Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিপদ কেটে যায়নি, সতর্ক থাকতে হবে: তারেক রহমান

Icon

এটিএম নিজাম, কিশোরগঞ্জ ব্যুরো

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিপদ কেটে যায়নি, সতর্ক থাকতে হবে: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। পতন হওয়ার পরেও স্বৈরাচারের দোসররা এখনো দেশে রয়ে গেছে। স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা তাদের ষড়যন্ত্রকে অব্যাহত রেখেছে। গণতন্ত্রের পক্ষে সব রাজনৈতিক দল ও প্রতিটি মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। একইভাবে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করব। দেশে সব বিপদ কেটে যায়নি, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা বারবার বলছি বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এ সরকারকে ব্যর্থ করতে দেওয়া যাবে না। জনগণের প্রত্যাশা জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে পাওয়া। বিগত ১৭ বছর সংগ্রাম করে সেই অধিকার যাতে সঠিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় তার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। কিন্তু এটিও সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে জনগণের কাজ যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। আবার কোনো স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ না পায়। আজকে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে তাদের প্রিয় দল বিএনপি জনগণের সমর্থন নিয়ে আগামী সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে, তাদের পক্ষে কাজ করবে। বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে একটি সম্ভাবনাময় দেশ, একটি সম্ভাবনাময় জাতি। জয় পেতে হলে আমাদের আন্দোলন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে। সোমবার বিকালে কিশোরগঞ্জের পুরাতন স্টেডিয়ামে জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশ ও বিগত ছাত্রজনতার আন্দোলনে হতাহতের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর এবার নির্বিঘ্ন পরিবেশে কর্মসূচি করেছে জেলা বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।

এর আগে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গুম-খুন, হামলায় আহত ক্ষতিগ্রস্ত ও তাদের পরিবারের সদস্যরা তাদের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরেন জনসভায়। বিকাল ৩টায় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বেলা ১২টার আগে থেকেই মিছিল নিয়ে আসতে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা। কিশোরগঞ্জ সদর, অষ্টগ্রাম, ইটনা, কটিয়াদী, ভৈরব, করিমগঞ্জ, বাজিতপুর, তাড়াইল, হোসেনপুর, পাকুন্দিয়া, কুলিয়ারচর, মিঠামইন, নিকলী এলাকার নেতাকর্মীরা হাতে জাতীয় ও দলীয় পতাকা, জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান প্রতিকৃতি সংবলিত ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে জনসভায় যোগ দেন। এ সময়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো কিশোরগঞ্জ জেলা পুরাতন স্টেডিয়াম। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে জনসমুদ্রে রূপ নিয়ে এ জনসভাটি হয়ে ওঠে কিশোরগঞ্জের ইতিহাসে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভা।

জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গেলে বাংলাদেশের প্রতিটি পরিবারকে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ প্রদানের প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, পরিবারের মা বা গৃহিণীর নামে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কার্ড প্রদান করা হবে। রাষ্ট্রের পক্ষে সব নাগরিক পর্যায়ক্রমে কার্ডটি পাবে। প্রাথমিকভাবে গ্রাম-জেলা পর্যায়ের সুবিধা বঞ্চিতরা এর আওতায় আসবেন। পরিবারের সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ চার জন এই বিবেচনায় এটা বিতরণ করা হবে। কোনো প্রকার দলীয় বা স্থানীয় প্রভাবে কাউকে বঞ্চিত করার সুযোগ থাকবে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রীর একটি অংশ এই কার্ডের মাধ্যমে বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে গ্রামের সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য এর প্রবর্তন হলেও পরবর্তী সময়ে সবাই এর প্রাপক হবেন।

ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, আজ যাদের আত্মত্যাগ ও রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে-কথা বলার এবং জনগণের আকাঙ্ক্ষার সরকার প্রতিষ্ঠার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেই বীর শহিদদের এ জাতি কোনোদিন ভুলবে না। তবে এ কথা মনে রাখতে হবে যে দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হলেও এখনও স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়ে গেছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সব দলমতের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এদেশের সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ করতে হবে। বিএনপি ইতোমধ্যেই ৩১ দফার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। যে কর্মসূচিতে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া সব দলকে নিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করা হবে। এ সরকার হবে সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তি প্রদানের সরকার। রাজনৈতিক সরকারই পারবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

দীর্ঘ বক্তৃতায় তারেক রহমান বলেন, পতিত স্বৈরাচার সরকারের লোকজন দেশের জনগণের টাকা লুটপাট করে বিদেশে বাড়ি করেছেন। লক্ষ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, বিদেশে আমার কোনো বাড়ি নেই। আমিও দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই আমারও বিদেশে কোনো বাড়ি নেই। বাংলাদেশই আমার বাড়ি। আর এদেশের বঞ্চিত সাধারণ মানুষেরও বিদেশে কোনো বাড়ি নেই। সুতরাং রাজনৈতিক মুক্তির পাশাপাশি এদেশের সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তিই হবে প্রথম বিবেচ্য বিষয়। আর এজন্য বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের প্রথম ধাপেই অন্তত কিছু মৌলিক চাহিদা পূরণে গ্রাম থেকে ফ্যামিলি কার্ড প্রবর্তনের কাজ শুরু করবে। আর এসব কার্ড হবে গৃহকর্ত্রী ও মায়েদের ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ।

তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওড়াঞ্চল। সারা বাংলাদেশের বোরো মৌসুমে যে ধান হয় তা সমগ্র বাংলাদেশের ভেতর উৎপাদন হয় এর ১৬ শতাংশ শুধু কিশোরগঞ্জেই উৎপাদিত হয়। তার মানে দেখুন কত সম্ভাবনাময় একটি জেলা। সমগ্র দেশের ১৬ শতাংশ ধান যদি আপনারা উৎপাদিত করেন, যদি সঠিকভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করা সম্ভব হয়, তাহলে কৃষকরা যে এই ধান উৎপাদন করছে, যদি তাদের সহযোগিতা করা যায় তাহলে আমরা ২৫ শতাংশ পর্যন্তও করতে সক্ষম হব। কৃষকদেরকে যদি সঠিকভাবে সহযোগিতা করতে পারি আমরা।

কিশোরগঞ্জের আরেকটি সম্ভাবনাময় দিক তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, এখানকার যে অষ্টগ্রাম হাওড় বলেন, ইটনা বলেন, মিঠামইন বলেন, এই বিশাল হাওড় আছে। এই হাওড়ের বিভিন্ন প্রকারের মাছ উৎপাদিত হয়। রুই-কাতল বলেন, বোয়াল-আইর বলেন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ এই হাওড় এলাকায় হয়। বিদেশে এই মাছ আজকে কেন আমরা রপ্তানি করতে পারব না? গার্মেন্টস শিল্পের মাধ্যমে যেমন বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি, ঠিক একইভাবে মাছ রপ্তানিতেও আমরা বাংলাদেশকে পরিচিত করতে পারব বিশ্বের দরবারে। বিষয়টি এভাবে চিন্তা করতে হবে। আমরা যেমন বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হব, ঠিক একইভাবে আমরা আমাদের এই মাছ বিদেশে রপ্তানি করতেও সক্ষম হব। যার মাধ্যমে শুধু যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে তা নয়, এই মাছ রপ্তানির যে বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে, এর মাঝে হাজারো লক্ষ ভাই-বোনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করতে পারব।

তিনি বলেন, এই কাজগুলো কে করতে পারবে? তারাই করতে পারবে যারা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত হবে-এমন একটি সরকার করতে পারবে। কারণ সেই জনগণের সরকারের বাধ্যবাধকতা থাকবে জনগণের কাছে, জবাবদিহিতা থাকবে জনগণের কাছে। যেহেতু তারা জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকবে, সেজন্য জনগণের অবাধ অভিযোগ তাদেরকে দেখতে হবে, শুনতে হবে। সেজন্য জনগণের সমস্যা তাদের দেখতে হবে। জনগণের দুঃখ-কষ্ট তাদেরকে দেখতে হবে। যুবক সমাজের যারা বেকার থাকবে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা জনগণের সরকারকেই করতে হবে। সেজন্যই প্রয়োজন জনগণের সরকার। বাংলাদেশের জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক একটি সরকার দরকার, যারা জনগণের কাছে বাধ্য থাকবে। সেই অধিকার নিশ্চিত করতে হবে ভোটের মাধ্যমে।

বিএনপির ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে এবং কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম টিপু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া প্রমুখ।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম