Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

দণ্ডাদেশ মওকুফ করে নির্বাহী আদেশ

সাড়ে ছয় বছর পর মুক্ত খালেদা জিয়া

চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি আছে

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

সাড়ে ছয় বছর পর মুক্ত খালেদা জিয়া

সাড়ে ৬ বছর পর মুক্তি পেলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। নির্বাহী আদেশে দণ্ডাদেশ মওকুফ করে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবু সাঈদ মোল্লা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়। 
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অন্তত সাতবার আবেদন করা হয়। কিন্তু অনুমতি পাওয়া যায়নি। তার মুক্তির দাবিতে নানা কর্মসূচিও পালন করে বিএনপি। অবশেষে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ মওকুফ করে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলো। এদিকে মঙ্গলবার তার পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার প্রস্তুতি আছে বলে জানা গেছে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার দণ্ড মওকুফপূর্বক মুক্তির বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে সংবিধানের ৪৯ অনুচ্ছেদ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের ক্রিমিনাল আপিল নং-১৬৭৬/১৮ (বিশেষ আদালত নং-৫ ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং ১৭/২০১৭ থেকে উদ্ভূত) এবং বিশেষ আদালত নং-৫, ঢাকা এর বিশেষ মামলা নং-১৮/২০১৭-এ প্রদত্ত দণ্ডাদেশ মওকুফপূর্বক নির্দেশক্রমে মুক্তি প্রদান করা হলো। 

বিএনপির চেয়ারপারসন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। দুই বছরের বেশি সময় কারাবন্দি ছিলেন তিনি। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তার সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার। 

বিএনপি সব সময়ই দাবি করে আসছে, খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তাকে গুলশানের বাসায় ও হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে। শর্তের কারণে তিনি কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে দেখা করতে পারতেন না। শুধু দুটি ঈদে দলের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে দেখা করতে পারতেন। নেতারা জানান, বাসায় থাকলেও খালেদা জিয়া বন্দি ছিলেন। এখন থেকে তিনি মুক্ত। তারা আশা করেন, খালেদা জিয়ার একটু সুস্থবোধ করলে আবারও রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন। 

বিএনপি চেয়ারপারসন রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গত ৮ জুলাই গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘ম্যাডাম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। মেডিকেল বোর্ড যখন সিদ্ধান্ত দেবেন, তখন হাসপাতাল থেকে বাসায় যাবেন।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘ম্যাডাম খুব অসুস্থ। সোমবার রাতে দেখা করেছি। সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থবোধ করবেন, তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।’

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারত যান। এরপর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ বিষয়ে ওইদিন বিকালে বঙ্গভবনে তিন বাহিনীর প্রধানদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া হবে। পরদিন মঙ্গলবার দণ্ডাদেশ মওকুফ করে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হলো। অসুস্থ খালেদা জিয়া এর আগে এভারকেয়ার হাসপাতালে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর ২ জুলাই গুলশানের বাসায় ফেরেন। গত ২৫ জুন একই হাসপাতালে তার হৃদযন্ত্রে পেসমেকার বসানো হয়। এছাড়া সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর হার্টে তিনটি ব্লক ছিল। একটিতে রিং পরানো হয়। 

৭৯ বছর বয়সি খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। এর আগেও গত ২ মে খালেদা জিয়াকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় চিকিৎসকরা তাকে সিসিইউতে রেখে দুই দিন চিকিৎসা দিয়েছিলেন। তারও আগে গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তিনি বাসায় ফেরেন। লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর। যুক্তরাষ্ট্র থেকে তিনজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এনে খালেদা জিয়ার রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। তার স্বাস্থ্য কিছুটা স্থিতিশীল হলে সে দফায় পাঁচ মাসের বেশি সময় পর তাকে বাসায় নেওয়া হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ জামায়াতের আমিরের : এদিকে সোমবার রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসও উপস্থিত ছিলেন। সূত্রমতে, চলমান পরিস্থিতি ও বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে খালেদা জিয়াকে অবহিত করেছেন নেতারা।
 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম