Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

বাজার তদারকিতে শিক্ষার্থীরা

চাঁদাবাজি বন্ধে দাম কমছে পণ্যের

সরকারদলীয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে টাকা দিতে না হওয়ায় স্বস্তি ফিরছে-মো. ইমরান মাস্টার * সিন্ডিকেট ভেঙে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার সময় এসেছে-ক্যাব

Icon

ইয়াসিন রহমান

প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

চাঁদাবাজি বন্ধে দাম কমছে পণ্যের

ছবি : সংগৃহীত

দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বাজারে ক্রেতার স্বস্তি ফিরছে। শিক্ষার্থীদের বাজার তদারকি এবং ঘাটে-ঘাটে পণ্য পরিবহণে চাঁদা দিতে না হওয়ায় কমছে সব ধরনের পণ্যের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের সবজি কেজিপ্রতি ২০-৩০ টাকা কমেছে। প্রতি ডজন ডিম ও ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ২০-২৫ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে। কমতির দিকে মাছের দামও। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতার মুখে হাসি ফিরেছে। তারা বলছেন, সিন্ডিকেটে নিয়ন্ত্রিত ছিল বাজার। ক্রেতারা সব সময় ঠকতাম। প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে আমাদের নাজেহাল করা হতো। বাজারে পণ্যের দাম যে কমতে পারে, তা কোনোদিন ভাবেননি। এখন বাজারে এসে স্বস্তি লাগছে।

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ভেঙে পড়ে বাজার ব্যবস্থাপনা। পণ্য পরিবহণ থেকে শুরু করে বাজারের প্রতিটি পর্যায়ে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে লাগামহীন হয়ে উঠে নিত্যপণ্যের দাম। তবে সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাজারে পণ্যের দামেও পতন ঘটতে শুরু করেছে। শুক্রবার কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) পক্ষ থেকে জানানো হয়, এখন বাজার ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানোর সময় এসেছে। সিন্ডিকেট ভেঙে ভোক্তাদের স্বস্তি দেওয়ার সময় এসেছে। 

শুক্রবার খুচরা বাজারের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সপ্তাহখানেক আগেও যেসব সবজি কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে তা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি একাধিক সবজি কেজিপ্রতি ৪০-৫০ টাকায় নেমে এসেছে। সেক্ষেত্রে প্রতি কেজি পটোল, ঢ্যাঁড়শ, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁকরোল, করলা, বেগুন ও বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। সম্প্রতি প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১৭০-২২০ টাকায় বিক্রি হলেও শুক্রবার বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৭০ টাকা। 

অন্যদিকে ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হলেও এদিন খুচরা বাজারে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। তবে কমেনি আলুর দাম। গত সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি আলু ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকা। আর পাড়ামহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫-১৬০ টাকা, যা তিনদিন আগেও ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এছাড়া প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা, যা তিনদিন আগেও ১৯০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ২০ টাকা কমে প্রতি কেজি সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৭০-২৮০ টাকা। 

কাওরান বাজারে কথা হয় ক্রেতা মো. ইমানুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, বাজারে এসে এক প্রকার অবাক হয়েছি। ভেবেছিলাম বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আজ বাজারে এসে বেশি দামে সব ধরনের পণ্য কিনতে হবে। কিন্তু সবকিছুর দাম কমেছে। এতে খুব ভালো লাগছে। তবে যে হারে দাম বেড়েছে, সে হারে দাম কমেনি। তাই নতুন যে সরকার গঠন হয়েছে, তাদের প্রতি আমাদের মতো ভোক্তার চাওয়া বাজারে তদারকি জোরদার করে পণ্যের দাম আরও ভোক্তা সহনীয় করতে হবে। এতে আমাদের মতো ক্রেতাসাধারণের উপকার হবে।

একই বাজারের বিক্রেতা মো. হামিদুল রহমান বলছেন, ঘাটে-ঘাটে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় লোকজনকে চাঁদা দিতে হতো। সরকার পতনের পর থেকে তা দেওয়া লাগছে না। বাজারে পণ্য নামাতেও চাঁদা গুনতে হচ্ছে না। দিতে হচ্ছে না জায়গার চাঁদাও। শিক্ষার্থীরা কঠোরভাবে মনিটরিং করছে। যে কারণে পণ্য পরিবহণে খরচ কমেছে। বিক্রিও করা হচ্ছে কম দামে। এ পরিস্থিতি চলমান রাখতে পারলে সব ধরনের পণ্যের দাম আরও কমে যাবে।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার যুগান্তরকে বলেন, সরকারদলীয় ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে পণ্য পরিবহণে পথে পথে চাঁদা দিতে হতো। এখন ৫ আগস্ট থেকে সেই চিত্র নেই। যে কারণে পণ্য পরিবহণে খরচ কিছুটা কমেছে। যে কারণে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে অনেক ট্রাক মালিক ও চালক সম্প্রতি সহিংসতা ও ডাকাতির আশঙ্কায় পণ্য পরিবহণে রাজি হচ্ছেন না। পরিস্থিতি আরেকটু স্বাভাবিক হলে দাম আরও কমে আসবে। তবে দেখা যাচ্ছে, সরকার পতনের পর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় অন্যান্য দলের লোকজন রাস্তায় নেমে পড়েছে। তারা নতুন করে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। যে কারণে শঙ্কা এখনো কাটেনি। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত এ বিষয়ে কঠোরভাবে নজর দেওয়া।

এদিকে সংঘাতের কারণে বেশ কয়েকদিন বাজারে কমে যায় মাছের জোগান। পরিবহণব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় তৈরি হয় সংকট। বাড়তে থাকে দাম। তবে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় বাজারে মাছের সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। প্রতি কেজি বেলে বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৫০০ টাকা ছিল। পাবদা মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০, যা আগে ৫০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি পুঁটিমাছ ২৫০ টাকা, যা এক সপ্তাহ আগেও ৩০০-৩৫০ টাকা ছিল। তেলাপিয়ার কেজি ২৮০, যা আগে ৩০০ টাকা ছিল। প্রতি কেজি রুই বিক্রি হচ্ছে ৩২০-৩৪০ টাকা। আগের তুলনায় চিংড়ির দাম কমলেও এখনো ক্রেতার নাগালের বাইরে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা। কেজিতে ২০০ টাকা কমে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১১০০-১২০০ টাকা।

এদিকে রাজধানীর খুচরা বাজারে তদারকিকালে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, কয়েকদিন আগে যে পণ্যের দাম ছিল, তার থেকে বাড়েনি বরং শুক্রবার কমে বিক্রি হচ্ছে। শ্যামবাজার থেকে একটি ট্রাক কাওরান বাজারে আসতে ৬-৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়। কিন্তু এই ট্রাক থেকে তিনটি স্থানে চাঁদা দিতে হতো, যা অবৈধ। বর্তমানে দিতে হচ্ছে না। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসাবে শিক্ষার্থীদের বাজার ব্যবস্থাপনায়ও আরও ভূমিকা রাখা দরকার। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি অঞ্চলে আমাদের অফিসারদের সঙ্গে জুমে মিটিং করেছি। সেখানে আমি বলেছি, তারা বাজারে গিয়ে আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এক হয়ে বাজার তদারকি করবে। আমরা সত্য বলতে চাই, যেটি কালো ছিল, আমরা সেটাকে কালো বলতে চাই। এটাই হবে আমাদের পরিবর্তন। আশা করি, কয়েকদিনের মধ্যে বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক হয়ে আসবে।

পণ্যের রসিদ ও বিক্রয় মূল্য টানাতে আলটিমেটাম : নিত্যপণ্যের চড়া দাম নিয়ন্ত্রণ করতে এবার বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তাদের নাগালে আনতে পণ্য কেনার রসিদ ও বিক্রয় মূল্য সামনে টানিয়ে রাখতে মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের তারা আলটিমেটাম দিয়েছেন। শুক্রবার মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, টাউন হল মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি বাজার মনিটরিং করে তারা এ আলটিমেটাম দেন।

নিত্যপণ্যের বাজার মনিটরিংয়ে নামা শিক্ষার্থীরা কাঁচা বাজার, মাছ-মাংসের বাজার, মুদি মালামালের বাজার ও ফলের বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দাম পর্যবেক্ষণ করেন। প্রতিটি দোকান ঘুরে সব মালামালের দাম তারা খাতায় লিখে নেন। বাজারে থাকা সব মালামালের দাম ভোক্তাদের নাগালে নিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের কেনা মালামালের রশিদের কপি ও মালামালের বিক্রি মূল্যের তালিকা দোকানের সামনে টাঙিয়ে রাখতে তারা অনুরোধ জানান। যদি কোনো ব্যবসায়ী এ অনুরোধ না রাখেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটের কয়েকজন ব্যবসায়ী।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম