জাতীয় সরকার ও দ্বিকক্ষ সংসদ চান তারেক রহমান
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
তারেক রহমান/ফাইল ছবি
জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে ‘জাতীয় সরকার’ ব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায় বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বুধবার ঢাকা বিভাগীয় বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের পূর্বসূরিরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ আমাদের দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূল শক্তি ছিল-প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। অত্যাবশ্যকীয় একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রথম দিন থেকেই। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠনে কোনো অবদান রাখতে পারেনি।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর পর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়। এদেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তারা সবাই আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমাদের আরও একটা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান-এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী, শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন, কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসাবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।
তিনি আরও বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে শুধু আমাদের আগামীর পরিকল্পনা আর সদিচ্ছার কথা জানাতে পারি, কারণ আমরা জানি-দেশের মানুষের সমর্থনই কেবলমাত্র আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। আশা করি জনগণ নিশ্চয়ই সেই সব দল বা ব্যক্তিকে জাতীয় সরকারে শামিল দেখতে চাইবে না, যারা পুরো দেশটাকে একটা দল আর পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত করেছিল। যারা তথাকথিত উন্নয়নের নামে আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে দেড় লাখ টাকার ঋণের বোঝা চাপিয়ে হাজার হাজার, লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। দেশে গড়েছে সম্পদের পাহাড়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, গুম-খুন, হামলা-মামলা ও নির্যাতনে দেশের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, চাল, ডাল, লবণ, তেল ও ওষুধের দাম মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে গেছে। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগসহ রাষ্ট্রের সবগুলো স্তম্ভ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি পালিয়ে যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তেও শত শত নিরীহ মানুষের রক্তে রঞ্জিত করেছে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা। জনগণ নিশ্চয়ই সেই জালেমদের জাতীয় সরকারে অন্তর্ভুক্ত দেখতে চাইবে না।
বিগত ১৭ বছরের বিরামহীন আন্দোলনে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে জনগণের পরিবর্তীত আশা আর ভাষার সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের উপযুক্ত হতে হবে। সাম্প্রতিককালে গজিয়ে ওঠা অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, দলের সব সংকটকালে তৃণমূলই বিএনপিকে বারবার রক্ষা করেছে। এমপি ও মন্ত্রী পদপদবির প্রত্যাশা না করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদল যারা শহিদ জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আর বিএনপির আদর্শের প্রতি যে অবিচল আস্থা বরাবর রেখেছেন সেটা অব্যাহত থাকলে দল হিসাবে বিএনপির সফলতা আর অগ্রযাত্রা কখনোই ব্যাহত হবে না। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ড. আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সায়েদুল আলম বাবুল জানান, সভায় ঢাকা বিভাগের প্রায় ১৩ হাজার নেতা ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নানা নির্দেশনা দিয়েছেন। যারা দুষ্কর্ম করার চেষ্টা করবে, তাদের প্রতিহত করতে বলেছেন। যেসব নেতাকর্মী দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।
তৃণমূল নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রাণ : নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, তারেক রহমান বলেছেন, বিগত সময়ে বিএনপির দুঃসময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীরা দলের পক্ষ থেকে সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করেছেন। এক-এগারোর সময় ষড়যন্ত্র হয়েছিল বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। ষড়যন্ত্র ছিল বিএনপির বিরুদ্ধে। সে সময় তারা বিএনপিকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতাকর্মীদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে সে সময় সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীরা হলেন বিএনপির প্রাণ। বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা বিভাগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। নরসিংদী জেলার বিভিন্ন উপজেলার বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা ভার্চুয়াল সভায় অংশ নেন।