কবির বিন আনোয়ার মদ পান করতেন অফিসে বসেই
নিজের প্রমোদতরিতে সময় কাটাতেন
নেসারুল হক খোকন
প্রকাশ: ২৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ফাইল ছবি
নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন কবির বিন আনোয়ার। অথচ প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়াই করেননি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে পরিচিতি পেলেও দাপট ছিল সব মন্ত্রণালয়েই। যা বলতেন তাই আদায় করে নিতেন।
মায়ের নামে ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’ খুলে নীরব চাঁদাবাজি আর ঘুস বাণিজ্যের হাট বসিয়েছিলেন। বিদেশি সাহায্যের নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের নামে। দীর্ঘদিন পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার ও পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ-পদবি না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্য একটি দপ্তরে কর্মরত এক নারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পোস্টিং দিয়ে নিজের কাছে রাখেন। ওই নারী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সময়ে একজন ক্যাডার কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন। লায়লা সানজিদা নামের ওই নারীকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার’ পদ দিয়ে বছরের পর বছর নিজের দপ্তরে সংযুক্ত রাখেন, যা ছিল নজিরবিহীন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ‘তূর্য’ নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে রাজা-বাদশাহর মতো এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন অবলীয়ায়। আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রী থাকলেও কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পিতার পরিচয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন কবির বিন আনোয়ার।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।
কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চাকরি হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারতেন না। এভাবে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প ভাগিয়েছেন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে যে কজন আমলা থেকে শত শত কোটি টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে কবির বিন আনোয়ার অন্যতম।
কামারখন্দ গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ক্ষমতার দাপটে গ্রামের বাড়ির মানুষের যে ক্ষতি করেছেন তিনি তা কোনো শত্রুও করবে না। কী ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন নামে একজন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ড্রেজিংয়ের নামে শত শত বিঘা জমিতে নদীর পানি মিশ্রিত বালি ফেলে শেষ করে দিয়েছেন। তার দাপটেই ঠিকাদাররা এই কাজ করেছে। এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ ডেকে শত শত মানুষকে এলাকাছাড়া করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তার এই কাণ্ডে কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।’
সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে চলাচল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানতেন। তাদের মাধ্যমে নানারকম অপরাজনীতি সংঘটিত করতেন। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সংঘর্ষ ও হানাহানির মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই আমলা।
তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে প্রধান অতিথি করতে বাধ্য করতেন। বিগত ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কামারখন্দ উপজেলায় তার অনুগত ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম রেজাকে বিজয়ী করার জন্য অবৈধভাবে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন তাকে মৌখিকভাবে সতর্কও করেছিল। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং অফিসারকে চাপ প্রয়োগ দিয়ে তার প্রার্থীকে যে কোনো মূল্যে বিজয়ী করতে প্রভাবিত করেন। তিনি নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তাদেরও প্রভাবিত করেন। এভাবে তিনি তার পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করেন।
এমনকি বিজয়ীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে শপথ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পূর্বঘোষিতভাবে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও সচিব কবির বিন আনোয়ার অতর্কিত উপস্থিত হয়ে শপথ কার্যক্রম পরিচালনার ইচ্ছা পোষণ করেন। এতে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসকসহ সবাই বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়ে যান।
বিগত বন্যাকালীন উপজেলায় বরাদ্দকৃত সরকারি ত্রাণসামগ্রী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চাপ প্রয়োগ করে নিজের প্রতিষ্ঠান ইসাবেলা ফাউন্ডেশনের নামে বিতরণ করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের বাদ দিয়ে নানা উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং প্রকল্প উদ্বোধন করতেন।
লুটপাটের চিত্র : প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক ও এটুআই-এর প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন তার আত্মীয়স্বজনদের ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছেন কবির বিন আনোয়ার। তাদের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন প্রকল্পের নামে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে অঢেল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ২০১২ সাল থেকে সিনিয়র সচিব হিসাবে চাকরি থেকে বিদায় নেওয়ার আগ পর্যন্ত সব প্রকল্প তদন্ত করলে শত শত কোটি টাকা লোপাটের তথ্য বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন সিরাজগঞ্জ রেলওয়ে কলোনির বাসিন্দা মানিক চৌধুরী। ২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি তিনি এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি অভিযোগ দাখিল করেন।
সেই অভিযোগটি আমলে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। অভিযোগে তিনি সিরাজগঞ্জে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিগত কয়েক বছরের বরাদ্দ তদন্তের আওতায় নেওয়ার অনুরোধ করেছেন। বরাদ্দের মধ্যে অন্তত আড়াইশ কোটি টাকার কাজ অবৈধভাবে তার আত্মীয়স্বজন ও অনুসারীদের দিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়।
সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার সয়াগোবিন্দ পাড়ার সুলতান মাহমুদকে ৭০ কোটি টাকা, হোসেনপুরপাড়ার জাকির হোসেনকে ৬০ কোটি টাকা, দিয়ারধানগড়ার নাছিমুর রহমানকে ৪০ কোটি টাকা, হোসেনপুরপাড়ার জাকির হোসেনকে ২৫ কোটি টাকা, স্টেডিয়াম রোডের রাশেদ ইউসুফ জুয়েলকে ১০ কোটি টাকা, রেলওয়ে কলোনি (চামড়াপট্টি) আব্দুল্লাহ বিন আহমেদকে ২০ কোটি টাকার কাজ, দত্তবাড়িপাড়ার হোসেনকে ২০ কোটি টাকার কাজ, সমাধানগড়াপাড়ার শামসুজ্জামান আলোকে ২৫ কোটি টাকার কাজ, জানপুরের বদরুল আলমকে ১২ কোটি টাকা, কামারখন্দ উপজেলার পেছরপাড়া গ্রামের সেলিম রেজাকে ৮০ কোটি টাকার কাজ, ঝাঐলগ্রামের হীরাকে ৩০ কোটি টাকার কাজ, নান্দিনা মধু গ্রামের সানোয়ারকে ১৫ কোটি টাকার কাজ সাবকন্ট্রাক্টে ভাগ করে দিয়ে লুটপাটে ভাগ বসিয়েছেন।
আবার এদের প্রধান করেই মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসীদের নির্মূলে গ্রুপ করে দিয়েছেন। অথচ এরাই এলাকায় বিতর্কিত। তারা নিুমানের কাজ করে এবং কিছু কিছু কাজ একেবারেই না করেও প্রকল্পের টাকা তুলে নিয়েছেন। কবির বিন আনোয়ারের বোনজামাই হিলটনের ভাই শামিমুর রহমান শামিমের মাধ্যমে টেন্ডার প্রক্রিয়ার দুর্নীতিসহ সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। এ কাজে সহযোগিতা করে কবির বিন আনোয়ারের মাদক পার্টনার হিরন, চাচাতো ভাই তরুন ও আরিফ। তার আত্মীয়স্বজনের সিন্ডিকেট ঠিকাদারিসহ মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ব্যাপারেও ব্যাপক দুর্নীতির নিয়ন্ত্রণ করেন।
তিনি চাপ প্রয়োগ করে অবৈধভাবে প্রকল্প তৈরির সময় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীদের দিয়ে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে দেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিশেষ জরুরি আখ্যা দিয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া না করে সরাসরি বিভিন্ন ঠিকাদারদের কাজ দেন। তাছাড়া প্রকল্প চলাকালেও দফায় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধিসহ মাত্রাতিরক্ত অর্থ বরাদ্দ প্রদান করেন। তার আমলে এভাবে শুধু অতিরিক্ত বরাদ্দের মাধ্যমেই ত্রিশ হাজার কোটি টাকা লুট করার অভিযোগ করা হয়েছে।
শুধু সিরাজগঞ্জেই প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় পাঁচ-ছয়গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলাধীন সিংড়াবাড়ী, পাটগ্রাম ও বাঐখোলা এলাকার নদীর তীর সংরক্ষণে প্রকল্পের প্রতি কিলোমিটারে ১২ কোটি থেকে ১৭ কোটি স্বাভাবিক ব্যয় আকস্মিকভাবে ৭৩ কোটি টাকা করা হয়। তার আশীর্বাদপুষ্ট কর্মকর্তাদের পুকুর খননে প্রশিক্ষণ নিতেও বিদেশ পাঠানোর নজির রয়েছে। নদী খননের জন্য ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ১২৯২ কোটি ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাবেক সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। পানিসম্পদ সচিব পদে যোগদানের পর বিভিন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছেন বলেও অভিযোগ আছে।
পুকুর খননের প্রশিক্ষণের নাম করে নিজের অনুগত কর্মকর্তাসহ নিজেও বিদেশ ঘুরেছেন। এতে করে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় করেছেন তিনি। মন্ত্রণালয়ের বনায়ন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে এসে তিনি তার মায়ের নামে প্রতিষ্ঠান ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’র নামে বাস্তবায়ন করেন। তার চাচাতো ভাই তরুনের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রত্যেকটি বনায়ন প্রকল্পে বিনা টেন্ডারে দুর্নীতির মাধ্যমে কাজ নিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
নিয়মনীতি ভেঙে ব্যক্তিগত কাজে মন্ত্রণালয়ের অর্থ ব্যয় করেন। সিরাজগঞ্জ জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপ্রয়োজনীয় এবং উদ্ভট প্রকল্প বানিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন কবির বিন আনোয়ার। বিভিন্ন প্রকল্প মনিটরিংয়ের বিপুল পরিমাণ অর্থও লোপাট করা হয়। সচিবের চাচাতো ভাই আরিফের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন তদবির নিয়ন্ত্রণ করতেন স্থানীয় পর্যায়ে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সব কার্যক্রম মূলত কবির বিন আনোয়ারের পরিবারের লোকজনই নিয়ন্ত্রণ করত। কর্তব্যরত কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা করত না তারা। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দিক থেকে তার অবস্থান ৪-৫ নম্বরে বলে প্রচার করতেন তিনি। দেশের বাইরেও অর্থ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
অফিসে বসেই মাদক : কবির বিন আনোয়ার একজন মাদকসেবী। তিনি নিয়মিত ফেনসিডিল, মদ, গাঁজা সেবন করতেন। চলাচল করতেন সিরাজগঞ্জের সব সন্ত্রাসীকে নিয়ে। কলেজজীবন থেকেই তিনি নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন। পানিভবনে বসতেন মদের জলসা বানিয়ে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি স্বীকার করেছেন। সিরাজগঞ্জে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেস্ট হাউস ‘যমুনা বিলাসে’ তার বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে মদ-গাঁজার আসর বসাতেন। রেস্ট হাউসের আশপাশের বাসিন্দারা এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও অভিযোগ করতেন।
অতিরিক্ত মাদক সেবনে অসুস্থ হওয়ায় তার স্ত্রী জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একজন খ্যাতিমান অধ্যাপকের কাছে চিকিৎসাসেবার জন্য নিয়ে যেতেন। তিনি ভারতেও মনোরোগ ও মাদকাসক্তি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসাসেবা নেন। ভারতের চিকিৎসকরা তাকে ৩ মাসের রিহ্যাবিলিটেশনের পরামর্শও দিয়েছেন।
অগণিত সম্পদ দেশে-বিদেশে : বিপুল অর্থবিত্ত গড়ে তুলেছেন কবির বিন আনোয়ার। তার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত টাকায় ঢাকা, গাজীপুর, সেন্টমার্টিন, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। এসব জায়গায় তিনি ফ্ল্যাট, বাগানবাড়ি ও বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। গাজীপুরের বাগানবাড়ি, সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজারের বিনোদনকেন্দ্রে ছুটির দিনে নারী নিয়ে অসামাজিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকতেন।
সোনাদিয়া ও রাজেন্দ্রপুরের বাগানবাড়িতে অসামাজিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনও অবগত। এসব কারণে তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে এবং বর্তমান স্ত্রীর সঙ্গেও তার সম্পর্কে টানাপোড়েন। তার প্রথম স্ত্রী আত্মীয়তার সম্পর্কে তার খালা। কবির বিন আনোয়ারের সব কটি মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।