নেতাকর্মীদের তারেক রহমান
ইনসাফ উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন
যুগান্তর প্রতিবেদন
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘আমার স্পষ্ট বার্তা, শক্তি বা ভয় দেখিয়ে নয়, ইনসাফ ও উদারতা দিয়ে মানুষের মন জয় করুন। জনগণের ভালোবাসা অর্জন করুন।’ বিএনপির ৪৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে রোববার নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে দেওয়া ভিডিও বার্তায় তিনি এসব কথা বলেন।
তারেক রহমান বলেন, ‘জনগণের লুণ্ঠিত ভোটের অধিকারকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন, দুদকসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার কিংবা পুনর্গঠন জরুরি। সেই লক্ষ্য অর্জনে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে বলে আমরা মনে করি। সুতরাং, জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল রাষ্ট্র এবং সরকার গঠনের লক্ষ্যে দেশকে নির্বাচনি রোডম্যাপে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য জনগণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত।’ তারেক রহমান নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষকের প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপিকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ খালেদা জিয়া দেশের ৮৭ হাজার গ্রামের প্রতিটি ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই দলের পতাকা এখন আমার, আপনার, আমাদের হাতে। এ পতাকা এখন শুধু বিএনপির দলীয় পতাকাই নয়। এ পতাকা এখন দেশ এবং জনগণের স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। সুতরাং, যারা এ পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে চান, তারা কোনো প্রকার অনৈতিক কিংবা অনধিকার চর্চায় লিপ্ত হবেন না। বাংলাদেশের জাতীয়বাদী শক্তির সব স্তরের সব পর্যায়ের নেতাকর্মী সমর্থক শুভাকাঙ্ক্ষীকে মনে রাখতে হবে জনগণ বিএনপিকে বিশ্বাস করে। বিএনপি জনগণকে বিশ্বাস করে। কারণ, জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস।’ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দেশ বর্তমানে ইতিহাসের এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে গণ-অভুত্থানের সাফল্য এবং সম্ভাবনা নস্যাৎ করে দিতে স্বৈরাচারের দোসররা এখনো ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের পক্ষের শক্তি সতর্ক থাকলে বাংলাদেশকে আর বিপথে নেওয়া যাবে না। আর পথ হারাবে না বাংলাদেশ।’
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যখন গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের পথে রয়েছে-এমন সময় হঠাৎ করেই চাপিয়ে দেওয়া বন্যা পরিস্থিতি দেশের পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত অঞ্চল গ্রাস করে নিয়েছে। বন্যার করাল গ্রাসে প্রায় এক কোটি মানুষ কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আপনারা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি আপনাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখুন। সমন্বিতভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান।
ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, দেশকে জনতার কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশে রূপান্তর করতে রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমের বিকল্প নেই। তবে রাষ্ট্র সংস্কার একটি চলমান, দীর্ঘমেয়াদি এবং ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। টেকসই এবং কার্যকর উপায়ে রাষ্ট্র সংস্কার করতে হলে সংস্কার প্রক্রিয়ার সঙ্গে জনগণের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ জরুরি। গণতান্ত্রিক বিশ্বের দেশগুলোয় জনগণের ভোট প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করার মাধ্যমেই রাষ্ট্র সংস্কার কার্যক্রমে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়ে থাকে। কারণ, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকার এবং জনগণের মধ্যে কার্যকর সেতুবন্ধ হচ্ছে জনপ্রতিনিধিত্বশীল জাতীয় সংসদ।
তারেক রহমান আরও বলেন, আমি মনে করি, আমাদের দল বিএনপি মনে করে, রাষ্ট্র সংস্কারকে কার্যকর করতে হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি এবং কার্যক্রমেও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার বিষয়টিও উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। সে লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুলাইয়ে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি দলীয় রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আর পেছনে তাকানোর সুযোগ নেই। পলাতক স্বৈরাচার জাতীয় জীবনের ১৫টি বছর কেড়ে নিয়েছে। সেই দুঃস্বপ্নকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেশের জনগণের সামনে একটি বৈষম্যহীন নিরাপদ মানবিক বাংলাদেশ গড়াই বিএনপির আগামী দিনের লক্ষ্য।
পর পর দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ভবিষ্যতে এদেশে স্বৈরশাসনের কবর রচনা করতে চায়। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চায়। রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দুই কক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়। দেশে আর কোনোদিন কেউ যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে সেটা নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায়, যাতে কেউ যেন পর পর দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে।
রোববার কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসাবে দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক এই সভা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের পরিকল্পনা এবং গত বছর জুলাইয়ে উপস্থাপিত ৩১ দফা কর্মসূচির মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি তরুণ ও বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়, কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা অনুযায়ী ভাতা প্রবর্তন করতে চায়, নিশ্চিত করতে চায় সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে আনতে চায় যুগোপযোগী আমূল পরিবর্তন।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশায় যুক্ত হয়েছে নতুন আশাবাদ আর পরিবর্তিত হয়েছে ভাষা। এই পরিবর্তিত নতুন ভাষা পড়তে ও বুঝতে হবে, আর আশাবাদকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে, সেটা না পারলে ছিটকে পড়তে হবে।