Logo
Logo
×

প্রথম পাতা

স্বেচ্ছায় অবসরে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ‘সেই মতিউর’

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন

প্রকাশ: ০১ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রিন্ট সংস্করণ

স্বেচ্ছায় অবসরে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত ‘সেই মতিউর’

ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মতিউর রহমানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে সরকারি চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অবসরে পাঠানো হয়েছে। অবশ্য অবসরে গেলেও তিনি অবসরোত্তর ছুটি, ল্যাম্পগ্রান্ট এবং পেনশন সুবিধা পাবেন না। বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ২৫ বছর পূর্ণ হওয়ায় স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার আবেদন করেছিলেন মতিউর। সেই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইনের ৪৪(১) ও ৫১ ধারা চলতি বছরের ২৯ আগস্ট থেকে তাকে অবসর (ঐচ্ছিক) দেওয়া হয়েছে। স্বেচ্ছায় অবসর নেওয়ায় অবসরোত্তর ছুটি, ল্যাম্পগ্রান্ট এবং পেনশনের মতো সুবিধা তিনি পাবেন না। এদিকে এ বিষয়ে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ভবিষ্যতে আইনের আশ্রয় নিয়ে মতিউর যাতে সব ধরনের সরকারি চাকরির সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে সেজন্য এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ আদেশ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধরনের প্রজ্ঞাপন না জেনে জারি করার কথা নয়। আইআরডির আদেশটি লোক দেখানো আইওয়াশ মনে হয়। স্পষ্টতই এটি বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্নীতির অংশ।

গত কুরবানির ঈদে ছাগলকাণ্ডে নাম জড়ানোর পর এনবিআরের কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরিয়ে মতিউরকে ২৩ জুন অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালক পর্ষদের সদস্য পদও হারান তিনি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার অবৈধ সম্পদের খোঁজে তদন্ত শুরু করে এবং আদালতের আদেশে তার সম্পত্তি ক্রোক করা হয়।

প্রসঙ্গত, কোরবানির জন্য ঢাকার মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ইফাত নামের এক তরুণ ১৫ লাখ টাকা দামে ছাগল কেনার খবর ফেসবুক ছড়িয়ে পড়ার পর দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে জানা যায়, সেই ছেলের বাবা কাস্টমস কর্মকর্তা মতিউর রহমান। কিন্তু একটি টিভি চ্যালেনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ইফাতকে নিজের ছেলে হিসাবে অস্বীকার করেন এবং ইফাত নামের কাউকে চেনেন না বলে জানান। এমনকি তাকে ‘টাউট’ বলে সম্বোধন করেন। মতিউর জানান, তার একমাত্র ছেলের নাম তৌফিকুর রহমান অর্ণব। ওই রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইফাত ও তার মায়ের সঙ্গে মতিউরের ছবি ভাইরাল হয়। এরপর ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী সাংবাদিকদের জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের সন্তান। আর মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা।

ছাগলকাণ্ডের পর থেকে মতিউরের বিপুল পরিমাণ সম্পদের কথা গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হতে থাকলে মতিউর আত্মগোপনে চলে যান। তার পরিবারের সদস্যদের বাড়ি-গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন এবং মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলোবাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি থাকা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা শুরু হয়। এ অবস্থায় তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হলে বাহক মারফত যোগদান করেন, কিন্তু তিনি অফিসে যাননি।

আইআরডির একটি সূত্র জানায়, আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় তিনি অবসরের আবেদন করেন। মূলত কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকাজনিত সাজার হাত থেকে বাঁচতে এবং স্বেচ্ছায় অবসরে গেলে অবসরোত্তর ছুটি, ল্যাম্পগ্রান্ট এবং পেনশন সুবিধা পেতে তিনি অবসরের আবেদন করেন। কিন্তু তাকে অবসরে পাঠানো হলেও অবসরোত্তর ছুটি, ল্যাম্পগ্রান্ট এবং পেনশন সুবিধা দেওয়া হয়নি। সাধারণত সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে তদন্ত চলমান থাকলে এ ধরনের সিদ্ধাস্ত নেওয়া হয়।

১৯৯৪ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া মতিউর রহমান পড়ালেখা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেসব দুদক তদন্তও করেছে। মতিউর সরকারি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসায় জড়িয়েছেন; পুঁজিবাজারে তার বড় বিনিয়োগ রয়েছে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম