Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বৈষম্যের শিকার কর্মচারী ফোরাম

বিতর্কিত সচিবদের বরখাস্তে ২ দিনের আলটিমেটাম

চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ বাতিল করতে হবে * পুলিশ ক্যাডারের যেসব কর্মকর্তা আন্দোলন দমনে কঠোর ছিলেন, তাদের বিচার করা হবে

Icon

আমিরুল ইসলাম

প্রকাশ: ১২ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

বিতর্কিত সচিবদের বরখাস্তে ২ দিনের আলটিমেটাম

ফাইল ছবি

আওয়ামী লীগের শাসনামলে বঞ্চিত ক্যাডার ও নন-ক্যাডার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষতি দুইদিনের মধ্যে পুষিয়ে দেওয়ার আলটিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যের শিকার কর্মচারী ফোরাম।

ফোরামের নেতারা বলেছেন, বিতর্কিত সচিব, বিভিন্ন অধিদপ্তরের ডিজি, করপোরেশনের চেয়ারম্যান এবং পরিচালকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করতে হবে। যেখানে যে পদেই হোক, চুক্তিভিত্তিক সব নিয়োগ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করতে হবে। উল্লিখিত পদে বিতর্কিত সব কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে বিগত সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করতে হবে। তারা বলেছেন, শেখ হাসিনা সরকারকে বারবার ক্ষমতায় বসানোর পেছনে যারা অসাংবিধানিকভাবে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছেন, তদন্ত করে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিশেষ করে পুলিশ ও প্রশাসন ক্যাডারের বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং করপোরেশনগুলোয় কর্মরত সরকারের পদলেহীদের বরখাস্ত করতে হবে।

রোববার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব আব্দুস সাত্তারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে এসব আলটিমেটাম দেওয়া হয়। সভায় তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। সভার সমাপনী বক্তব্যে আব্দুস সাত্তার বলেন, আমরা বুধবার আবার এখানে একটি সভা করে দাবি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করব। আজকের সভায় ফোরাম গঠন হলো এবং ফোরামের সদস্য সচিব করা হয়েছে মো. এহসানুল হককে। জানতে চাইলে আব্দুস সাত্তার যুগান্তরকে বলেন, আমরা বর্তমান সরকারকে স্বাগত জানাই। তাদের সার্বিক সহযোগিতা করতে সব সময় প্রস্তুত আছি। তিনি আরও বলেন, আমরা শহিদদের প্রতি গভীর সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করছি। কর্মচারীরা জীবন দিয়ে দেশ গড়ে শহিদের ঋণ শোধে সচেষ্ট থাকবে।

নবগঠিত ফোরামের সদস্য সচিব মো. এহসানুল হক যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের যেসব কর্মকর্তা ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে বিতর্কিত ভূমিকা রেখেছেন, তাদের তালিকা করে বিচার হবে। পুলিশ সদস্যরা প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ দেশের সব মানুষকে হয়রানি করেছে। তাদের বিচার অবশ্যই করতে হবে। পরবর্তী সময়ে আমরা আরও কিছু দাবিনামা পেশ করব। সভায় শুদ্ধাচার পুরস্কার, জনপ্রশাসনের পিপিএ এবং পুলিশের বিপিএম পদক বাতিলের দাবি জানানো হয়।

সভায় সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ফোরামের সভাপতি বাদিউল কবির বলেন, অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল করে তাদের বকেয়া পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে। সাময়িক বরখাস্তদের বরখাস্তের আদেশ প্রত্যাহার করতে হবে। যারা জ্যেষ্ঠতা হারিয়েছেন, তাদের জ্যেষ্ঠতা ফিরিয়ে দিতে হবে। সংবিধান ও আইনকানুন উপেক্ষা করে যারা সরকারের গোলামি করেছে, তাদের বরখাস্ত করতে হবে। অন্যথায় কর্মচারীরা তা মানবে না।

অপরদিকে রোববার বিকালে ছয় দফা দাবিতে বাংলাদেশ সচিবালয় বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী সংগঠনের ব্যানারে সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেছে ১০ম-২০তম গ্রেডের এক দল কর্মচারী। পরে সচিবালয় বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) কার্যালয়ে আসেন তারা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসাবে কর্মরত মো. মনির হোসেন তাদের ছয় দফা দাবির কথা সাংবাদিকদের জানান।

তিনি বলেন, আমি ২১ বছরে মাত্র একবার পদোন্নতি পেয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমাদের এত বঞ্চিত করেছে, যা কল্পনা করা যায় না। মো. মনির হোসেন বলেন, ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারী ৮ হাজার ২৫০ টাকা বেতনের চাকরি করেন। তিনি সর্বসাকুল্যে ১৫ হাজার ৮৫০ টাকা বেতন পান। এ টাকা দিয়ে কি ঢাকা শহরে সংসার চলে? আমরা বৈষম্যের শিকার। এরপর ছয় দফা দাবি সাংবাদিকদের সামনে উত্থাপন করেন তিনি।

তাদের দাবি হলো-সচিবালয়ে নিয়োজিত সব প্রশাসনিক ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীত করে উপসহকারী সচিব পদনাম দিতে হবে। বিদ্যমান আইনানুযায়ী ৭ বছরে ফিডার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পদোন্নতি দিয়ে ক্যাডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যা বিভিন্ন ক্যাডারে ইতঃপূর্বে করা হয়েছে। ১১-১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম অতিরিক্ত উপসহকারী সচিব করতে হবে। ১৭-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের পদনাম সাচিবিক সহায়ক করতে হবে। সচিবালয় ভাতা চালু করতে হবে (যা বিভিন্ন দপ্তরে/বিভাগে বিদ্যমান আছে)। কর্মচারীদের স্বাধীন মতামত প্রকাশ করার জন্য সচিবালয়ে জারি করা ১৪৪ ধারা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মতামত প্রকাশ করার স্বাধীনতাকে বাকরুদ্ধ করার জন্য আইসিটি আইন/সাইবার ক্রাইম আইন প্রত্যাহার করতে হবে।

এদিকে আওয়ামী লীগ আমলে সরকারের সব সচিব ও জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার বহিষ্কার করতে হবে। অবৈধ পথে মালিক হওয়া সম্পদ জব্দ করতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। রোববার সচিবালয়ের মূল ফটকে জাতীয়তাবাদী যুবদল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এসব দাবি করেন।

সকাল সাড়ে ১০টায় তারা সচিবালয়ের মূল ফটকে অবস্থান নেন। এরপর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তারা নানা ধরনের স্লোগান দেন। তারা বলেন, তার (শেখ হাসিনা) সময়ে যারা ডিসি ছিলেন, পরে পদোন্নতি পেয়ে সচিব হয়েছেন, তারা প্রত্যেকে অপরাধী। যারা এসপি ছিলেন এবং পদোন্নতি পেয়ে আইজিপি হয়েছেন, তারা সবাই খুনি। ডিসি-এসপিরা ভোট ডাকাতি করেছেন। এসপিরা পাখি শিকারের মতো মানুষ খুন করেছে। তারা সবাই হাসিনার দোসর এবং সম-অপরাধী। তাদের এখনো ক্ষমতার চেয়ারে বসিয়ে রাখার কোনো যুক্তি নেই। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বরখাস্ত করতে হবে। পরে একই দাবিতে সচিবালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ছাত্র-জনতার ব্যানারে কিছু নেতাকর্মী বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম