‘ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়েছে পাশে থাকতে পারিনি’
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ
ছবি সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৯ জুলাই সংঘাতে নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডে গুলিতে নিহত হয় পোশাক শ্রমিক রাসেল (১৫)। উপার্জনক্ষম কিশোর ছেলের শোকে বাবা পিন্টু রহমান ও মা অঞ্জনা খাতুন মুষড়ে পড়েছেন। এ দম্পতির বাড়ি নওগাঁর মান্দা উপজেলার কশব ইউনিয়নের ভোলাগাড়ী গ্রামে। রাসেলের এমন মৃত্যুতে স্বজন ও প্রতিবেশীরাও শোকাহত।
শুক্রবার ভোলাগাড়ী রাসেলদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশ-খড়ের বেড়া আর টিনের ছাউনির ছোট্ট ঘর। সেই ঘরেই থাকে নিহতের পরিবার। বাড়িটির সামনে পৌঁছাতেই ভেতর থেকে নারীকণ্ঠে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। বাড়ির বাইরে আলাপকালে রাসেলের চাচা আবদুর রশিদ বলেন, রাসেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর শোনার পর থেকে তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মুখে কোনো দানাপানি নিচ্ছেন না। এতে তিনি আরও দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেছেন রাসেলের বাবা। তিনি আরও বলেন, দেড় বছর ধরে নারায়ণগঞ্জে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করছিল। ছয়-সাত হাজার টাকা বেতনের চাকরি। গত কুরবানির ঈদের ছুটি শেষে নারায়ণগঞ্জে ফিরে যায় রাসেল। এবার সে বাড়িতে ফিরে এলো লাশ হয়ে।
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯ জুলাই বিকালে ডিআইটি রোডের দেওভোগ মার্কেটের ২ নম্বর গেটের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে বুকে গুলিবিদ্ধ হয় কিশোর রাসেল। গুরুতর আহত অবস্থায় রাসেলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২১ জুলাই তার শরীরে অস্ত্রোপচার করে বুলেট বের করা হয়। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ জুলাই সে মারা যায়। ২৩ জুলাই দুপুরে তার লাশ গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। ওইদিনই লাশ দাফন করা হয়।
নিহত রাসেলের বাবা পিন্টু দিনমজুরি করে সংসার চালান। চার ভাইবোনের মধ্যে রাসেল সবার ছোট। তার এক বোন মানসিক প্রতিবন্ধী। রশিদের সঙ্গে কথা বলা অবস্থায় হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরেন রাসেলের বাবা-মা।
পিন্টু ডুকরে ডুকরে কেঁদে বলেন, ‘ছেলের বুকে গুলি লাগছে শুক্রবার (১৯ জুলাই)। চারদিন হাসপাতালের বেডে কাতরাইছে। ছেলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে জ্যানেও তার পাশে থাকতে পারিনি। কতই না কষ্ট প্যায়ে মারা গেছে। কতই না আর্তনাদ করিছে। এমন কষ্ট আল্লাহ য্যান আর কাউকে না দেয়।’
পিন্টু রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন বিকালে ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছিল। ফোন করে তার মা ও বোনের খোঁজ নিয়েছে। ওইদিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাসেলের ফোন থেকে এক ব্যক্তি কল করে জানান যে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। ঢাকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েও কারফিউর কারণে আর যেতে পারেননি।
নিহত রাসেলের প্রতিবেশী ও কশব ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য পাঞ্জব আলী বলেন, রাসেল দেড় বছর ধরে পোশাক কারখানায় কাজ করছিল। ছয়-সাত হাজার টাকা বেতনে কোনোমতে তাদের সংসার চলছিল। আর কিছুদিন গেলে হয়তো বেতন আরও বাড়ত। এরই মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল।