Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা উচিত

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা উচিত

ছবি সংগৃহীত

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন দেশের কয়েকজন বিশিষ্টজন। তারা বলেন, স্বচ্ছতা ও জনমানুষের কৌতূহল মেটানোর জন্য হলেও তাদের নামের তালিকা সরকার প্রকাশ করতে পারে। একই সঙ্গে তাদের ওপর নজরদারি রাখা, কেউ বিদেশে পালিয়ে গেলে তার সহায়তাকারীদের আইনের আওতায় আনার পরামর্শও দিয়েছেন তারা।

একই সঙ্গে তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ ছাত্র-জনতা হত্যাকারী ও হত্যার নির্দেশদাতা থাকলে এবং বিদেশে পালিয়ে যেতে পারলে তারাই অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রও করতে পারেন।

এ বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নিজেদের বিপদ দেখে অনেকে প্রাণরক্ষার্থে সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন। আমাদের সেনাবাহিনী তাদের প্রাণে বাঁচিয়েছে। এটি মানবিক কাজ। তবে যেহেতু সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তালিকা সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে, এখন সরকারের উচিত হবে ওই তালিকা প্রকাশ করা। একই সঙ্গে সেখানে আশ্রয় নেওয়াদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে মামলা বা অন্যান্য অপরাধ রয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন দুপুরে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান তিনি। এ খবর ছড়িয়ে পড়ার পর আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ-সদস্য, বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে। ওই সময়ে খবর রটে সেনানিবাসে বিপুলসংখ্যক মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) রোববার জানায়, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়। বিচারবহির্ভূত কর্মকাণ্ড রোধ, জীবনরক্ষা ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ওই সময়ে ৬২৬ জনকে বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২৪ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ৫ জন বিচারক, ১৯ জন অসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা, ২৮ জন পুলিশ অফিসার, ৪৮৭ জন পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্য, বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাসহ বিবিধ ১২ জন এবং ৫১ জন পরিবার-পরিজন (স্ত্রী ও শিশু) ছিলেন।

পরিস্থিতির উন্নতি হলে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ত্যাগ করেন। অভিযোগ ও মামলা থাকায় আশ্রয় নেওয়া ৪ জনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তুলে দেওয়া হয়। বর্তমানে ৩ জন তাদের পরিবারের ৪ জন সদস্যসহ ৭ জন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। এক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সব তথ্যাদি প্রদান করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে রয়েছে। ওই তালিকা অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। লে. জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নতুন উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়েছেন। ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনও জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব পদে নতুন যোগ দিয়েছেন। তাই নাম প্রকাশের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্য এক সূত্র জানায়, আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে বিচারপতি, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থাকায় কৌশলগত কারণে তালিকা প্রকাশ করা হয়নি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতা হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের হচ্ছে। সেখানে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাড়াও পুলিশ ও প্রশাসনের যারা জড়িত, তাদের আসামি করা হচ্ছে। আসামিদের গ্রেফতারের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোরভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে।

সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন যুগান্তরকে বলেন, আমি নতুন যোগ দিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে এখনো আমি অবহিত নই। এ কারণে কোনো মন্তব্য করতে পারছি না।

তবে সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য হলেও আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করা উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার ভারত পালিয়ে যাওয়া প্রমাণ করে তারা এত বড় অপরাধ করেছেন যে নিজ দেশেও থাকার জন্য নিরাপদ মনে করেন না। একইভাবে যারা সেনানিবাসে আশ্রয় নিয়েছেন, ধরে নেওয়া যায় তারাও আওয়ামী লীগের গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ছিলেন। ওই অপরাধবোধ থেকে নিজেদের অনিরাপদ মনে করে আশ্রয় নিয়েছেন। সেনাবাহিনী তাদের আশ্রয় দিয়ে বিনা বিচারে হত্যার হাত থেকে রক্ষা করে আইনানুগ কাজ করেছে। তবে সরকারের এখন উচিত ন্যায়বিচার ও স্বচ্ছতার জন্য তাদের নাম প্রকাশ করা। তাদের মধ্যে যারা অপরাধে যুক্ত ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। কেউ যদি পালিয়ে বিদেশে চলে গিয়ে থাকেন, তাদের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া।

এর আগে শনিবার রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) হেলমেট হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়ে বক্তব্য দেন। তারা যুক্তি তুলে ধরে বলেন, আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের সংখ্যা ও নাম প্রকাশ করা না হলে ভবিষ্যতে কাউকে যদি না পাওয়া যায়, তাহলে ধারণা করা হবে ওই ব্যক্তি সেনানিবাসে রয়েছেন, যা সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করবে।

ওই সভায় বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) মানিষ দেওয়ান বলেন, নিরাপত্তাহীনতায় থাকায় ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। যারা ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছে, তারা দোষী। আমি সেনাপ্রধানের প্রতি সম্মান রেখে তার কাছে আবেদন জানাতে চাই, তাদেরকে পুলিশের হেফাজতে দিয়ে তাদের নিরাপত্তা বিধান করা যায়। তাদেরকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিতাড়িত করে জেলহাজতে পাঠান।

 

Jamuna Electronics
wholesaleclub

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম