Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

রপ্তানির প্রকৃত হিসাব নিরূপণের নির্দেশ

বিদায়ি অর্থবছরে গরমিল ১১ বিলিয়ন ডলার

Icon

মিজান চৌধুরী

প্রকাশ: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিদায়ি অর্থবছরে গরমিল ১১ বিলিয়ন ডলার

বিদায়ি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) রপ্তানি আয়ের নথিপত্রের হিসাবের তুলনায় বাস্তবে প্রায় ১১ বিলিয়ন (১১০০ কোটি) মার্কিন ডলার কমেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাবে প্রকৃত রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু বাস্তবে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি মার্কিন ডলার। বাস্তব হিসাবটি বের করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোববার ইপিবির পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন দেওয়া হয় বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য।

সরকারের সংস্থাগুলোর যৌথ রপ্তানির পরিসংখ্যান প্রকাশ শুরু হয়নি। গরমিলের ঘটনায় সমালোচনার মুখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান এখনো প্রকাশ করেনি ইপিবি। সাধারণত জুন শেষে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে ইপিবি। কিন্তু জুলাই ও আগস্ট পার হওয়ার পরও সেটি প্রকাশ করা হয়নি।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৬ হাজার ২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ইপিবির হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪ হাজার ৪৪৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, এর আগের অর্থবছরে (২০২২-২৩) ইপিবির হিসাবে প্রকৃত রপ্তানি আয় হয়েছে ৫ হাজার ৫৫৫ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু বাস্তবে আয় হয়েছে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি মার্কিন ডলার। ওই বছরেও রপ্তানি আয়ের গরমিল ধরা পড়ে প্রায় ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সূত্রমতে, রপ্তানি আয়ের প্রকৃত হিসাব বের করতে এরই মধ্যে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) নির্দেশ দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। রপ্তানি আয় নিয়ে ইপিবি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক পৃথকভাবে হিসাব সংরক্ষণ করে। কিন্তু তিন সংস্থার হিসাব ভিন্ন, কারও সঙ্গে মিল থাকছে না। এ সংশোধনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এনবিআরকে।

সূত্রমতে, এনবিআর গত দুই অর্থবছরের তথ্য সংশোধন করে রোববার বাণিজ্য উপদেষ্টার কাছে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। একই দিন বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে ইপিবির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠক হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ওই বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পায় রপ্তানি আয়ে গরমিল ইস্যু।

সেখানে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রত্যেক মাসের হিসাবে গরমিল রয়েছে। ওই অর্থবছরের শুরুতে জুলাইয়ে ইপিবির হিসাবে রপ্তানি আয় ৪৫৯ কোটি মার্কিন ডলার, বিপরীতে এনবিআরের হিসাবে ৩৬৪ কোটি মার্কিন ডলার। আবার অর্থবছরের শেষ মাস জুনে ইপিবির হিসাবে রপ্তানি আয় ৪০৭ কোটি ডলার; কিন্তু এনবিআর হিসাবে সেটি ৪২৩ কোটি ডলার। প্রত্যেক মাসেই এ গরমিলে মোট অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ বিলিয়ন ডলার। এ সময় ইপিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, আগামী দিনে রপ্তানি আয়ের হিসাবের ঘাটতি বা উদ্ধৃত্ত ইপিবি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মধ্যে দেড় বিলিয়নে নেমে আসবে। পর্যায়ক্রমে সেটি আরও কমবে।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, ইপিবি, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকৃত রপ্তানি আয় প্রকাশ করা হবে। তিন সংস্থার হিসাব ভিন্ন হচ্ছে, কিছুটা পার্থক্য আছে। এ অসংগতি দূর করা হবে। তিন সংস্থার তথ্য নিয়ে সমন্বয় করে সঠিক রপ্তানি আয়ের তথ্য প্রকাশ করা হবে।

পণ্য রপ্তানির তথ্যে গরমিলের বিষয়টি প্রথমে উত্থাপন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির মতে, এতদিন ইপিবির পরিসংখ্যান ধরে রপ্তানির হিসাব করা হতো। তবে সে অনুযায়ী দেশে রপ্তানি আয় আসছিল না। এ নিয়ে দেশি ও বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরে সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করে, এনবিআর-এর তথ্যে একই রপ্তানির পরিসংখ্যান বারবার দেখানোসহ কয়েকটি কারণে আয় বেশি দেখাচ্ছিল।

ইপিবির একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কমপক্ষে গত দুই অর্থবছরের ২৪ মাসের রপ্তানি আয়ের হিসাব নতুন করে করা হবে। সরকারের ওপর মহলের ‘সবুজ সংকেত’ পেলে শিগ্গিরই জুনের প্রকৃত রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করা হবে। এনবিআর-এর কাছ থেকে নতুন করে রপ্তানির পরিসংখ্যান নিয়ে ইপিবির কর্মকর্তারা প্রাথমিকভাবে পর্যালোচনায় দেখেছেন, গত দুই অর্থবছরে তাদের প্রকাশিত হিসাবের চেয়ে রপ্তানি ১৯ বিলিয়ন থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার কম হতে পারে। ভুল তথ্যের ভিত্তিতে যেসব হিসাব করা হয়েছে, তা সব ক্ষেত্রেই পর্যালোচনা করা উচিত।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে কিছু কাঁচামাল কিনতে হয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল ইপিজেড থেকে। এটি অভ্যন্তরীণ কেনাকাটা হলে রপ্তানি আয় হিসাবে ইপিজিডের হিসাবে দেখানো হয়। একই পণ্য পুরোপুরি তৈরি হয়ে বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। একই পণ্যের আয় একবার ইপিজেডে, আরেকবার সংশ্লিষ্ট পোশাকশিল্পের তালিকায় রপ্তানি হিসাবে যোগ হচ্ছে। এছাড়া রপ্তানির শিপমেন্ট এবং রপ্তানি আয় ডলার হিসাবে হাতে আসছে, এর মধ্যে পার্থক্য হতে পারে। কিন্তু প্রতিবছরই রপ্তানি আয়ের গরমিল যেভাবে বাড়ছে, এতে মনে হয়, হয়তো রপ্তানিকারকরা ডলার আনছেন না বা আনলেও সেটি ভিন্নভাবে। অর্থ পাচারের কারণেই কি পার্থক্য বেশি হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখা দরকার।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম মনে করেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইপিবির দেওয়া তথ্যের মধ্যে সব সময়ই কিছু পার্থক্য থাকে। তিনি বলেন, ১২০ দিনের মধ্যে রপ্তানি আয় না এলে রপ্তানিকারকের নাম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ড্যাশবোর্ডে প্রদর্শিত হয়। এরপর রপ্তানিকারক ব্যাংক থেকে কোনো সেবা পান না। ব্যাংকিং সেবা অব্যাহত রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে মেয়াদ বাড়াতে হবে এবং রপ্তানিকারক যদি মনে করেন তিনি আয় পাবেন না, তাহলে অনুমোদনের আগে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসকাউন্ট কমিটিকে অবহিত করতে হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম