Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

ফেনী কুমিল্লা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে কমেছে পানি

বাড়িঘর ও সড়কে শুধুই বন্যার ক্ষত

Icon

যুগান্তর ডেস্ক

প্রকাশ: ৩১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বাড়িঘর ও সড়কে শুধুই বন্যার ক্ষত

ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হয়েছে। কয়েক দিন ধরে ডুবে থাকা অঞ্চলগুলো এখন দৃশ্যমান। পানি কমায় মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তবে এসব এলাকার সড়ক ও বাড়িঘরে ভেসে উঠছে বন্যার ঘা। দুর্গত এলাকার বহু আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে গেছে কাঁচা ঘর। পাকা ঘরের আসবাবপত্রসহ বসবাসের নানা সরঞ্জামও পানিতে নষ্ট হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। এছাড়া কৃষি ও মৎস্য সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে ফসলি জমি, মাছ, মুরগি ও গরু-ছাগলের খামার। এতে অনেক কৃষক ও খামারি পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন।

শুক্রবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশের পূর্বাঞ্চলের ১১ জেলায় বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি একজন নিখোঁজের তথ্যও পাওয়া গেছে। পানিবন্দি রয়েছেন ১০ লাখ ৯ হাজার ৫২২ পরিবার। এতে বলা হয়েছে, বন্যায় মৃতদের মধ্যে রয়েছেন পুরুষ ৪১ জন, মহিলা ৬ জন ও ৭ জন শিশু। এর মধ্যে কুমিল্লায় ১৪ জন, ফেনীতে ১৯, চট্টগ্রামে ৬, খাগড়াছড়িত ১, নোয়াখালীতে ৮, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজার ৩ ও মৌলভীবাজার ১ জন মারা গেছেন। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

ফেনী : ফেনী সদর উপজেলার এলাহীগঞ্জ বাজার আবুপুর বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সড়কের দুই পাশের প্রায় ৫ শতাধিক মানুষ কলার ভেলা দিয়ে চলাচল করছেন। পরশুরাম উপজেলার পরশুরাম জিরোপয়েন্ট থেকে সুবার বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার, কালিবাজার মহুরী ব্রিজ সড়কের ৩ কিলোমিটার, ধনিকুন্ডা-সমিতি বাজার সড়ক, পরশুরাম-বাশপদুয়া সড়কের ২ কিলোমিটার, মুন্সিরহাট থেকে জিএমহাট সড়কের ৪ কিলোমিটার, পুরাতন মুন্সির হাট থেকে বক্স মাহমুদ বাজার পর্যন্ত ৩ কিলোমিটারসহ এলজিইড়ির ৩৪২টি সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া ফেনী-পরশুরাম সড়কের ১০ কিলোমিটার, ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ছাগলনাইয়া সড়কের ৪ কিলোমিটার, ফেনী-সোনাইমুড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজাপুর-বিরলী অংশের ১ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

ফেনীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী বিনয় কুমার পাল যুগান্তরকে জানান, বন্যায় ফেনী সড়ক বিভাগের প্রাথমিক হিসাব মতে প্রায় ৪০ কোটি টাকার সড়কের ক্ষতি হয়েছে। তবে সঠিক হিসাব নিরূপণ করতে আরও কিছু সময়ের প্রয়োজন। ফেনী জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল ফারুক জানান, বন্যায় তাদের ৩৩শটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। তার মধ্যে ৩৪২টি সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১শ কোটি টাকা।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যায় এ পর্যন্ত জেলায় ১৯ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। মৃতদের প্রত্যেক পরিবারকে আর্থিক সহায়তার জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুমিল্লা : সরেজমিনে দেখা গেছে, গোমতীর বাঁধ ভেঙে কুমিল্লা-বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া সড়কটি বিধ্বস্ত হয়েছে। উপজেলার ভরাসার, ইছাপুরা, বুড়বুড়িয়া, কালিকাপুর, ভবানীপুর সড়ক ভেঙে খাদে পরিণত হয়েছে। এ উপজেলার বেশিরভাগ গ্রামীণ সড়ক ঢলের পানিতে বিলীন হয়ে গেছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার গোপালনগর সড়কটি ব্যাপকভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলার খলিলপুর সাইচাপাড়া সড়কটি বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। এ সড়কে এখন বড় বড় গর্ত হয়ে খাদে পরিণত হয়েছে। জেলার নাঙ্গলকোট এবং মনোহরগঞ্জ উপজেলার অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক বন্যার পানিতে তছনছ হয়ে গেছে। অধিক স্রোতের ফলে কিছু কিছু সড়ক খাল এবং বিলের মাঝে পতিত হয়ে গেছে।

কুমিল্লার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সায়েদুজ্জামান বলেন, চলমান বন্যায় প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জেলার ১৪ উপজেলায় ৮২৬ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ার তথ্য এসেছে। ২৫টি বক্স কালভার্ট ভেঙে পড়েছে। ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র বের করতে প্রকৌশলীরা মাঠে কাজ করছেন।

লক্ষ্মীপুর, রায়পুর, রামগতি ও সেনবাগ : রায়পুরে পানপাড়া সকড়, নতুন বাজার মহিলা কলেজ সড়ক, হায়দরগঞ্জ, রায়পুর খাসেরহাট, আখনবাজার, ঝাউডুগি ও চরপাতা গাজীনগর সড়ক ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেরোয়া ইউপির সমাজসেবক মো. ইউনুস ও হায়দরগঞ্জের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. ইউসুফ জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে সূর্যের আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো উপজেলা। ফলে বেশিরভাগ বাড়িঘর থেকে পানি নেমে গেছে। তবে মেঘনা নদীর সংলগ্ন বেড়িবাঁধ সড়ক ও পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডসহ উপজেলার ১০টি ইউপির কেরোয়া পানপাড়া, হায়দরগঞ্জ, খাসেরহাট, টিঅ্যান্ডটি, রুস্তম আলী কলেজ, চরপাতা, মহিলা কলেজ, বামনীসহ বেশিরভাগ সড়ক ধসে পড়েছে। রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান ও এলজিইডির প্রকৌশলী সুমন মুন্সি একই রকম তথ্য দিয়ে বলেন, বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে। বাসাবাড়ি থেকে পানি নেমে যাচ্ছে। ভেঙে যাওয়া সড়ক দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

রামগতিতে বন্যার পানি কমতে থাকলেও দীর্ঘমেয়াদি জলাবদ্ধতার কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে রামগতির চর পোড়াগাছা, চর বাদাম ও কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের।

সেনবাগে বন্যাকবলিত কাদরা, জিরুয়া, মগুয়া, বাবুপুর শ্রীপুর, ডমুরুয়া, হরিণকাটাসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ধীরে কমছে বন্যার পানি। এই উপজেলায় এখনো দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, টানা দুদিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্যার পানি বাড়েনি। রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলায় উল্লেখযোগ্যভাবে পানি কমেছে।

নোয়াখালী : সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সৌম্য তালুকদার জানিয়েছেন, বন্যায় বেগমগঞ্জ-লক্ষ্মীপুর সড়কের বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে কেন্দ্র ভাগ, তপুদার বাড়ি পুল, কালিকাপুর মাদ্রাসা, বাংলা বাজার হয়ে চন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৮ কিমি সড়ক বিধ্বস্ত হয়েছে। ফেনাঘাটা ব্রিজেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তিনি জানান, জেলার ৮০ ভাগ উপজেলা সংযোজন সড়ক, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার সঙ্গে সংযোগ সড়ক এবং আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের ৮০ ভাগ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে মিয়াপুর-আমিন বাজার মনির চৌধুরী সড়ক, জায় নারায়ণপুর সড়ক, বাংলা বাজার গোপালপুর আমিনপাড়া সড়ক, রাজগঞ্জ বাবুর আলাদিনের বাংলাবাজার সড়ক, ইসলামিয়া সড়ক, ছয়ানী-চন্দ্রগঞ্জ সড়ক অন্যতম। এ সড়কগুলোসহ এলজিইডির সড়কের ক্ষতির পরিমাণ অন্তত ৭৫০ কোটি টাকার। মৎস্য বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ ৬১৭ কোটি টাকা বলে মৎস্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।

চাঁদপুর : শাহরাস্তি উপজেলায় বন্যার পানিতে ৩৪১ হেক্টর জমির রোপা-আউশসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আয়শা আক্তার বলেন, ১০ দিনে উপজেলার বন্যা কবলিত ইউনিয়নের মাঠ জরিপে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত সাড়ে ৪ হাজার কৃষকের তথ্য পেয়েছি। রোপা-আউশসহ বিভিন্ন ফসলে ৬ কোটি ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকার প্রাথমিক ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

হবিগঞ্জ : কৃষি ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, জেলায় ৪০টি খামারে ১৮২টি গবাদিপশু ও ৩৫টি খামারে ২৭ হাজার ৪০০ হাঁস-মোরগ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়া ৩টি গরু, ৩৯টি ছাগল ও ৫ হাজার ৩শ হাঁস-মোরগ মারা যায়। এতে ৩২ কোটি ৪৪ হাজার ৯৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া জেলার ৭টি উপজেলায় ৬টি ব্রিজ ও রাস্তাঘাট ভেঙে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৬ কোটি টাকার।

রাঙামাটি : রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক তপন কুমার পাল বলেন, বন্যায় জেলায় প্রায় দুই হাজার ১০০ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১১ হাজার কৃষক। তিনি জানান, বন্যায় বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১ হাজার ৩৪১, লংগদুতে ৩০৫, নানিয়ারচরে ১২৬, রাঙামাটি সদরে সদরে ৯৮, বরকলে ৪৮, কাউখালীতে ৪৭, জুরাছড়িতে ৪৭, বিলাইছড়িতে ৪৪, কাপ্তাইয়ে ৪৩ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম