা যায়, ৫ আগস্ট রাতেই দেশ ছাড়তে শাহজালাল বিমানবন্দরে যান জাবেদ। কিন্তু বিমানবন্দরের অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে বেনাপোল সীমান্তে চলে যান। পরদিন তিনি দালালদের সহায়তায় সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে ঢোকেন। পরে যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট ব্যবহার করে কলকাতা হয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। বর্তমানে তিনি পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

সূত্র বলছে, বেনাপোল ছাড়াও সাবেক সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা ভারতে ঢুকেছেন সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে। এদের মধ্যে সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম, তার ছোট ভাই নাজিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান শাহিন, পিরোজপুরের আলোচিত এমপি মহারাজ ও তার ছোট ভাই ভাণ্ডারিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান মিরাজ প্রাণ বাঁচাতে সুন্দরবনের খুলনা অংশের ভেতর দিয়ে হেঁটে ভারতে পালিয়ে যান। বর্তমানে তারা কলকাতায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

তবে ঝুঁকি নিয়ে এভাবে ভারতে পালাতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না। ভারতীয় অংশের দালালরা একা পেয়ে নির্যাতনের পর গলা টিপে হত্যা করে। এক পর্যায়ে তার কাছে থাকা অন্তত ২ কোটি নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। বেশ কয়েকদিন পড়ে থাকার পর পান্নার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।

সাতক্ষীরা : সরকার পতনের পর সাতক্ষীরা অঞ্চলের ভোমরা সীমান্তপথে ভারতে পালানোর সময় আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জনতার হাতে আটক হন। এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর ক্যাশিয়ার নিরব হোসেন ওরফে খোঁড়া টুটুল, খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেকের ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসেন এবং রূপসা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক চঞ্চল কুমার মিত্র। পরে দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর সহায়তায় তাদের স্থানীয় থানা পুলিশের কাছে তুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, কলারোয়া, দেবহাটা, কালীগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার সীমান্তের কয়েকটি জায়গা ধুড় (মানব) পাচারের জন্য দালালচক্রের স্বর্গরাজ্য হিসাবে পরিচিত। স্থল ও জলপথে এসব এলাকা দিয়ে অনেকটা প্রকাশ্যে সীমান্ত পারাপার হয়ে থাকে। বিশেষ করে কলারোয়া সীমান্তের অন্তত ৮টি চোরাপথ বা ঘাট দিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশের সুযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কেড়াগাছি সীমান্তের চারাবাড়ি, কেড়াগাছি রথখোলা, গাড়াখালী, দক্ষিণ ভাদিয়ালী ইউসুফের ঘাট, উত্তর ভাদিয়ালী আনারুল ও রাজ্জাকের ঘাট, হিজলদী, সুলতানপুর ও চান্দুড়িয়া ঘাট দিয়ে প্রকাশ্যে সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছেন অনেকে।

যুগান্তরের সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, স্বাভাবিক সময়ে এসব ঘাট দিয়ে পাসপোর্ট ছাড়া ভারত যেতে মাথাপিছু ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে টাকার অঙ্ক বেড়েছে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের লোকজন ৫ থেকে ২০ লাখ টাকার চুক্তিতে ভারতে ঢুকছেন। নির্দিষ্ট টাকা পেলে দালালচক্রের সদস্যরা নৌকাযোগে নির্বিঘ্নে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। পরে ভারতীয় অংশের দালালরা গোপন পথে শহরে যাওয়ার বাসরুট দেখিয়ে দেয়। কেউ কেউ ভারতে গিয়ে মাস চুক্তিতে কার বাসাবাড়িতে নিরাপদে থাকবেন সে ব্যবস্থাও করে দেওয়া হচ্ছে।

স্থানীয় বিজিবি সূত্র জানায়, পরিস্থিতি বিবেচনায় স্থানীয় দালালচক্রের সদস্যদের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সীমান্ত পাড়ি দিতে সহায়তা করছেন এমন বেশ কয়েকজন দালালকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এদের মধ্যে গোলাখালী গ্রামের মৃত সিয়াম উদ্দিনের ছেলে জামির আলী ওরফে জামু, সোরা গ্রামের সবুর শেখের ছেলে বাবু, কালিঞ্চি গ্রামের জসিম, আব্দুল্লাহ, পশ্চিম কৈখালী গ্রামের শফিকুল ইসলাম (জঙ্গল), শৈলখালী গ্রামের জুব্বার, মোনাজাত, ধীরাজ, মোস্তফা, ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রবিউল, পূর্ব কৈখালীর আরজ খান, রাজ, বাদশা, লতিফ, কয়ালপাড়ার আইজুল, মামুন, রফিকুল ওরফে নেদা, কারিকরপাড়ার আব্দুল্লাহ, পশ্চিম কৈখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান, গফ্ফার, গাড়াখালীর সাইদ ও আস্তাখালী গ্রামের হামিদকে গ্রেফতারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

জানতে চাইলে কলারোয়ার ভাদিয়ালী সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা লুৎফর আলী যুগান্তরকে বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে এলাকা অরক্ষিত থাকে। এ সময় গাড়িতে করে বহিরাগত অনেকেই আসেন। তাদের কেউ কেউ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে (ভারতে) যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে আওয়ামী লীগের নেতারা এ পথে ভারতে ঢুকছেন জানার পর স্থানীয় বাসিন্দারা সতর্ক অবস্থায় আছেন। সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে বিজিবি ক্যাম্পে খবর দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র জানায়, সরকার পতনের পর সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনীতিকদের মধ্যে যারা ভারতে যেতে সক্ষম হয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এমপি শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। এদের মধ্যে শামীম ওসমান দিল্লিতে এবং নওফেল ও বিপ্লব বড়ুয়া পশ্চিমবঙ্গে বারাসাত এলাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায়, দালালদের সহায়তায় ৮ সেপ্টেম্বর নওফেল ও বিপ্লব বড়ুয়া ভারতে পৌঁছান। পরে তারা বারাসাত এলাকায় চট্টগ্রামের জন্ম নেওয়া ভারতীয় নাগরিক জনৈক জুয়েলের বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এক পর্যায়ে ভারতে চিকিৎসাধীন বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপপরিচালক বিদ্যুৎ বড়ুয়া সেখানে এসে তাদের সঙ্গে যোগ দেন ।

কুমিল্লা : কুমিল্লার আলোচিত এমপি আ ক ম বাহার উদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক সিটি মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তবে তারা কখন কীভাবে ভারত গেলেন এ নিয়ে কুমিল্লায় নানা আলোচনা চলছে। কেউ কেউ বলছেন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল এলাকার ইউপি সদস্য এবং চিহ্নিত চোরাকারবারি সুমনের সহায়তায় তারা ভারতে পৌঁছাতে সক্ষম হন। ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে পরিবারসহ বাহারকে ভারতে পৌছে দেওয়া হয়।

অবশ্য বাহার ও তার পরিবার ছাড়াও দালালদের সহায়তায় কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে আরও বেশ কয়েকজন ভিআইপি ভারতে পৌঁছান। তাদের মধ্যে আছেন কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবু জাহের, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান আবু তৈয়ব ওরফে অপি, সদর উপজেলার অপসারিত চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল, ভাইস চেয়ারম্যান পাভেল, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ওরফে শহীদ, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রিন্টু, সাধারণ সম্পাদক পিয়াস, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল শাদী, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলামের ব্যক্তিগত সহকারী কামাল হোসেন।

সূত্র জানায়, কুমিল্লা সীমান্তের বিস্তীর্ণ এলাকা অরক্ষিত। বিশেষ করে শশীদল, তেতাভূমি, চরানল, খারেরা, সংকুচাইল, মাধবপুর, বড়জালা, নিশ্চিন্তপুর ও গোলাবাড়ী সীমান্ত এলাকা দিয়ে সহজেই দেশ ছাড়ছেন অনেকে। বর্তমানে এসব এলাকায় দালালচক্রের শতাধিক সদস্য সক্রিয়। এদের মধ্যে বুড়িচং উপজেলার খারেরা সীমান্তের হানু মিয়া, রমিজ মেম্বার, মাদক ব্যবসায়ী শাহীন, জহির, মতিনগরের ওয়াসিম, বিষ্ণপুরের কামাল, কেরানীনগরের সাইফুল, গোলাবাড়ীর সবুজ, নিশ্চিন্তপুরের আমির হামজা, রাসেল ও মাইনুদ্দিন অন্যতম।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দালালদের সহায়তায় একের পর এক আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালাতে সক্ষম হওয়ায় স্থানীয়দের অনেকে ক্ষুব্ধ। এ কারণে এলাকায় অপরিচিত কাউকে দেখে সন্দেহ হলে তাদের ধরে বিজিবির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে খারেরা সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারতে পালানোর সময় মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএম শাহাবুদ্দিনকে আটকের পর বিজিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সীমান্ত পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কুমিল্লা এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৬০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল জাবের বিন জাব্বার যুগান্তরকে বলেন, মানব পাচার, ভারতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ রোধ এবং চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে বিজিবি সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। চলমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অপরাধীদের অনেকেই সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ কারণে সীমান্তের বিশেষ এলাকাগুলোতে বিজিবি সদস্যদের টহল আরও জোরদার করা হয়েছে।

আলোচিত ধোবাউড়া : বিজিবির কড়া অবস্থান থাকলেও সরকার পতনের পর ময়মনসিংহের ধোবাউড়া-হালুয়াঘাটের অরক্ষিত সীমান্ত পথে দেশ ছেড়েছেন অনেকে। বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়ামাত্রই স্থানীয় সাবেক এমপি জুয়েল আরেং ধোবাউড়া সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। পরে গফরগাঁওয়ের আলোচিত সাবেক এমপি ফাহামি গোলন্দাজ বাবেল ওরফে ছোট গোলন্দাজ, ময়মনসিংহ সদরের এমপি মোহিতুর রহমান শান্ত ও ফুলপুর তারাকান্দার এমপি শরিফ আহম্মেদ এ পথ ধরেই দেশ ছেড়েছেন বলে এলাকায় গুঞ্জন রয়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, আন্তঃদেশীয় দালালচক্রের সদস্য হিসাবে স্থানীয় বেশ কয়েকজনের নাম আছে বিজিবির তালিকায়। এদের মধ্যে সমনিয়াপাড়ার আব্দুস সাত্তার, নলকুড়া গ্রামের বিল্লাল মেম্বার ও হরমুজ, উত্তর খয়রাকুড়ি গ্রামের আলম, কুচপাড়া গ্রামের মাইনু, উত্তর বাজারের আরফান, সাগর ও সুমন, শাপলা বাজারের সিরাজুল এবং আকনপাড়ার নাহিদ ও সায়েম অন্যতম। মূলত এদের সহায়তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতারা ভারতে পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন। এর মধ্যে ভারতে পালানোর সময় সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবু ও শ্যামল দত্ত ধোবাউড়া সীমান্তে আটক হন ১৬ সেপ্টেম্বর।

স্থানীয়রা জানান, কলমাকান্দা উপজেলার বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকা দীর্ঘদিন ধরেই অরক্ষিত। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি এলাকায় বিজিবির ন্যূনতম পাহারা নেই। বিশেষ করে লেংগুরা ইউনিয়নের সাত শহিদের মাজার কালাপানি, কাঁঠালবাড়ী খারনৈ ইউনিয়নের কচুগড়া, রংছাতি ইউনিয়নের পাতলা বন ও গোবিন্দপুর বল মাঠ এলাকা দিয়ে প্রকাশ্যে সীমান্ত পারাপার চলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক রাজনীতিক যুগান্তরকে বলেন, সরকার পতনের পর নেত্রকোনা-১ আসনের সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সফিউল আলম চৌধুরী নাদেলসহ বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আকস্মিক কলমাকান্দা এলাকায় হাজির হন। পরে তারা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে চলে যান। এভাবে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে আওয়ামী দোসররা কীভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে তা জানতে সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন পর্যায়ে যুগান্তরের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম